রিন্টু ব্রহ্ম, কালনা: ভোটকেন্দ্রে যাওয়ার পথেই প্রসব যন্ত্রণা৷ কোনওক্রমে ভোটটা দিয়েই ছুটতে হল হাসপাতালে৷ আর তারপর তাঁর কোল আলো করে এল এক ফুটফুটে কন্যা৷ আনন্দে আপ্লুত বাবা, মা নাম রাখলেন – মমতা৷ এভাবেই লোকসভা ভোটের চতুর্থ দফার দিনটি স্মরণীয় হয়ে রইল বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের বালুজুরি গ্রামে৷
সোমবার, চতুর্থ দফা ভোটের দিন সকাল থেকেই প্রসব যন্ত্রণায় কষ্ট পাচ্ছিলেন মন্তেশ্বরের বালিজুরি গ্রামের ফিরোজা খান৷ তা নিয়েই স্বামীর সঙ্গে ভোট দিতে যান তিনি। ইভিএমের বোতাম টিপে দেওয়া মাত্রই যন্ত্রণা মাত্রা ছাড়িয়ে যায় তাঁর। কেন্দ্র থেকেই মাতৃযানে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় মন্তেশ্বর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে৷ সেখানেই জন্ম দেন কন্যা সন্তানের। ভোটের দিন কন্যা সন্তান পেয়ে তৃণমূল কর্মী বাবা সারিফুদ্দিন প্রিয় নেত্রীর নামেই তার নাম রাখেন – মমতা৷ সারিফুদ্দিন জানান, তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে খুবই শ্রদ্ধা করেন। ভোট দেওয়ার পরই তাঁদের কাছে এসেছে মেয়ে৷ তাই খুশি হয়েই নেত্রীর নামে মেয়ের নামকরণ করেছেন৷ আরও একটি নাম রাখা হয়েছে খুদের৷ তাঁদের কেন্দ্র বর্ধমান-দুর্গাপুরের তৃণমূল প্রার্থী ডাক্তার মমতাজ সংঘমিতার নামে মেয়ের আরেক নাম হয়েছে – মমতাজ৷
অন্তঃসত্বা ফিরোজা ঠিক করেছিলেন, যন্ত্রণা যতই হোক, তিনি নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার নিজে প্রয়োগ করে তবেই হাসপাতালে ভরতি হবেন৷ মনের জোরেই রওনা দিয়ে ছিলেন মন্তেশ্বরের বালিজুরি অবৈতনিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৭২ নম্বর বুথে। ভোটদানের পর তাঁর পরিস্থিতি দেখে স্থানীয় মানুষজন ও প্রিসাইডিং অফিসার তাঁকে সহযোগিতা করেন৷ ফিরোজার এই খবর গ্রামে পৌঁছাতেই হাসপাতালে ছুটে যান গ্রামের অনেকে৷ চিন্তায় পড়েন পরিবারের সদস্যরাও৷ তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই আসে সুখবর। হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানান, মেয়ে হয়েছে ফিরোজার৷ মা, মেয়ে দুজনেই সুস্থ। হাসি ফোটে সকলের মুখে।
ফিরোজার স্বামী সারিফুদ্দিন পেশায় চাষি। সামান্য আয়েই দুই কন্যা ও স্ত্রী নিয়ে সংসার। তবে রাজ্য সরকারের নানা প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন, তাই তৃণমূলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হয়েছেন৷ সারিফুদ্দিন বলেন, ‘মেয়ে ও মা সুস্থ রয়েছে দেখে নিশ্চিন্ত হয়েছি। মেয়ে হওয়ায় খুবই ভাল লাগছে। ঠিক করেই রেখেছি, মমতার বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামেই ওর নাম রাখব মমতা বা মমতাজ। যাতে আমাদের প্রার্থীর নামের সঙ্গেও মিল আছে।’ ওই শিশুর মা হাসপাতালে শুয়েই মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘ভোট দেওয়া আমাদের দায়িত্ব। সেই জন্যই কষ্ট করেই ভোট দিতে যাচ্ছিলাম। তাই এই দিনটা কোনওদিন ভুলব না।’ গ্রামবাসীরা বলছেন, গণতন্ত্রের প্রতীক হিসাবেই ওই শিশুর জন্মদিন সকলের কাছেই চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। নতুন মমতাকে নিয়ে এখন আনন্দে মেতেছেন সকলে৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.