ছবি: প্রতীকী
গৌতম ব্রহ্ম: ময়নাতদন্তের জন্য রাজ্যজুড়ে অভিন্ন বিধি জারি হল। মেডিক্যাল কলেজ থেকে জেলা হাসপাতাল সর্বত্র এই বিধি মেনে এবার থেকে ময়নাতদন্ত করতে হবে। চলতি পদ্ধতি ও নিয়মাবলিতেও বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনও আনা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে ময়নাতদন্তের সময়সীমা। এখন দুপুর বারোটা থেকে চারটে পর্যন্ত ময়নাতদন্ত হয়। নতুন ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ (এসওপি)-এ ময়নাতদন্ত সকাল ন’টা থেকেই শুরু হবে। তবে সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত হয়েছে পথ দুর্ঘটনায় জখম ‘ব্রেন ডেথ’ হওয়া ব্যক্তির অঙ্গদানের ময়নাতদন্তে। মৃতদের পরিবারকে হেনস্থার হাত থেকে বাঁচাতে অটোপসি সার্জনরা অপারেশন থিয়েটারে এসেই ময়নাতদন্ত সেরে যাবেন এবার। লাশকাটা ঘরে আর নিয়ে যাওয়া হবে না।
‘এসওপি’-র কনভেনর তথা আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রিজিওনাল পয়জন সেন্টারের প্রধান ডা. সোমনাথ দাস জানিয়েছেন, মেডিক্যাল কলেজ ছাড়াও জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ময়নাতদন্ত হয়। সেখানে না আছে পরিকাঠামো, না আছে ফরেনসিক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ বা অটোপসি সার্জন। বহু জায়গায় ডাক্তারবাবুরা নিয়ম না মেনেই ময়নাতদন্ত করেন। কেউ আবার নিজের মতো পদ্ধতি অবলম্বন করেন। এসওপি চালু হলে ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়ায় সমতা আসবে। সোমনাথবাবুর পর্যবেক্ষণ, এ রাজ্যে এখন ময়নাতদন্তকারীদের একাংশ অত্যাধুনিক পদ্ধতির সাহায্যে নেন না। সেগুলিও এসওপি-তে যুক্ত করা হয়েছে। যেমন ‘ডিএনএ প্রোফাইলিং’। বেওয়ারিশ হয়ে পড়ে থাকা দাবিহীন দেহ আর বছরের পর বছর কোল্ড চেম্বারে রাখা হবে না। ডিএনএ পরীক্ষার জন্য কিছু নমুনা রেখে দিয়ে সেগুলোর দ্রুত শেষকৃত্য করা হবে।
ময়নাতদন্তের পর ভিসেরা এতদিন ছ’মাস সংরক্ষণ করে রাখা হত। এবার মাত্র এক মাস রাখা হবে বিধির প্রণেতারা জানিয়েছেন, এসওপি লাগু হলে ফরেনসিক ক্ষেত্রে অর্থ ও জনবল দুই-ই বাঁচাবে।তদন্তে গতি আসবে। আরজিকর হাসপাতালের অধ্যক্ষ ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞ ও এসওপি-র অন্যতম প্রণেতা ডা. শুদ্ধোদন বটব্যাল জানিয়েছেন, পথদুর্ঘটনায় মৃত ব্যক্তির অঙ্গদান হলে ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক বা অটোপসি সার্জনরা অঙ্গ গ্রহণের সময়ই ওটিতে চলে আসবেন। সেখানেই ময়নাতদন্ত সেরে নেবেন। অঙ্গদান আন্দোলন এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্যই এই বাড়তি সুবিধা দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সোমনাথবাবু।
একই বক্তব্য রাজ্যের স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা ডা. দেবাশিস ভট্টাচার্যর। তাঁর মতে, ময়নাতদন্তের সঙ্গে পুলিশ, প্রশাসন, মানবাধিকার সংগঠন, বিচার ব্যবস্থা-একটি বড় শৃঙ্খল জড়িয়ে রয়েছে। সবার মত নিয়েই এই এসওপি তৈরি করা হয়েছে। অভিন্ন বিধিতে জেলা হাসপাতালে পরিকাঠামোর রূপরেখাও পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে। চালু করা হচ্ছে ই-ইনকোয়েস্ট। থানা থেকে ইনকোয়স্ট এবার ইলেকট্রনিক্যালি ট্রান্সফার করা হবে লাশকাটা ঘরের কম্পিউটারে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.