ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: আচ্ছা বলুন তো, রাজ্যে ক্যানসার (Cancer) আক্রান্তের সংখ্যা কত? আক্রান্তদের মধ্যে ব্রেন বা স্তন ক্যানসারে (Breast Cancer) আক্রান্ত কতজন? অঙ্কোলজির তাবড় বিশেষজ্ঞ বিরক্ত হবেন। হলফ করে বলতে পারি তাঁদের পালটা প্রশ্ন, ‘‘আপনার সমস্যা কী?’’ এই প্রশ্নটাই তাড়া করে বেড়িয়েছিল এক বাঙালি অঙ্কোলজি অধ্যাপককে। প্রশ্ন যখন মনে এল, উত্তরটাও বের করতেই হবে।
ঠিক তিন বছর আগে কোভিড (Covid) আবহে যখন ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। লকডাউনে রাজপথ শুনশান। তিনি কিন্তু রোজ এনআরএস মেডিক্যাল কলেজে (NRS Medical Collage) এসেছেন। নিজের অধীত বিদ্যা এবং মোটা মোটা অঙ্কোলজির বই ঘেঁটেছেন। সঙ্গে ছিল স্বাস্থ্য দপ্তরের (Health Department) আইটি সেল। তবে তিনবছর লাগেনি। তার আগেই ডা. শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল তৈরি করেছেন ক্যানসার সফটওয়্যার। আর এটাই সেই চাবিকাঠি, যার মাধ্যমে রাজ্যে ক্যানসারের প্রকার, কতজন আক্রান্ত, এবং কতজন সুস্থ হলেন অথবা ঠিক এখনই সেই রোগীর কী চিকিৎসা চলছে তা জানতে পারবে স্বাস্থ্য ভবন। এমনকী, ভৌগোলিক এলাকাভেদে কোনও ক্যানসারের প্রকোপ বেশি বা কম হলেও তাও নথিভুক্ত করা হয়েছে।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যের দশটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এই সফটওয়্যার চালু হয়েছে। নিয়মিত সব রোগীর সমস্ত তথ্য নথিভুক্ত হচ্ছে, চলে যাচ্ছে স্বাস্থ্যভবনের পোর্টালে। শ্রীকৃষ্ণ মণ্ডল এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের রেডিওথেরাপি-অঙ্কোলজির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক। তাঁর কথায়, ‘‘কোভিডের সময় রোগী নেই বললেই চলে। হাসপাতালে আমার বিভাগ গুটিকয় সহকর্মী আসতেন। রাজপথ শুনশান। এমন অভিজ্ঞতা সম্ভবত গত একশো বছরে হয়নি। মনে হল অহেতুক শুয়ে-বসে সময় কাটিয়ে কী হবে? লেগে পড়লাম কাজে। আমার কাজ ওইটুকুই। বাকি সব কাজ করেছে স্বাস্থ্যভবনের আইটি সেল। তিনবছরে রোজ এমনকী, ছুটির দিনেও হাসপাতালে এসেছেন। কাজ করেছেন। সেই সময়ে চাষ করেছিলেন। এখন ফসল তুলছে স্বাস্থ্যভবন।
রাজ্যে তৈরি হয়েছে ক্যানসার রেজিস্ট্রি পোর্টাল। হিস্টোপ্যাথলজিক্যাল রিপোর্ট ধরে ক্যানসারের বিভিন্ন ভাগ এবং রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার যাবতীয় তথ্য সফটওয়্যারে আপলোড করা হচ্ছে রোজ। ক্রমশ সব হাসপাতাল বা মেডিক্যাল কলেজ যেখানে ক্যানসার রোগের চিকিৎসা হয়, সবগুলিকে যুক্ত করা হবে।
ওই সফটওয়্যারের তথ্য অনুযায়ী, রাজ্যে সরকারি নথিভুক্ত ক্যানসার রোগীর সংখ্যা আট হাজারের কিছু বেশি। এই আট হাজারের প্রত্যেকের নিজস্ব ইউনিক আইডি বা কম্পিউটার ক্রমিক নম্বর রয়েছে। স্বাস্থ্য দফতরের পোর্টাল গিয়ে রাজ্যের যে কোনও সরকারি ক্যানসার হাসপাতালের পোর্টাল খুলে রোগীর ইউনিক আইডি আপলোড করলেই শুরু থেকে সমস্ত তথ্য স্ক্রিনে ভেসে উঠবে। রোগীর কবে কী পরীক্ষা হয়েছে। সেই রিপোর্টে কী আছে? রোগীকে কী ওষুধ দেওয়া হয়েছে? অথবা কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি বা অস্ত্রোপচারের পর সমস্যা কতটা কমেছে বা বেড়েছে সব তথ্যই পাওয়া যাবে। প্রেসক্রিপশন হারিয়ে গেলেও সমস্যা নেই। নাম ও মোবাইল নম্বরেই সব তথ্য চোখের সামনে ভেসে উঠবে।’’ তবে কোনও রোগীর মৃতু্য হলে তা নথিভুক্ত হয়। কিন্তু রোগীর নাম বাদ দেওয়া হয় না। কারণ, সরকারি নিয়মে কোনও নাম বাদ দেওয়া যায় না। স্বাস্থ্যভবনের কর্তাদের টার্গেট, প্রথমে সব সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিকে এই পোর্টালে যুক্ত করা। পর্যায়ক্রমে জেলা ও ব্লকস্তরে যেখানে ক্যানসার রোগ নির্ণয়ের সুযোগ আছে সেগুলিকে বাধ্যতামূলকভাবে এই কমর্সূচির আওতায় আনা। এক স্বাস্থ্যকর্তার কথায়, ‘‘রোগ নির্ণয় হলে অর্ধেক যুদ্ধজয়। সেই কাজটাই হয়েছে এনআরএসের আঁতুড়ঘরে।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.