শুভঙ্কর বসু: কথায় বলে–“উইটনেসেস আর দ্যা আইস অ্যান্ড ইয়ারস অফ জাস্টিস৷” অর্থাৎ সাক্ষীরাই বিচার ব্যবস্থার চোখ ও কান৷ কোনও অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পর অপরাধীকে সাজা দিতে ভরসা সাক্ষীরাই৷ আর সেই সাক্ষীকেই যদি খতম করে দেওয়া যায় তাহলে বড় অপরাধ করেও আইনের চোখকে সহজেই ফাঁকি দেওয়া যায়৷ যেমনটা ঘটছে বা আগেও ঘটেছে একাধিকবার৷
গোবরডাঙার বরুণ বিশ্বাসকে মনে আছে? একাধিক অপরাধের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছিলেন বরুণ৷ এগিয়ে এসেছিলেন সাক্ষ্য দিতে৷ বরুণ বিশ্বাসের সাক্ষ্যদানের কারণে জেলের ঘানি টানতে হয়েছিল একাধিক অপরাধীকে৷ কিন্তু বরুণের শেষরক্ষা হয়নি৷ ভর সন্ধেয় জনবহুল গোবরডাঙা স্টেশনে খুন হতে হয়েছিল তাঁকে৷ আর প্রতিবাদী বরুণের মৃত্যুর কারণে হঠাৎই থমকে গিয়েছিল একাধিক মামলার বিচারপ্রক্রিয়া৷
শুধু বরুণ বিশ্বাসই নয়, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সাক্ষীকে হয় মেরে ফেলা হয়েছে নয়তো ভয় দেখিয়ে সাক্ষ্যদানে বিরত রাখা হয়েছে৷ ফলে সহজেই পার পেয়েছে অপরাধীরা৷
এবার তাই বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মামলায় সাক্ষীদের সুরক্ষা দিতে নতুন আইন আনছে রাজ্য সরকার৷ এমনটাই জানা গিয়েছে নবান্ন সূত্রে৷ এর আগে কোনও সাক্ষীর সুরক্ষার প্রয়োজন হলে তাঁকে আদালতে আবেদন জানাতে হতো৷ আদালত সেই সাক্ষীর আবেদন মঞ্জুর করলে তবেই তিনি সুরক্ষা পেতেন৷ এই পন্থায় বদল আনতে চলেছে রাজ্য সরকার৷ আইন দফতর সূত্রে খবর, গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলির ক্ষেত্রে আগে থেকে সাক্ষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হবে৷ সেক্ষেত্রে তৈরি করা হবে একটি ‘উইটনেস প্রোটেকশন সেল’ বা বিশেষ বিভাগ৷ একজন অ্যাসিট্যাণ্ট কমিশনার বা ডেপুটি কমিশনারের নেতৃত্বাধীন সেই ‘উইটনেস সেল’-এর কাজ হবে সাক্ষীদের চিহ্নিত করে তাঁদের নাম ঠিকানা গোপন রাখা৷ প্রয়োজন ভিডিও কনফারেন্স ও ইন ক্যামেরা বা যেকোনও ‘লাইভ লিঙ্ক’-এর মাধ্যমে তাঁদের সাক্ষ্যদানের ব্যবস্থা করা৷ যার ফলে আদালতে না এসেই সাক্ষীরা বয়ান দিতে পারবেন৷
বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাক্ষীদের প্রাণে মেরে ফেলার হুমকিও দেওয়া হয়৷ আবার কখনও সাক্ষীদের পরিবার বা আত্মীয়স্বজনের ক্ষতি করার হুমকি কিংবা সম্পত্তি নষ্টের হুমকি দিয়ে থাকে অপরাধীরা৷ হুমকির ধরন অনুযায়ী সাক্ষীদের সুরক্ষিত করার ব্যবস্থা করবে ‘উইটনেস প্রোটেকশন সেল’৷
এছাড়াও এরজন্য তৈরি করা হবে একটি ‘উইটনেস প্রোটেকশন ফান্ড৷’ সাক্ষীদের সুরক্ষা দিতে যাবতীয় খরচ সেই ফান্ড থেকেই করা হবে৷ তবে কোনও গুরুত্বপূর্ণ অপরাধের ক্ষেত্রে সাক্ষীরা চিহ্নিত না হলে তার জন্য থাকছে ব্যবস্থা৷ এই আইনের আওতায় সুরক্ষার জন্য ‘উইটনেস প্রোটেকশন সেল’-এর কাছে আবেদন করতে পারবেন সাক্ষীরা৷ সূত্রের খবর, সেজন্য ‘উইটনেস প্রোটেকশন’ ফর্ম পূরণ করে আবেদন জানাতে হবে সাক্ষীদের৷ নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত আইনের খসড়া প্রস্তুতির কাজ চলছে৷
গোটা দেশে একমাত্র দিল্লিতে এই ধরনের আইন রয়েছে৷ এই আইন পাস হলে পশ্চিমবঙ্গ হবে দ্বিতীয় রাজ্য৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.