বিশ্বজ্যোতি ভট্টাচার্য ও শান্তনু কর: অসঙ্গতি প্রতিপদে! বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়নাগুড়ির দোমোহনিতে আপ বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার তদন্তে নাটকীয় মোড়। ট্রেনের চালক প্রদীপ কুমার জানিয়েছেন, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন পার হয়ে দোমোহনি পৌছতে গ্রিন সিগন্যাল পান তিনি। গাড়ি ৯৫ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে চলছিল। প্রশ্ন উঠেছে, এই গতিই কি দুর্ঘটনার কারণ? না কি অন্যকিছু লুকিয়ে আছে নেপথ্যে? কারণ, জানা গিয়েছে ট্রেনের চাকায় আগুনের ফুলকি ও ধোঁয়া দেখেছে যাত্রীদের একাংশ। সন্দেহ ব্রেক শু-র ঘর্ষণে এমনটা হতে পারে। কেন জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে কিছুক্ষণ ট্রেনটি দাঁড়িয়েছিল কেন? সেফটি কমিশনার সমস্ত দিক খতিয়ে দেখছেন বলে জানা গিয়েছে। ওই ট্রেন যাওয়ার আগে দু’টি মালগাড়ি গিয়েছে ওই রুটেই। সেখানকার গার্ড, চালক লাইনের সমস্যা নিয়ে কোনও স্টেশনে কিছু জানাননি। স্বভাবতই লাইনে যে সমস্যা ছিল না, এটা স্পষ্ট। এদিকে জানা যাচ্ছে, ট্রেনের ইঞ্জিনের সমস্যা আগেই টের পেয়েছিলেন চালক। যা স্বাভাবিকভাবেই একাধিক প্রশ্ন তুলেছে।
বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গে বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস (Bikaner Express) ট্রেনের ভয়াবহ দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত শুরু করছেন কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটি। দুর্ঘটনার কারণ জানতে আজ, সোমবার ইঞ্জিনের ফরেনসিক পরীক্ষা হচ্ছে। এজন্য আনা হয়েছে ১৪০ টনের ব্রেক ডাউন ক্রেন। ক্রেনের সাহায্যে দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন ইঞ্জিন ট্র্যাকে তুলে অন্যত্র নিয়ে ফরেনসিক পরীক্ষা করা হতে পারে। এদিকে লোকো পাইলট এবং গার্ডকে জিজ্ঞাসাবাদের পর জানা গিয়েছে, ট্রেনের ইঞ্জিনে আগে থেকেই সমস্যা ছিল। এমনকী, ট্রেনটি রানিনগর স্টেশনে দাঁড় করিয়ে পরীক্ষাও করা হয়। সেই বিষয়ে স্টেশনের লগ বুকেও উল্লেখ করা রয়েছে। সেই লগ বুক টিসিআরএস নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে বলে খবর।
প্রশ্ন উঠেছে, ইঞ্জিনে সমস্যা থাকলে গার্ড এবং চালক কেন রানিনগর থেকে ট্রেন নিয়ে রওনা দিলেন! কেন পরীক্ষার পরও রেক পরিবর্তন করা হয়নি! জানা গিয়েছে, রানিনগরে ট্রেন দাঁড় করিয়ে পরীক্ষা চলে। তবে কি সেখানে ইঞ্জিনের সমস্যা ধরা পড়েনি! কেন ট্রেনের ট্র্যাকশন মোটর খুলে গেল! প্রশ্ন অনেক। কিন্তু উত্তর এখনও অধরা। লগবুকে কী লেখা হয়েছে, সেটাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।
দুর্ঘটনার সব রহস্য কি লুকিয়ে আছে ইঞ্জিনে! বিকানের-গুয়াহাটি এক্সপ্রেস ট্রেনের দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে আপাতত ইঞ্জিনেই নজর তদন্তকারীদের। ইতিমধ্যে এসেছে কমিশনার অফ রেলওয়ে সেফটির নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী দল। আজ সোমবার দুর্ঘটনাস্থল ঘুরে দেখছেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্রেন ইঞ্জিনের ফরেনসিক পরীক্ষা করা হবে বলে জানা গিয়েছে। তবে দুর্ঘটনার কারণ হিসাবে অতিরিক্ত গতিকে দায়ী করেছেন যাত্রীরা। বলছেন, জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন পার করে দুরন্ত গতিতে চলছিল ট্রেন। ঝাঁকুনি অনুভব করেন তাঁরা। তারপরই দুর্ঘটনা। ট্রেনের চালক প্রদীপ কুমার ঘটনার পর জানিয়েছেন, রোড স্টেশন পার করে দোমোহনি পৌঁছনোর আগে গ্রিন সিগন্যাল পান। গাড়ি ৯৫ থেকে ১০০ কিলোমিটার গতিতে ছিল। অ্যাডভান্স সিগন্যালের আগে গাড়িতে ঝাঁকুনি অনুভব করেন। ব্রেক কষেন। ট্রেন থেকে নেমে দেখেন কামরাগুলো উলটে গিয়েছে।
সূত্রের খবর, এনজেপি স্টেশন পার করে ইঞ্জিনে সমস্যা নজরে আসে চালকের। তিনি জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনে পৌঁছে স্টেশন মাস্টারকে জানান সমস্যার কথা। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং সেকশনকে কিছুই জানাননি তিনি। অপেক্ষা না করে ট্রেন নিয়ে কোচবিহারের উদ্দেশে রওনা দেন। এরপরই দুর্ঘটনা। দুর্ঘটনার পর খুলেছে ইঞ্জিনের ট্রাকশান মোটর। এটাই গতি নিয়ন্ত্রণের কাজ করে। ট্রেন যে গতিতে ছিল সেটা চালকের বয়ানে স্পষ্ট। তবে কি গতি নিয়ন্ত্রণে ট্রাকশান মোটর কোনও কাজে আসেনি! উঠছে প্রশ্ন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.