Advertisement
Advertisement

Breaking News

Kalna Student death

দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যুতে মানসিক ধাক্কা! পিছিয়ে পড়ছিলেন পড়াশোনাতেও! অবসাদেই আত্মঘাতী ধাত্রীগ্রামের টপার?

মা রিঙ্কু ও কাকা শরবিন্দু হালদার তাদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন।

New facts emerges in Kalna Student death
Published by: Paramita Paul
  • Posted:November 10, 2024 11:37 am
  • Updated:November 10, 2024 11:39 am  

অভিষেক চৌধুরী, কালনা: দুবছর আগে মেয়েকে টিউশন পড়তে নিয়ে যাওয়ার পথে বাইক দুর্ঘটনায় স্বামী জয়দেব হালদারকে হারাতে হয়। শুধু তাই নয়, সাত-আট মাস ধরে কঠিন লড়াই করে কলকাতার পিজি হাসপাতালে ট্রমা কেয়ারে চিকিৎসাধীন থাকা ছোট মেয়ে অঙ্গনা হালদার ওরফে পিউকে (১৮) নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে এনেছিলেন কালনার ধাত্রীগ্রাম দাসপাড়ার বাসিন্দা পেশায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা মা রিঙ্কু হালদার দাস। গত ফেব্রুয়ারি মাসেও ওই মেয়ের পা থেকে প্লেট বের করতে হয়। মেয়েকে প্রাণে বাঁচাতে তার বাবার মৃত্যুর খবরও শোনানো হয়নি তাকে। তাই স্বামী মারা গেলেও মেয়ের কাছে সেই কথা গোপন রাখতে তাকে সুস্থ করে তুলতে একসময় শাঁখা-সিঁদুরও পড়তে হয় রিঙ্কুদেবীকে। কিন্তু হলে কী হবে, শুক্রবার সন্ধ্যায় কালনা শহরের মধুবন এলাকায় প্রাইভেট টিউটরের কাছে পড়া শেষ করে সেখান থেকে বেরনোর পরেই ভাগ্যের এক নিষ্ঠুর পরিহাসে সেই মেয়েকেই অকালে হারাতে হল তাঁকে। শেষ ফোনে অঙ্গনা তার মা রিঙ্কুদেবীকে ফোনে আর্তনাদ করে ‘মা এরা আমাকে বাঁচতে দেবে না ’ বলে জানালেও আদরের ছোট মেয়েকে আর বাঁচাতে পারেননি তিনি। হন্যে হয়ে ওই রাতেই মেয়েকে খুঁজতে পুলিশের দ্বারস্থ হতেই বেশ কিছুক্ষণ পর কালনার জিউধারা রেলগেটের কিছুটা দূরে রেললাইনের ধার থেকে অঙ্গনার দেহ উদ্ধার করে কালনা জিআরপি থানার পুলিশ।

 

Advertisement

 

প্রাথমিকভাবে পুলিশ এই ঘটনাকে আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে করলেও মৃতা পড়ুয়ার পরিবার তাকে খুন করার অভিযোগ তুলেছেন। মা রিঙ্কু ও কাকা শরবিন্দু হালদার তাদের মেয়েকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন। কিন্তু কী কারণে তাকে খুন করা হয়েছে, তার শত্রু কারা ছিল সেই বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি মৃতার পরিবার। স্বাভাবিক কারণেই এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরতে-পরতে রহস্য দানা বেঁধেছে।

কালনা রেলস্টেশনের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অঙ্গনা স্টেশনের ১ নম্বর গেট দিয়ে একাই প্ল্যাটফর্মে যায়। এর পর ডাউন লাইন ঘরে ব্যান্ডেলের দিকে হাঁটতে হাঁটতে সে বেরিয়ে যায়। স্টেশন থেকে প্রায় তিনশো মিটার দূরে পুলিশ তাকে পরে পড়ে থাকতে দেখে। যদিও সেখানে কোনও সিসি ক্যামেরা ছিল না। প্রশ্ন ওঠে পড়া শেষ করে ওই পড়ুয়া বাড়ির দিকে না গিয়ে সে কেন কালনা স্টেশনের দিকে গেল? মা রিঙ্কু হালদার জানান, “পড়া শেষ হলে মেয়ে আমাকে ফোন করে বলে, ‘মা এরা আমাকে বাঁচতে দেবে না।’ এই কথাটা বলার পর আর কোনও কথা না। এর পর ফোন করলে রিং হয়েই যায়। মধুবনের ওখানে খোঁজাখুজি করে থানা-পুলিশ করি। জিউধারা রেলগেটের কাছে মেয়েকে পুলিশ পায়।” প্রশ্ন উঠেছে ওরা কারা? এবিষয়ে রিঙ্কু জানান, “আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আমার কোনও সন্দেহের তালিকায় আমি জানিই না।” তার মেয়েকে কেউ তুলে নিয়ে গিয়েছিল কিনা এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন , “অবশ্যই আমার মনে হচ্ছে, নাহলে এতটা ডিসট্যান্স ও যাবে কি করে? তুলেই নিয়ে যাক। ওকে কিছু একটা ভয় দেখিয়ে কিছু একটা করেছে?” এর পরেই জোরের সঙ্গে রিঙ্কুদেবী জানান, তার মেয়েকে খুন করা হয়েছে। স্বামীকে হারানোর পর মেধাবী মেয়েকে বুকে আগলে রাখার মত রাখার চেষ্টা করেও রাখতে না পারায় এদিন কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

পাশে তার উচ্চশিক্ষিত বড় মেয়ে অস্মিতা হালদার থাকলেও রিঙ্কুদেবী ছোট মেয়ের সম্পর্কে জানান, “মাধ্যমিকেও ধাত্রীগ্রামে টপার ছিল। দুবছর আগে ওর বাবা এক দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে যায়। এর পর পিজির ট্রমা কেয়ারে লড়াই করতে করতে, ফেব্রুয়ারি মাসেও পায়ের প্লেটটা বের করা হয়।” সুস্থ হয়ে ফের পড়াশোনার জগতে ফেরে। নিটের জন্য তৈরি হচ্ছিল। ফুলবাগানের একটি কোচিং সেন্টারে অঙ্গনাকে ভর্তিও করা হয়েছিল। মধুবনের প্রাইভেট টিউটর শম্ভু কর্মকার জানান, “বিকাল ৫ টা ২০ নাগাদ ও পড়তে আসে। আমার কাছে ও চার বছর পড়ছে। ছাত্রী হিসাবে খারাপ ছিল না। দুর্ঘটনায় বাবার মৃত্যু, তার উপর অঙ্গনা পিজিতে ভর্তি থাকার কারণে পড়াশোনার অসুবিধা হয়েছে। পিছিয়ে পড়ে। একটা বছর পরীক্ষা দিতে পারেনি। এই জন্য টুয়েলভ ক্লাস ওর দুবছর হচ্ছে। ও নিয়মিত পড়তে আসতে পারত না চিকিৎসার কারণে। মানসিকভাবে যেন ওর একটু অসুবিধা হচ্ছিল বলে মনে হয়। অতীতকে আরও বেশি করে মনে করে ফেলছিল, বাবার কথা। একটু বিক্ষিপ্ত মানসিকতাও চোখে পড়ত।” যদিও ওইদিন সে একাই টিউশন পড়তে যায়। শিক্ষকের ব্যক্তিগত কাজ থাকায় তাকে ওইদিন সন্ধ্যা ৬ টা নাগাদ তাকে ছুটিও দেওয়া হয়। তার পরেও সে ওইদিকে কেন গেল সে বিষয়ে বুঝে উঠতে পারছে না পুলিশও।

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement