টিটুন মল্লিক, বাঁকুড়া: পরিচয় হওয়ার পরে পরেই ৬০ হাজার টাকা অণ্ডালের তরুণী নিবেদিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছে ধার নিয়ে ছিল উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা অঙ্কিত চৌধুরী। সেই টাকা বারংবার চেয়েও অঙ্কিতের কাছে চেয়েও পাচ্ছিলেন না নিবেদিতা। সেই টাকাই কি কাল হল? মৃত নিবেদিতার পরিবারের আশঙ্কা এখন এটাই। অন্তত এমনটাই জানাচ্ছেন মৃত নিবেদিতার দিদি অন্তরা মুখোপাধ্যায়।
বৃহস্পতিবার বাঁকুড়ার দুর্লভপুরে মামার বাড়িতে বসে তিনি বলেন, “বোন নিবেদিতার সাথে অঙ্কিতের বিয়ের সব ঠিকঠাকই ছিল। তারপরেই গত ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে উত্তরপ্রদেশের শোনপুরি গ্রামে অঙ্কিতের বাড়িও চার-পাঁচদিনের জন্য গিয়েছিলও সে। সেখানে থাকাকালীন একাধিকবার অঙ্কিতের বাবা-মায়ের সাথে ভিডিও কলে কথাও বলেছিলেন মা। একপ্রকার দুই পরিবারের সহমতে তাদের বিয়ের সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। তারপরেই যাট হাজার টাকা ধার নেয় অঙ্কিত।” এই কথাগুলো বলতে বলতেই অন্তরাদেবী জানন, “সেই টাকা বারবার চেয়েও অঙ্কিতের কাছে পাচ্ছিল না বোন। তাই নিয়ে দুজনের মধ্যে দন্দ্বও শুরু হয়েছিল। সেই টাকা না দেওয়ার বিষয়ে একাধিকবার মাকেও জানিয়েছিল বোন। সেই টাকার লোভেই নিবেদিতাকে মেরে ফেলেছে অঙ্কিত।”
বাঁকুড়ার সোনামুখী থানার ধুলাই গ্রামের বাসিন্দা মৃত নিবেদিতার বাবা হলধর মুখোপাধ্যায় জানান, বড়ো মেয়ে অন্তরা থেকে মাত্র দু‘বছরের ছোট নিবেদিতা। গত বুধবার রাতে উত্তরাখন্ড থেকে ফিরে ছোট মেয়ে নিবেদিতার মৃত্যুর খবর স্ত্রীকে দেন হলধরবাবু। তারপর থেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মনিমালা। দফায় দফায় জ্ঞান হারাচ্ছেন তিনি। বর্তমানে অন্তরাদেবী কলকাতায় থাকেন। অন্তরা দেবীরও বিয়ের সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে রয়েছে। পরিবার সূত্রে খবর, অন্তরার বিয়ের পরেই অঙ্কিত আর নিবেদিতার বিয়ে বাড়ির সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। অন্তরার এই কথাতেই পরিষ্কার তাঁদের সম্পর্কের কথা দুই পরিবারই মেনে নিয়েছিল। তারপরেও কেন খুন হতে হল এই যুবতীকে? এখন এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে পুলিশের মনে।
প্রসঙ্গত, উচ্চমাধ্যমিক পাশ ছাত্রী নিবেদিতা পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোনোর আগে দুর্গাপুরে একটি ইন্সটিটিউটে পার্লারের সংক্রান্ত কাজকর্মের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন। দ্বাদশ শ্রেণির রেজাল্ট হাতে পাওয়ার পরেই পার্লারের কাজ নিয়ে দিল্লি পাড়ি দিয়েছিলেন। সেখানেই রাশিয়ান শেখেন নিবেদিতা। ২০২০ সালের অক্টোবর মাসে দেরাদুনের একটি তথ্য প্রযুক্তি সংস্থায় কাজে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। প্রথম দিকে ‘পেয়িং গেস্ট’ হিসাবে থাকলেও চলতি বছর জানুয়ারি থেকে প্রেমিক অঙ্কিতের সাথে ‘লিভ–ইন’ করছিলেন উত্তরাখন্ডের রাজপুর থানা এলাকায়। সেখানেই ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকছিল তাঁরা।
মণিমালাদেবী জানাচ্ছেন, চলতি বছর গত ২৮ এপ্রিল শেষ বার মেয়ে নিবেদিতা সাথে কথা হয় তার। তারপর থেকে কোনওভাবেই তার সাথে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না পরিবারের কেউই। গত ১৫ জুন জন্মদিন উপলক্ষে মেয়ে নিবেদিতার ফেসবুক পেজে শুভেচ্ছা বার্তা দিয়েও কোন সাড়া না মেলায় সন্দেহ হয় তাঁদের। ১৬ জুন বোনের খোঁজে অঙ্কিতকে ম্যাসেঞ্জারে ফোন করে অন্তরা। মুখোপাধ্যায় পরিবারের দাবি ১৬ জুন অঙ্কিত তাদের বলে, “আত্মহত্যা করেছে নিবেদিতা। আমি ওর দেহ পুড়িয়ে দিয়েছি।” অঙ্কিতের মুখে সেই কথা শুনে নিবেদিতার মামা চঞ্চল চট্টরাজকে নিয়ে উত্তরাখন্ডের উদ্দেশ্যে রওনা দেন বাবা হলধর, দিদি অন্তরা-সহ সাতজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.