সৌরভ মাজি, বর্ধমান: নতুন বছরে সরস্বতী পুজোটা কবে পড়েছে? ক্যালেন্ডারের প্রথম পাতা ওলটালেই তা জানা যাবে। সবেবরাত কবে, সেটাও জানা যাবে যে কোনও ক্যালেন্ডারের পাতা থেকে। খ্রিস্টাব্দ বা বঙ্গাব্দ – যে কোনও ক্যালেন্ডারে বাংলার বারো মাসের তেরো পার্বণের খুঁটিনাটি না মিললেও, গুরুত্বপূর্ণ সবকটি উৎসবের দিনক্ষণ পাওয়া যায়। কিন্তু যদি বলা হয়, বাঁধনা পরব কবে, ক্যালেন্ডারে তন্নতন্ন করে খুঁজে পাওয়া যাবে না। আবার যদি বাহা, সহরায়, দাঁশাই পরব কবে খুঁজতে চান, তাও ক্যালেন্ডারের পাতায় পাবেন না। এভাবেই মূল ক্যালেন্ডারে ব্রাত্য থেকে গিয়েছে আদিবাসীদের পরবগুলি।
এবার তাই আদিবাসী সমাজের কথা ভেবে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংগঠন, বিভিন্ন ছাপাখানা। ইংরেজি, বাংলার সন-তারিখের পাশাপাশি সেখানে সাঁওতালি ভাষা ও অলচিকি হরফেও থাকছে দিনক্ষণ। দুর্গাপুজো, কার্তিকপুজো, ইদ, বড়দিন, গুডফ্রাইডে, গুরুনানক জন্মজয়ন্তীর পাশাপাশি ঠাঁই পাচ্ছে বাঁধনা, করম, দাঁশাই পরবের দিনগুলি। চিহ্নিত থাকবে পণ্ডিত রঘুনাথ মুর্মুর জন্মদিন, সিধো-কানহো-বিরসাদের আত্মবলিদানের দিবসও। বর্ধমানের আদিবাসীদের একটি সমাবেশকে সামনে রেখে দেদার বিক্রি হল সাঁওতালি সম্প্রদায়ের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা নয়া ক্যালেন্ডার।
সুদৃশ্য ওই ক্যালেন্ডারে বাংলা, ইংরেজি, ওড়িয়া ও সাঁওতালি (অলচিকি হরফ) – এই চারটি ভাষায় তারিখ ছাপা হয়েছে। ক্যালেন্ডারে আদিবাসী সংস্কৃতিকে মাথায় রেখে বিভিন্ন ছবিও তুলে ধরা হয়েছে। পাশাপাশি, জনপ্রিয়তার জন্য নবাগত আদিবাসী নায়ক-নায়িকাদের ছবিও রয়েছে সেখানে। বুধবার বর্ধমানে জেলা শাসকের দপ্তর সংলগ্ন এলাকায় আদিবাসী সমাবেশে স্থলে বিক্রেতাদের পাশাপাশি হাজির ছিলেন প্রচুর ক্রেতা। ২০ থেকে ৩০ টাকায় সেসব ক্যালেন্ডার দেদার বিক্রি হল। আদিবাসী মহিলাদের আবার বেশি পছন্দ চলচ্চিত্রের নায়ক-নায়িকাদের ছবি দেওয়া ক্যালেন্ডার। তাঁরাও মন ভরে কিনলেন ক্যালেন্ডাররা।
মামণি কিস্কু নামে এক মহিলা জানান, সামনেই ইংরেজি নববর্ষ আসছে। বাড়িতে একটি ক্যালেন্ডার থাকলে ভাল হয়। তাঁর কথায়, “গ্রামে তো আর এই ধরনের ক্যালেন্ডার মেলে না। এই নতুন ক্যালেন্ডারে নিজেদের ভাষায় সব লেখা আছে। পরবও লেখা রয়েছে। তাই কিনে নিয়ে যাচ্ছি।” আর এক তরুণী মনসা টুডু বলেন, “আমাদের পরবগুলো সব রয়েছে এখানে। অন্য ইংরেজি বা বাংলা ক্যালেন্ডারে এইসব থাকে না।” বিক্রেতা রবি মাণ্ডি জানান, বিভিন্ন মেলা বা এই ধরনের সমাবেশ হলে ঘুরে ঘুরে ক্যালেন্ডার বিক্রি করেন। আগে আদিবাসী পরবের কথা সব ক্যালেন্ডারে থাকত না। তিনি বলেন, “গত কয়েকবছর ধরে আদিবাসীদের জন্যই বানানো ক্যালেন্ডার বিক্রি শুরু করেছি।” নিজেদের ভাষা, হরফে ক্যালেন্ডার হাতে পেয়ে বেশ খুশি বর্ধমানের আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.