ছবি: প্রতীকী
অভিরূপ দাস: পৃথিবীর আলো দেখেছে মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে। নামকরণও করে ওঠা যায়নি এখনও পর্যন্ত! অথচ একরত্তি সেই সদ্যোজাতককেও ছাড় দিল না কালান্তক কোভিড-১৯ ভাইরাস (COVID-19 Virus)। পূর্ব মেদিনীপুরের মেচেদার যে ঘটনায় নতুন করে উদ্বেগ ছড়াতে শুরু করেছে রাজ্যের চিকিৎসক মহলে।
চিকিৎসকদের প্রশ্ন, একদিনে আগে পৃথিবীর আলো দেখল যে শিশু, কী করে তার শরীরেও বাসা বাঁধল ভাইরাস? এমন কোনও নজির তো এখনও নেই। তবে কি মায়ের গর্ভে থাকাকালীনই করোনা আক্রান্ত হয়েছে শিশু? আপাতত সেই আশঙ্কাতেই সিলমোহর দিচ্ছেন কোলাঘাটের শুশ্রুষা শিশু সেবানিকেতন, যেখানে এ মুহূর্তে নবজাতকের চিকিৎসা চলছে, সেই হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ প্রবীর ভৌমিক। তিনি বলেছেন, সম্ভবত সংক্রমণ হয়েছে মায়ের থেকে। তাঁর যুক্তি, “কারণ প্রসবের প্রোটোকল মেনে অস্ত্রোপচারের আগে ওই প্রসূতির করোনা পরীক্ষা করা হয়নি। যদি করা হত, তাহলে হয়তো প্রসবের আগেই এটা ধরা পরত।”
রাজ্যের চিকিৎসা জগতের নজিরবিহীন এই ঘটনার সূত্রপাত গত ১৫ জুন। সন্তানসম্ভবা ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার বাসিন্দা বৃষ্টি ভুঁইয়া। মেচেদার হাসপাতালে সন্তান প্রসব করেন তিনি। জন্ম থেকেই বাচ্চাটির ফুসফুসে সমস্যা। সন্দেহ হয় চিকিৎসকদের। বিশেষত রাজ্যে কোভিড অতিমারীর এই আবহে। শিশুদের কোভিড চিকিৎসার ব্যবস্থা সমস্ত জায়গায় নেই। মেচেদার হাসপাতালেও ছিল না।
তড়িঘড়ি বাচ্চাটিকে কোলাঘাটের শুশ্রুষা শিশু সেবা নিকেতনে নিয়ে আসা হয়। সেখানে প্রিম্যাচিওর বা সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর শারীরিক পরীক্ষা করে চিকিৎসকরা দেখেন কার্ডিয়াক শকের ইঙ্গিত মিলছে। নিশ্চিত হতে এক্স রে করেন চিকিৎসকরা। সেখানে নিউমোনিয়ার যে ছবি দেখা যায়, তা ভয়ংকর। ডা. ভৌমিকের কথায়, “নবজাতকের মাল্টিপল নিউমোনিয়া দেখেই আমাদের সন্দেহ হয়েছিল। এক্স রে-তে সেই সন্দেহই সত্যি প্রমাণিত হয়”। এরপর আরও নিশ্চিত হতে করা হয় ‘সি রিঅ্যাক্টিভ প্রোটিন টেস্ট’। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দেখা যায় ওই শিশুর সিআরপি রিপোর্ট এসেছে পূর্ণবয়স্ক করোনা আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে যেমনটা আসে, তেমনটাই। স্বাভাবিক কারণেই দ্রুত বাচ্চাটির কোভিড আইজিজি টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তাতেই চিকিৎসকদের আশঙ্কা সত্যি প্রমাণ করে দেখা যায় রিপোর্ট পজিটিভ।
মাত্র একদিনের সন্তান করোনা আক্রান্ত শুনে স্বাভাবিক কারণেই ভয় পেয়ে যান শিশুর বাবা শান্তনু ভুঁইয়া। কিন্তু তাঁকে অভয় দেন চিকিৎসকরা। দ্রুত সি প্যাপ ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় বাচ্চাটিকে। দেওয়া হয় কার্ডিয়াক সাপোর্ট। জানা যাচ্ছে, নিওনেটাল ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে টানা চার দিন থাকার পর আপাতত স্থিতিশীল ওই নবজাতক। আর কিছুদিন পর বাচ্চাটিকে ছুটি দিয়ে দেওয়ার কথাও ভাবছেন চিকিৎসকরা। মাত্র এক দিনের বাচ্চা করোনা আক্রান্ত হওয়ার এই ঘটনা দেশের মধ্যে কোনও সর্বকনিষ্ঠর সংক্রমণের নজির।
ভারতে হদিশ মিলেছে করোনার নতুন ডেল্টা স্ট্রেনের! বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন এই স্ট্রেনের সংক্রমণের ক্ষমতা আগের তুলনায় বেশ কয়েকগুণ বেশি! এই পরিস্থিতিতে পূর্ব মেদিনীপুরের সদ্যোজাতর শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি মেলায় উদ্বেগ আরও বাড়ছে। প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি গর্ভস্থ শিশুর শরীরেও থাবা বসাবে করোনা ভাইরাস? বিশিষ্ট শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ নিশান্তদেব ঘটক জানিয়েছেন, এখনও গর্ভস্থ শিশুর করোনা আক্রান্ত হওয়ার প্রমাণ মেলেনি। আইজিজি টেস্ট পজিটিভ এলেই কোনও শিশু মায়ের পেট থেকে সংক্রমণ নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছে এমনটা বলা যাবে না। তার আইজিএম টেস্ট করতে হবে। তবে মাত্র ১/২ দিনের বাচ্চার সেই টেস্ট না করাই শ্রেয় বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। তাঁর কথায়, ওই শিশুটিকে জন্ম দেওয়ার আগে মহিলার আরটি—পিসিআর কোভিড টেস্টের রিপোর্ট যদি নেগেটিভ আসত তবে তা চিন্তার বিষয় হত।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.