প্রতীকী ছবি
সুনীপা চক্রবর্তী, ঝাড়গ্রাম: অযোধ্যায় ঘর পেলেন রামলালা। ৫০০ বছর পর ফিরলেন নিজের ঘরে। ঠিক সেদিনই ঝাড়গ্রামে কোল পেল আরেক ‘রাম’। যাকে অনাদরে রাস্তায় ফেলে গিয়েছিলেন তার জন্মদাত্রী ও জন্মদাতা। রামমন্দির উদ্বোধনের দিন ভোরের আলো ফোটার আগে সদ্যোজাতকে নতুন জীবন দিল ঝাড়গ্রামের দম্পতি। কোলজুড়ে তাদের ঘরে এল ‘রাম’। কিন্তু নিয়মের গেরো শিশুটিকে এখনও পাননি তাঁরা।
সোমবার ভোর প্রায় সাড়ে পাঁচটা। সূর্যদেব তখনও প্রকট হননি। প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে মানিকপাড়ার জয়পুর গ্রামের সমীর রায় এবং তাঁর স্ত্রী ভারতী দেবী গ্রামের অদূরে কংসাবতী নদী সংলগ্ন এলাকায় গিয়েছিলেন। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন গ্রামেরও কয়েকজন। হঠাৎ রায় দম্পতি লক্ষ্য করেন নদীর চরে কাপড় ঢাকা দেওয়া কিছু একটা নড়ছে। অস্ফুট স্বরে কন্নার আওয়াজও শোনা যাচ্ছে। হাড়হিম করা ঠান্ডায় শিশুর কান্না শুনে ছুটে গিয়েছিলেন রায় দম্পতি। কাপড় সরিয়ে দেখেন হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় পড়ে রয়েছে একটি সদ্যোজাত শিশুপুত্র। কোনও কিছু না ভাবেই তাঁরা শিশুটিকে নিজেদের বাড়িতে নিয়ে যান। একরত্তির শরীর গরম করে, দুধ খাওয়ান।
এর পর নিয়ম মেনে গ্রামের সিভিক ভলান্টিয়ারের মাধ্যমে মানিকপাড়া ফাঁড়িতে খবর দেওয়া হয়। পুলিশ এবং উদ্ধারকারী দম্পতি, গ্রামের মানুষজন মানিকপাড়া নিবেদিতা কর্মমন্দির দত্তক হোমে শিশুটিকে জমা দেন। সেখান থেকে হোম কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে মানিকপাড়া স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করান। পাশাপাশি হোমের পক্ষ থেকে জেলা চাইল্ড ওয়েল ফেয়ার কমিটিকে জানানো হয়। হোমের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি রয়েছে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে।
এদিকে রায় দম্পতি চাইছেন ওই শিশুটিকে যেন তাঁদের দত্তক দেওয়া হয়। সমীরবাবু জানান তিনি এক রাজমিস্ত্রী এবং ছোটখাট ঠিকাদারির কাজ করেন। তাঁর একটি বছর পাঁচেকের কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি বলেন, “এদিন খুব ভোরে শিশুটিকে নদীর চড়ে আমরা পড়ে থাকতে দেখি। আমি এবং আমার স্ত্রী তাকে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলাম। আজ খুব পবিত্র দিন। দেবতা রামের জন্ম দিন। আমাদের ঘরে রাম এসেছেন। আমরা চাই তাকে সন্তান হিসেবে বড় করে তুলতে।”
এই বিষয়ে নিবেদিতা কর্ম মন্দির দত্তক হোমের সম্পাদক দেবাশিস বন্দ্যোপায় বলেন. “ওই দম্পতি শিশুটিকে উদ্ধার করেছে। বিভিন্ন পদ্ধতি মতো আমাদের হোমে এসেছে। আমরা শিশুটিকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করিয়েছি। সংশ্লিষ্ট দপ্তরে খবর দেওয়া হয়েছে। ওই দম্পতি চান শিশুটির নাম ‘রাম’ রাখা হোক এবং পাশাপাশি তাকে দত্তক দেওয়া হোক।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.