ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: সখীকাণ্ডে এবার সামনে এল আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। অজয়কে হত্যার আগে তাঁর সঙ্গে বসে মদ্যপান করেছিল খুনের দায়ে অভিযুক্ত সখী ও তার প্রেমিক বিশ্বজিৎ। জেরায় এমনই তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। তবে খুনের কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা এখনও কাটেনি। কারণ অজয়ের পরিবারের লোকেদের দাবি, সখী অজয়কে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। তবে অজয় এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিল। অন্যদিকে পুলিশ সূত্রে খবর, জেরায় সখী জানিয়েছে, অজয়ের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চায়নি সে। কিন্তু অজয় সম্পর্ক থেকে বের হতে চাইছিল না। এই দুই তথ্য নিয়ে এখন নতুন করে রহস্য দানা বাঁধতে শুরু করেছে। অজয়ের পরিবারের লোকেদের দাবি, অজয় বিয়ে করতে অস্বীকার করার কারণে, তাঁকে খুন করিয়েছে সখী। তবে একা সখী ও বিশ্বজিৎ নয়, অজয়কে খুনের ঘটনায় আরও ন’জন জড়িত আছে বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের লোকেদের।
[ দিনেদুপুরে অবাধে গাছ কেটে পাচারের অভিযোগ, চাঞ্চল্য গাজলডোবায় ]
উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের এই ত্রিকোণ প্রেম হত্যাকাণ্ডের রহস্যের জট ক্রমশ যেন বেড়েই চলেছে। তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই জটিল হচ্ছে মামলাটি। বুধবার রাতে অশোকনগরের বাসিন্দা অজয় করকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গিয়েছিল বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য নামে এক যুবক। দু’জনেই ওই এলাকার গৃহবধূ সখী চৌধুরি বিশ্বাসের প্রেমিক। আর এই প্রেমের কারণেই অজয়কে খুন হতে হয়েছে বলে দাবি তাঁর পরিবারের লোকেদের। বুধবার রাতে বিশ্বজিৎ অজয়কে ডেকে নিয়ে যাওয়ার পর আর ফেরেননি অজয়। শুক্রবার সকালে তাঁর মৃত্যুর খবর পান পরিবারের লোকেরা। জানা যায়, বৃহস্পতিবার অশোকনগর তিন নম্বর রেলগেটের কাছে লাইনের ধার থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়। অজয়ের পরিবারের লোকেরা সরাসরি সখী ও তাঁর প্রেমিকের বিশ্বজিতের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ করেন। তাঁদের দাবি, ঘটনার দিন দুপুর থেকে অজয়ের সঙ্গে সখী ও বিশ্বজিতের টানাপোড়েন চলছিল। শুক্রবার রাতে পুলিশ সখী ও বিশ্বজিতকে গ্রেপ্তার করার পর জেরায় জানতে পারে, ঘটনার দিন তিনজনে একসঙ্গে সময় কাটিয়েছে। সে কথা নিজেও স্বীকার করেছে সখী।
[ মাঝপথে বিকল এসি, ব্রহ্মপুত্র মেলে অসুস্থ হয়ে পড়লেন বহু যাত্রী ]
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বুধবার অজয়, সখী ও বিশ্বজিৎ একসঙ্গে বসে মদ্যপান করেন। তারপর তাঁকে নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে। এই ঘটনা ফের একবার বারাসতের মনুয়াকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। স্বামী অনুপমকে খুনের আগে মনুয়া ও তাঁর প্রেমিক অজিত অনুপমের বাড়িতে বসে মদ্যপান করে। এবং তারপর দু’জনের মধ্যে শারীরিক সম্পর্কও হয়। তারপরই অনুপম বাড়ি ফিরতেই অজিত তাঁকে পিটিয়ে, কুপিয়ে খুন করে।
অজয়ের মা ডলি দেবীর দাবি, গোটা ঘটনাটি সখীর পরিকল্পনামাফিক হয়েছে। একই সঙ্গে একাধিক পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখত সখী। অজয়কেও নিজের প্রেমের জালে ফাঁসিয়ে নেয়। তারপর ষড়যন্ত্র করে অন্য প্রেমিক বিশ্বজিতকে দিয়ে খুন করিয়ে দেয়। তাঁর আরও দাবি, খুনের সময় বিশ্বজিতের সঙ্গে আরও ন’জন ছিল। তাঁর আরও অভিযোগ, একটি টোটোয় চাপিয়ে অজয়কে রেললাইনের ধারে নিয়ে যাওয়া হয়। খুনের ঘটনায় সেই টোটোচালকও জড়িত। অজয়ের পরিবারের লোকেদের অভিযোগের ভিত্তিতে জোরকদমে তদন্ত চালাচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি সখী ও বিশ্বজিতের বয়ানও নিয়েছে তারা। পুলিশ জানিয়েছে, দু’পক্ষের বক্তব্যই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে নিশ্চিতভাবে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। গোটা বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.