অভিষেক চৌধুরী, কালনা: ধর্মচর্চার পাশাপাশি চলত দেশকে স্বাধীন করার গোপন বৈঠকও। তৈরি করা হত স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা। তাই একসময় বিপ্লবীদের আখড়া হয়ে উঠেছিল কালনার জ্ঞানানন্দ মঠ। মঠের প্রাণপুরুষ নিত্য গৌরবানন্দ অবধূত মহারাজের সময় অন্যান্য বিপ্লবীদের মত এই মঠেই এসেছিলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও। আর সেই থেকেই কালনায় স্বাধীনতা আন্দোলন যে নতুন গতি পায়,তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
দেশের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের প্রাক্কালে কালনার নেপপাড়ায় থাকা এই মঠের উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড ও পুণ্যভূমিকে স্মরণ করছেন অনেকেই। কারণ দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এই মঠের ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মঠের দায়িত্বে থাকা নিত্য প্রেমানন্দ মহারাজ বলেন, “১৯২০ সালে এই মঠের প্রতিষ্ঠা করেন নিত্য গৌরবানন্দ অবধূত মহারাজ। তাঁর সাথে মাস্টারদা সূর্য সেন-সহ অন্যান্য বিপ্লবীদের নিবিড় যোগাযোগ ছিল। তাই এই মঠ বিপ্লবীদের আখড়া ও নিরাপদ স্থান হয়ে উঠেছিল। মহারাজকে কংগ্রেসের সভাপতি পদে নির্বাচিতও করা হয়। ১৯৩০ সালে নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুও এই মঠে এসে দু-দিন দু-রাত্রি ছিলেন। পরে মহারাজকে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।”
কালনার জ্ঞানানন্দ মঠ সূত্রে জানা গিয়েছে,বাংলাদেশের বরিশালে জন্ম উপেন্দ্রনাথ পাল পরবর্তীকালে স্বামী নিত্যগোপালের কাছে সন্ন্যাস ধর্মগ্রহণ করেন। নিত্য গৌরবানন্দ অবধূত মহারাজ নামে পরিচিত হন। যদিও সন্ন্যাস নেওয়ার আগে কলকাতায় থাকার সময় এই উপেন্দ্রনাথের সঙ্গে বিপ্লবী চিন্তাহরণ মুখোপাধ্যায়,শরৎ পালের ওঠাবসা ছিল। পরে সন্ন্যাস নেওয়ার পরে অনেক বিপ্লবীও তাঁর কাছে দীক্ষা নেন।
অন্যদিকে, তাঁরই অন্যতম এক শিষ্যা ছিলেন কালনার হরিপদ মোদকের স্ত্রী সুশীলাদেবী। শিষ্যার ডাকে নিত্য গৌরবানন্দ মহারাজ কালনায় আসেন। এরপরেই নেপপাড়ায় থাকা একটি জায়গা গুরুর পছন্দ হওয়ায় সুশীলাদেবী গুরুকে সেই জায়গাটি দেন আশ্রম তৈরি করার জন্য। এরপরেই বিশাল জায়গা জুড়ে ‘জ্ঞানানন্দ ব্রহ্মচর্য আশ্রম’ প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯২০ সালে। বিপ্লবী সূর্যনারায়ণ পাল,রাজু স্যানাল,নিমাই রায়,খণ্ডঘোষের বটুকেশ্বর দত্তের মত অনেকেই এই মঠে আসতেন। রাতের অন্ধকারে চলত গোপন বৈঠকও। চলত দেশকে স্বাধীন করার বিভিন্ন পরিকল্পনাও।
জানা গিয়েছে, নিত্য গৌরবানন্দ মহারাজ কালনা কংগ্রেসের সভাপতি হন। এছাড়া কলকাতায় থাকার সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপরেখা তৈরিতে সুভাষচন্দ্র বসু কালনার এই মঠে এসে একটি কুঁড়েঘরে দু’দিন-দু’রাত্রি ছিলেন। এইসব বিভিন্ন কারণে ব্রিটিশ সরকারের রোষের মুখে পড়তে হয় নিত্য গৌরবানন্দ মহারাজকে। তাই ১৯৩০ সালের ১৪ জুলাই নিত্য গৌরবানন্দ মহারাজকে ব্রিটিশ সরকারের পুলিশ গ্রেপ্তারও করে। জেলও খাটতে হয়। যদিও পরে এই মঠেই নিত্য গৌরবানন্দ মহারাজ দেহত্যাগ করেন। এখানেই তাঁর সমাধিস্থল এখনও বর্তমান। দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে এমনই এক পুণ্যভূমিতে এখনও সংরক্ষিত রয়েছে নেতাজির ব্যবহৃত কাঠের চেয়ার,খাবার টেবিল,খাট,একটি কাঁথাও। স্বাধীনতা আন্দোলনের কর্মকাণ্ড-সহ নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে নিয়ে একটি গবেষণা কেন্দ্র ও মঠের রক্ষণাবেক্ষণে সরকারি সহযোগিতার দাবি জানায় মঠ কর্তৃপক্ষ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.