দিব্যেন্দু মজুমদার ও নব্যেন্দু হাজরা: যে ছেলের বুদ্ধির ধারে অনেক জটিল অঙ্ক মিলে যেত, যাকে দেখিয়ে মাস্টারমশাইরা অন্য ছাত্রদের বলতেন, ‘ওকে দেখে শেখো’ – সেই ছেলে কীভাবে এমন ঠান্ডা মাথায় একের পর এক খুন করে নিজেকে শেষ করে দিতে পারে, এই অঙ্ক কিছুতেই মেলাতে পারছেন না তার বন্ধুরা।
উচ্চশিক্ষিত, হাই প্রোফাইল নম্র-ভদ্র স্বভাবের অমিত যে এ কাজ করতে পারে, তা এখনও কল্পনাতে আনতে পারছেন না তার পুরনো পাড়ার বাসিন্দারা। সোমবার বিকেল থেকে টিভি স্ক্রিনে আগরওয়াল পরিবারের ছোট ছেলের কীর্তির কথা বারবার ভেসে উঠতেই রীতিমতো থ’ হুগলির উত্তরপাড়া ভদ্রকালীর ৩ নম্বর শম্ভু দাশগুপ্ত সরণির মানুষজন। ছোট থেকে পড়াশোনায় ভাল হওয়ার কারণে যে দুই ভাইয়ের পাড়ায় সুনাম ছিল, তারই একজন কিনা এভাবে নৃশংস ভাবে স্ত্রী শাশুড়িকে খুন করে আত্মঘাতী হল!
মঙ্গলবার সকাল থেকে এই একটা আলোচনাই গোটা উত্তরপাড়ায় ঘুরেফিরে আসছে। প্রথমে বেঙ্গালুরুতে স্ত্রীকে শ্বাসরোধ করে খুন, পরদিন সেখান থেকে ফিরে কাকুড়গাছিতে শাশুড়িকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন। শ্বশুর কোনওক্রমে প্রাণ নিয়ে পালালে, নিজেকেই নিজে গুলি চালালো সে। পড়াশুনায় চিরকাল তুখোর অমিত কি করে পারলো এমন নৃশংস কাজ করতে তাই বুঝে পারছেন না এলাকার মানুষজন।
বিয়ের পর বছর দশেক আগেই স্ত্রীকে নিয়ে উত্তরপাড়ার এই ফ্ল্যাট ছেড়ে বেঙ্গালুরু চলে যান অমিত। এখানকার বাড়িতে থাকতো বাবা, মা, দাদা, বউদি এবং তাদের সন্তান। কিন্তু গত বছর তারাও সকলেই ডানলপের কাছে নতুন ফ্ল্যাট কিনে চলে যান। তাই এখানকার নরেন অ্যাপার্টমেন্টের চারতলায় মুখোমুখি তাদের দুটি ফ্ল্যাটই তালাবন্ধ। প্রতিবেশীরা জানান, দিন কয়েক আগে অমিতের দাদা প্রদীপ গাড়ি নিয়ে এসেছিল একটা গ্যাস নিয়ে যায়। তারপর আর আসেনি। আর অমিতকে তাঁরা শেষ দেখেছেন বছর দেড়েক আগে।
তাঁদের দাবি, এলাকায় খুব একটা মিশত না এই আগরওয়াল পরিবার। তবে ধনী, অভিজাত পরিবার হিসেবে বেশ নামডাক ছিল। দুই ছেলে পড়াশোনায় অত্যন্ত ভাল ছিল ছোটবেলা থেকে। অমিত তো চাটার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট। সম্প্রতি বেঙ্গালুরুতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে অমিত ডানলপে এসে উঠেছিল কি না, তা জানেন না এখানকার বাসিন্দারা। কিন্তু উত্তরপাড়ায় আসেনি, তা জানালেন প্রতিবেশী সুমন সরকার। তিনি বলেন, “কার মাথায় যে কী থাকে, তা আর বাইরে থেকে দেখলে বোঝা যায় না। যেহেতু অমিত তার স্ত্রীকে নিয়ে কখনওই এখানে থাকত না, তাই তাদের মধ্যে অশান্তি ছিল কিনা বলতে পারব না। তবে বিয়ের সময় কোনও অনুষ্ঠান হয়নি ওদের। কারণ সেই সময় অমিতের জ্যাঠামশাই মারা গিয়েছিলেন।”
প্রতিবেশীরা প্রত্যেকেই মানছেন, যতদিন এখানে ছিল আগরওয়াল পরিবার, সেভাবে কোনও দিন কোনও অশান্তি দেখেননি তাঁরা। বুবাই ভট্টাচার্য নামে আরেক বাসিন্দার বলছেন, “অমিত একটু কম কথাই বলতো। টিভিতে যখন দেখি, নিজের বউ আর শাশুড়িকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছে ও, বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। এটা যে ও করতে পারে ভাবতেই পারি না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.