দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: বিকেলের বাবা-মাকে চা করে খাইয়ে, সন্ধেবেলা NEET পরীক্ষার অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ কোন্নগরের মেধাবী ছাত্র। দেড়দিন পেরিয়ে গেলেও খোঁজ মেলেনি। এই রহস্যজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে কোন্নগরের চটকল এলাকায়। নিখোঁজ ওই ছাত্রের নাম অভীক মণ্ডল। সে চটকল এলাকার বিদিশা অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা। ছেলেকে ফিরে পেতে বাবা সুভাষ মণ্ডল উত্তরপাড়া থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেছেন।
জানা গিয়েছে, অভীক চলতি বছরে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। তারপর সে কলকাতার সুরেন্দ্রনাথ কলেজে মাইক্রোবায়োলজিতে অনার্স নিয়ে ভরতি হয়। তবে তার লক্ষ্য ডাক্তারি পড়া। ফলে আগামী রবিবার, ১৩ তারিখ, NEET’এর জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিল। মঙ্গলবার দুপুরে বাবা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আসার পর বাবা, মা সকলকে চা করে খাওয়ায় অভীক। এরপর রাত আটটা নাগাদ মা, বাবাকে সে জানায় যে NEET’এর অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করে সাইবার ক্যাফে থেকে প্রিন্ট বের করতে যাচ্ছে। মা ঝর্ণা মণ্ডল ছেলের সঙ্গে যেতে চান। কিন্তু অভীক জানায় যে ১৫ মিনিটের মধ্যে সে ফিরে আসবে, মায়ের যাওয়ার দরকার নেই।
এরপর বাবার সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে যায় অভীক। কিন্তু দীর্ঘক্ষণ বাড়িতে না ফেরায় সবাই খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। স্থানীয় সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে বাবা জিজ্ঞাসাও করেন, ছেলে এসেছিল কিনা। ক্যাফে মালিক তাকে জানান অভীক সাড়ে আটটা নাগাদ প্রিন্ট আউট নিয়ে চলে গেছে। এই খোঁজাখুঁজির মাঝেই অভীকের সাইকেলটি বারো মন্দির গঙ্গার ঘাট থেকে উদ্ধার হয়। বাবা সুভাষ মণ্ডল জানিয়েছেন, ছেলে ফোন নিয়ে বেরয়নি। তাই তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি কোনওভাবেই। এরপর ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করতে গিয়ে তিনি উদ্ধার করেন যে ছেলে ফোনের সমস্ত হোয়াটস অ্যাপ (WhatsApp) মেসেজ মুছে দিয়েছে। এর আগেও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার আগেও সমস্ত হোয়াটস অ্যাপ মেসেজ ডিলিট করে দিয়েছিল অভীক।
অভীকের হোয়াটস অ্যাপের সমস্ত বার্তা মুছে দেওয়ার মধ্যেই তার নিখোঁজ রহস্য লুকিয়ে আছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে পুলিশ সূত্রে খবর, সবচেয়ে আশ্চর্যের ঘটনা, কোন্নগর বারো মন্দির ঘাটে যেখানে অভীকের সাইকেল দাঁড় করানো ছিল, সেখানকার সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ বারংবার দেখার পরও ফুটেজে দেখা যায়নি সাইকেলটি কখন রাখা হয়েছে, কে রেখেছে। আর এই জায়গা থেকেই রহস্য দানা বেঁধেছে। অভীকের বাবা সুভাষবাবু জানিয়েছেন, এলাকার গুটিকয় মানুষজন অভীকের পড়াশোনা, ভাল ফলাফল – এসব নিয়ে কিছুটা ঈর্ষাকাতর ছিলেন। তা সত্ত্বেও ছেলের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে কারোর হাত থাকতে পারে বলে কখনওই বিশ্বাস করেন না সুভাষবাবু।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.