চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বেআইনি খনিতে নেমে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ৩ জনকে উদ্ধার করদতে নজিরবিহীন সিদ্ধান্ত নিল প্রশাসন। এই প্রথম খনিতে উদ্ধারকাজে নামানো হল জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলকে। ৫দিন পর, বৃহস্পতিবার সকালে এনডিআরএফ-এর ৩০ সদস্যের একটি দল পৌঁছেছে আসানসোলের আলডিহির দুর্ঘটনাগ্রস্ত খনি এলাকায়। পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখে, পরিকল্পনা করে কাজে নামার কথা তাঁদের।
রবিবার গভীর রাতে কয়লা চুরি করতে আলডিহির বেআইনি খনিতে নেমেছিল চার যুবক। খনিমুখ থেকে সামান্য ভিতরে যেতেই বিষাক্ত মিথেন, কার্বন মনোক্সাইড বেরতে থাকে। এক যুবক কোনওক্রমে পালাতে সক্ষম হলেও, বাকি তিনজন আটকে পড়ে খনির মধ্যে। সন্তোষ মারাণ্ডি, কালীচরণ কিসকু, ও বিনয় মূর্মূ – নিখোঁজ এই তিনজনই আকনবাগান এলাকার বাসিন্দা। খনিতে নেমে উদ্ধারকাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন। মাইন রেসকিউ টিমের দক্ষ সদস্যরা অক্সিজেন সরবরাহকারী মেশিন নিয়ে সেখানে গেলেও, মিথেন ও কার্বন মনোক্সাইডের পরিমাণ এত বেশি ছিল যে অক্সিজেন সরবরাহ পর্যাপ্ত ছিল না। আরেকদিকে, ছোট খনিমুখ বোরিং মেশিন দিয়ে বড় করারও উপায় ছিল না। কারণ, এলাকাটি অত্যন্ত ধসপ্রবণ। যার ফলে মেশিন চালালে ধস নামতে পারে, এই আশঙ্কা কাজ করছিল উদ্ধারকারীদের মধ্যে। কাজ করেনি পোকল্যান্ড মেশিনও।
খনিতে নিখোঁজদের উদ্ধারে একের পর এক উপায় ব্যর্থ হওয়ায় কার্যত মাথায় হাত পড়েছিল প্রশাসনের। খনিটি বেআইনি হওয়ায়, এখানে কোনওরকম কাজ করার আগে বিস্তর ভাবনাচিন্তা করতে হয়েছে প্রশাসনের কর্তাদের। শেষমেশ অবশ্য তাঁরা জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সাহায্য নেওয়াই স্থির করেন। সেইমতো ডাকা হয় এনডিআরএফ-কে। বৃহস্পতিবার সকালেই আলডিহিতে পৌঁছান এনডিআরএফ-এর ৩০ সদস্য। তাঁরা প্রথমে এলাকাটি ভালভাবে পরিদর্শন করেন। বুঝে নেন আশেপাশের মাটির চরিত্র।
এরপর জেসিবি দিয়ে খনিমুখটি চওড়া করার কাজ শুরু হয়। উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে, যথাযথ সতর্কতার সঙ্গে খনিতে প্রবেশ করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে খবর এনডিআরএফ সূত্রে। তবে গোটা অপারেশনের সমস্ত ধাপ এখনই জানাতে নারাজ জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দলের সদস্যরা। কারণ, তাঁদের মতে, খনিগহ্বরের পরিস্থিতি অনুযায়ী পালটে যেতে পারে পরিকল্পনা। তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিয়ে কাজ চালাতে হতে পারে। এলাকায় এনডিআরএফ সদস্যদের দেখে কিছুটা স্বস্তি বোধ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। দুর্ঘটনার ৫দিন পর নিখোঁজদের অবস্থা জানা যাবে বলে তাঁরা আশা করছেন।
দেখুন উদ্ধারকাজের ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.