অর্ণব আইচ: যুদ্ধের সময় চুপিসারে তাঁরা নেমে পড়েন সমুদ্র বা নদীতে। গভীর জলে মাছের মতো সাঁতার কেটে পৌঁছে যান কোনও জাহাজের তলায় বা বন্দরের জলে ডোবা অংশে। কখনও সুকৌশলে লাগিয়ে দেন বিধ্বংসী মাইন। আবার কখনও বিশেষ ডিটেক্টর দিয়ে তাঁরাই জলের ভিতর থেকে খুঁজে বের করেন মাইন। তাঁরাই ভারতীয় নৌসেনার ‘স্পেশাল ডাইভিং টিম।’ যুদ্ধের সময় যাঁরা গভীর জলে শত্রুর দিকে অস্ত্র ছোঁড়েন। এবার গঙ্গাসাগরে তীর্থযাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সাগরের গভীর জলে নামবেন তাঁরাই। তীর্থযাত্রীরা বিপদে পড়লে নৌসেনার এই ডুবুরিরাই নামবেন উদ্ধারের কাজে।
[বেওয়ারিশ গরু দত্তক নিলে মিলবে সংবর্ধনা, ঘোষণা রাজস্থান সরকারের]
রাজ্যের ন্যাভাল অফিসার ইন চার্জ (এনওআইসি) সুপ্রভকুমার দে-র নির্দেশেই একদিকে গঙ্গাসাগর ও অন্যদিকে কচুবেড়িয়া ও আট নম্বর লটের কাছেও থাকছে এই ডুবুরিদের টিম। নৌসেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছর সাতজনের একটি টিম সাগরমেলার সময় কাজ করেছিলেন। এবার নতুনভাবে এই ডুবুরি টিমকে সাজানো হয়েছে। দশজনের দু’টি টিমকে নামানো হচ্ছে জলে। এই বিষয়ে দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও কয়েক মাস আগে আলোচনা হয় নৌসেনা কর্তাদের। এর পরই এই ‘স্পেশাল ডাইভিং টিম’কে নামানোর সিদ্ধান্ত হয় গঙ্গাসাগর মেলায়। এই কারণেই সম্প্রতি দশজন নৌসেনার ডুবুরিকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। বিশাল সেনা ট্রাকে করে তাঁরা নিয়ে আসেন নৌকা, ডাইভিং স্যুট ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র। কলকাতা থেকে তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয়েছে গঙ্গাসাগরে। সেখানে তাঁরা শুরু করেছেন উদ্ধারকাজের
‘অপারেশন’-এর মহড়া। নৌসেনা কর্তারা জানিয়েছেন, গঙ্গাসাগর মেলার সময় ২৪ ঘণ্টা ধরে নজরদারি চালাবে এই টিম। একটি থাকছে সাগরে। সমুদ্রের পাড় ধরে সেই টিম চালাবে নজরদারি। কেউ যদি স্রোতের টানে ভেসে যান, সঙ্গে সঙ্গেই জলে ঝাঁপিয়ে পড়বেন এই ডুবুরিরা। একইভাবে মুড়িগঙ্গার উপরও স্পিডবোট নিয়ে ভাসবেন ডুবুরিরা। তাঁরা নজর রাখবেন জেটিগুলির উপর। সারা দেশ থেকে তীর্থযাত্রীরা আসেন গঙ্গাসাগরে। যদি জেটিতে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে বা কেউ জলে পড়ে তলিয়ে যেতে থাকেন, তাঁকে উদ্ধারের জন্য তখনই জলে ঝাঁপিয়ে পড়বেন ডুবুরি। তাঁদের কাছে স্পিডবোট থাকার ফলে কোনও দুর্ঘটনার খবর পেলে খুব তাড়াতাড়ি সেই জায়গায় যাওয়ার চেষ্টা করবেন তাঁরা। আবার মুড়িগঙ্গার মাঝখানে যদি কেউ লঞ্চ থেকে জলে পড়ে যান, তাঁর সন্ধানেও নদীতে নামবেন নৌসেনার ডুবুরি। যেহেতু সারাদিন ও সারারাত তীর্থযাত্রীরা গঙ্গাসাগরে যাতায়াত করেন, তাই দিনের মতো রাতেও থাকছে নৌসেনার নজর।
নৌসেনার এক আধিকারিক জানান, যেখানে নৌসেনার কমান্ডো থাকে না, সেখানে এই ডুবুরি টিমকেই প্রথমে জলে নামানো হয়। যে কোনও জাহাজ, যুদ্ধজাহাজ বা বন্দরের আনাচ কানাচে কোথাও শত্রুপক্ষ মাইন লাগিয়েছে কি না, তার সন্ধান চালাতে এই ডুবুরিরা দক্ষ। প্রয়োজনে জলের নিচে শত্রুর সঙ্গে মোকাবিলাও করতে সক্ষম বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত নৌসেনার এই ডুবুরিরা। আবার সমুদ্র, নদী ছাড়াও খনিতে জল ঢুকলেও তার ভিতর থেকে উদ্ধারকাজের জন্য নৌসেনার এই টিমকে বিশেষ প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। গঙ্গাসাগর মেলা পর্যন্ত এই ‘স্পেশাল ডাইভিং টিম’ টহল দিয়ে নজরদারি চালাবে বলে জানিয়েছে নৌসেনা।
[বিপাকে ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’, রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় চার্জশিট পেশ পুলিশের]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.