রূপায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়: সিএএ নিয়ে বিজেপি তথা কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করুক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। আজ কৃষ্ণনগরের সভা থেকে মোদির মুখেই সিএএ নিয়েই বার্তা শুনতে চায় মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষজন। কী বললেন প্রধানমন্ত্রী? নজর সেদিকেই।
কোনও নির্বাচন এলেই মতুয়া ভোট ব্যাঙ্কের লক্ষ্যে সিএএ তাসকে আস্তিন থেকে বের করে বিজেপি। এবারও লোকসভা ভোটের আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন লাগু করা হবে বলে গত মাসেই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah)। ২০১৯ সালে সংসদে সিএএ পাস হলেও তা কার্যকর করা যায়নি। কিন্তু অসম ও উত্তর-পূর্বে সিএএ বিরোধিতার আঁচ উপলব্ধি করে বিজেপি এগনোর সাহস পায়নি। আর একাধিকবার রাজ্যে এসে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা মতুয়া ভোট ব্যাঙ্ককে হাতে রাখতে সিএএ চালুর আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন। তৃণমূলের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, সকলেই নাগরিক। তাহলে আলাদা করে নাগরিকত্ব কেন। মতুয়াদের উন্নয়নে একাধিক কাজ করেছে রাজ্য সরকার। এবার মতুয়ারাও চাইছে সিএএ নিয়ে বিজেপি শুধু প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছে। অবস্থান স্পষ্ট করুক নরেন্দ্র মোদি। বাংলা সফর দিয়েই শুক্রবার লোকসভা ভোটের প্রচার শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল আরামবাগ লোকসভা কেন্দ্রে জনসভা করেছেন। আজ, শনিবার সকালেই কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজের মাঠে সভা করবেন তিনি। আজ সকাল সাড়ে দশটার মধ্যেই কৃষ্ণনগর চলে আসবেন মোদি।
নদিয়া জেলায় মতুয়া ভোট অন্যতম ফ্যাক্টর। কৃষ্ণনগরের পাশেই রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে ৩৫ শতাংশের বেশি মতুয়া ভোট রয়েছে। সিএএ লাগু করার টোপ দিয়ে রানাঘাটে বিজেপি জয়ের পথ অনেকটা মসৃণ করেছিল। কিন্তু এবার মতুয়া ভোট অনেকটাই বেঁকে বসেছে। সেটা আঁচ করতে পারছে বিজেপি নেতৃত্ব। কৃষ্ণনগর লোকসভা কেন্দ্রকে প্রথমেই সভা করার জন্য বেছে নেওয়ার পিছনে বিজেপির একাধিক অঙ্ক রয়েছে। এক, কৃষ্ণনগর লোকসভা এবার বিজেপি তাদের জয়ের ক্ষেত্রে ইতিবাচক মনে করছে। অতীতে লোকসভা ভোটে কৃষ্ণনগর থেকে জিতেও এসেছে বিজেপি। ১৯৯৯ সালে এখান থেকে সাংসদ হয়েছিলেন বিজেপির জলু মুখোপাধ্যায়। এছাড়া, মেরুকরণের বিষয়টি তো রয়েছেই। আজ সভায় কৃষ্ণনগর থেকে গত লোকসভা ভোটে জিতে আসা মহুয়া মৈত্রকেও নিশানা করতে পারেন মোদি। কিন্তু বিজেপি যতই কৃষ্ণনগর লোকসভাকে টার্গেট করুক না কেন, একুশের বিধানসভা ভোটের ফলাফলের অঙ্ক বলছে, কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে যথেষ্ট এগিয়ে তৃণমূল। একুশের বিধানসভার ফলাফলের নিরিখে এই লোকসভার মধ্যে সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রের ছয়টিতেই তৃণমূল জিতেছিল। একটি পেয়েছিল বিজেপি।
পাশাপাশি, গত কৃষ্ণনগর পুরসভার ভোটেও তৃণমূলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছিল বিজেপি। ফলে এখানে মোদিকে নিয়ে এসে বিজেপির কোনও লাভ হবে না বলেই দাবি তৃণমূল নেতৃত্বের। এদিকে, মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, জঙ্গিপুর-সহ রানাঘাট লোকসভা থেকে লোক এনে আজ মাঠ ভরিয়ে শক্তি দেখানোর পরিকল্পনা নিয়েছে গেরুয়া শিবির। যাত্রীবাহী বাস ও ছোট ছোট গাড়ি করে লোক আনার চেষ্টা চলছে। তবে মাঠের সাইজ খুব বিশাল নয়। তাই হাজার চল্লিশ লোক হলেই মাঠ উপচে পড়বে। তবে লক্ষাধিক লোক আনার যে টার্গেট কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা দিয়েছেন তা যে কার্যত অসম্ভব সেটা মেনে নিচ্ছেন জেলার নেতারা। তাছাড়া সকাল সাড়ে দশটার মধ্যে মাঠ উপচে শহর ভরিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় বলেই মনে করছে গেরুয়া শিবিরের একাংশ। আজ জনসভার পাশাপাশি সরকারি মঞ্চ থেকে বেশ কিছু প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ডিভিসি, কোল ইন্ডিয়া, বিদ্যুৎ, রেল এবং রাস্তা সংক্রান্ত একাধিক প্রকল্পের উদ্বোধন করবেন তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.