অর্ণব দাস, বারাকপুর: খাঁ খাঁ করছে ‘সাম্রাজ্য’। গত শুক্রবার তাঁর খোঁজে গিয়ে ইডির উপর হামলার পর থেকে ‘ফেরার’ শেখ শাহজাহান। উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ কর্মাধ্যক্ষ ছাড়াও সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতিও তিনি। অন্তরাল থেকে অডিও বার্তা দিলেও এলাকায় আর দেখা পাওয়া যায়নি তাঁর। শাহজাহানের অনুপস্থিতিতে আপাতত জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী কর্মাধ্যক্ষের দায়িত্ব সামলাবেন সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী।
তিনি দায়িত্ব নিলেন বলে শেখ শাহজাহানের পদচ্যুতি ঘটল তা নয়, সেকথা সাফ জানিয়েছেন খোদ নারায়ণ গোস্বামী। তাঁর কথায়, “উনি অনুপস্থিত আপনি কীভাবে বুঝবেন? এটা সাম্মানিক পদ। এখানে জেলাপরিষদের সভাধিপতি, কর্মাধ্যক্ষদের কোনও অ্যাটেনডেন্স হয় না। উনি যখন যেদিন আসবেন অফিস করবেন। উনি অনুপস্থিত বলবেন কীভাবে? ঘটনা ৩-৪ দিনের। এমনও অনেক কর্মাধ্যক্ষ আছেন যাঁরা বেশ কিছুদিন অফিসে আসেন না। উনি হয়তো ব্যক্তিগত কারণে কাশ্মীর বেড়াতে গিয়েছেন। কাজ থেমে থাকবে না। কোনও কর্মাধ্যক্ষ যদি সময়মতো আমার অফিসে না আসেন, তাঁর জন্য কাজ থেমে থাকবে না। মানুষের নাগরিক পরিষেবা কারও অনুপস্থিতিতে থেমে থাকবে না।”
উল্লেখ্য, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ কর্মাধ্যক্ষের পাশাপাশি সন্দেশখালি ১ নম্বর ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শেখ শাহজাহান। এই মুহূর্তে ইডির হেফাজতে থাকা প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত তিনি। শেখ শাহজাহানের উত্থান বাম জমানার শেষ দিকে। এলাকার অনেকে বলেন, শেখ শাহজাহান এ রাজ্যের লোকই নন। তিনি অনুপ্রবেশকারী। বাংলাদেশ থেকে এসেছেন এখানে। বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে স্থানীয় বিধায়ক অনন্ত রায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন এই শাহজাহান। কাঠ ও গরু পাচারের পাশাপাশি মানব পাচারের অভিযোগও রয়েছে শাহজাহানের বিরুদ্ধে। এসবের মাধ্যমেই তাঁর প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
২০১১ সালে রাজ্যে পালাবদল ঘটে। ক্ষমতায় আসে তৃণমূল (TMC)। বদলায় পরিস্থিতি। মাথার উপর থেকে হাত সরে যায় বাম বিধায়কের। বিপাকে পড়েন শাহজাহান। তার পর ২০১৬ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন তিনি। বাম আমলে অবশ্য শাহজাহান কোনও পদ পাননি। কিন্তু সূত্রের খবর, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকই শাহজাহানকে নিয়ে এসেছিলেন জোড়াফুলে। তাঁর সাহায্যেই সাংগঠনিক পদ পান শাহজাহান। ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে নুসরত জাহানকে সন্দেশখালিতে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। সংখ্যালঘু ভোট একত্রিত করে নুসরতকে জেতানোর ক্ষেত্রে একটা বড় ভূমিকা ছিল তাঁর। যার পুরস্কার স্বরূপ পঞ্চায়েত ভোটে শেখ শাহজাহানকে প্রার্থী করে তৃণমূল। জিতে জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ হন তিনি। ‘দাপুটে’ ওই তৃণমূল নেতাকে হন্যে হয়ে খুঁজছেন তদন্তকারীরা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.