সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: নারদ কাণ্ডে নয়া মোড়। তৃণমূল বিধায়ক ইকবাল আহমেদকে হাজিরার নির্দেশ দিয়ে নোটিস পাঠাল সিবিআই। প্রসঙ্গত, নারদা কাণ্ডে তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর এই প্রথম কোনও হেভিওয়েট নেতাকে নোটিস পাঠাল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। জানা গিয়েছে, আগামী শনিবারই নিজাম প্যালেসে হাজিরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তাঁকে। সকাল ১১ টায় সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দিতে হবে। প্রসঙ্গত, সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআরে চার নম্বরেই ছিল তৃণমূল বিধায়কের নাম।
সিবিআইয়ের গোয়েন্দাদের সন্দেহ, নারদ কাণ্ডে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ইকবাল আহেমদ। কারণ ইকবাল আহমেদই ম্যাথু স্যামুয়েলসকে তৃণমূল বিধায়ক-সাংসদদের সঙ্গে দেখা করিয়েছিলেন। সিবিআইয়ের দায়ের করা এফআইআরেও সেই কথার উল্লেখ ছিল। গত এক মাস ধরে তদন্তের পরে আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। সেগুলির ভিত্তিতেই জেরা করা হবে ইকবাল আহমেদকে। এর পাশাপাশি সিবিআই সূত্রে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েকটি অডিও ক্লিপিংসও তাঁদের হাতে এসেছে, সেখানেও নাম রয়েছে ইকবাল আহমেদের। তাই ম্যাথু স্যামুয়েলসকে জেরা করার আগে ইকবাল আহমেদকে নোটিস পাঠাল সিবিআই। তৃণমূল বিধায়ককে কী কী প্রশ্ন করা হবে তারও একটি তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি করতে শুরু করেছে সিবিআই। খতিয়ে দেখা হচ্ছে ভিডিও ফুটেজগুলিও। ইকবালের সঙ্গে ম্যাথুর পরিচয় কীভাবে হল? কেন তিনি দলের নেতা-মন্ত্রীদের সঙ্গে ম্যাথুর সাক্ষাৎ করিয়েছিলেন? কেন ম্যাথু তাঁদের টাকা দিয়েছিলেন? জানা যাচ্ছে, এই সমস্ত প্রশ্নই থাকবে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তালিকায়।
প্রসঙ্গত, নারদ কাণ্ডের তদন্তভার হাতে নেওয়ার পর গত এপ্রিল মাসে ১৩ জন অভিযুক্তর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেছিল সিবিআই৷ ফুটেজে যাদের টাকা নিতে দেখা গিয়েছিল, তাদের বিরুদ্ধেই দায়ের করা হয়েছিল এই এফআইআর৷ গোয়েন্দাদের প্রাথমিক অনুমান ছিল, পুরো কাণ্ডে কোথাও না কোথাও অপরাধ ঘটেছে৷ যাঁরা টাকা নিয়েছিলেন, তাঁদের খারাপ কোনও উদ্দেশ্য ছিল বলেই ধারণা গোয়েন্দাদের৷ তার ফলেই মদন মিত্র, সুলতান আহমেদ, ফিরহাদ হাকিম, ইকবাল আহমেদ, সৌগত রায়, প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়, সুব্রত মুখোপাধ্যায়, মুকুল রায়-সহ মোট তেরো জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল৷ দুর্নীতিদমন, ষড়যন্ত্র ও ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে হেভিওয়েট নেতা-মন্ত্রীদের পাশাপাশি অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও দায়ের হয়েছিল এফআইআর৷
যদিও নারদ কাণ্ড নিয়ে গোড়া থেকেই রাজনৈতিক চাপানউতোর আছে৷ একদিকে এই ফুটেজে রাজ্যের শাসকদলের বহু নেতা, মন্ত্রী বিধায়ককে টাকা নিতে দেখা গিয়েছে৷ ফলে শাসকদলের পক্ষে তা বেশ বিড়ম্বনার৷ অন্যদিকে নারদ কর্তা কেন এ অপারেশন করলেন, কে টাকা জোগাল, সে প্রশ্নও তোলা হয়েছিল শাসক দলের পক্ষ থেকে৷ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা ও ষড়যন্ত্রের অভিযোগও তোলা হয়েছিল এই ইস্যুতে৷ বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই স্টিং অপারেশন ঝড় তুলেছিল রাজ্য-রাজনীতিতে৷ শাসকদলের পক্ষে সাফাই দিয়ে বলা হয়েছিল, ঘুষ নয়, নেওয়া হয়েছিল ডোনেশন৷ অন্যদিকে শহরে এসে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নারদ কর্তা জানিয়ে গিয়েছিলেন, কোনও ডোনেশন নয়, ঘুষই দেওয়া হয়েছিল৷ এদিকে ফুটেজ কতটা সত্যি তা নিয়েও ধোঁয়াশা ছিল৷ যদিও ফরেন্সিক পরীক্ষার পর ফুটেজের সত্যতা নিয়ে আর কোনও সংশয় ছিল না৷ যার অর্থ রাজ্যের হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রীরা যে টাকা নিয়েছেন তা নিয়ে কোনও ধন্দ নেই৷ প্রশ্ন হল, কী উদ্দেশ্যে এই টাকা নেওয়া হয়েছিল? সিবিআই গোয়েন্দাদের ধারণা, পুরো ঘটনায় অনেক ধোঁয়াশা এখনও থেকে গিয়েছে৷ যাঁরা টাকা নিয়েছিলেন তাঁরা কেন টাকা নিয়েছিলেন, টাকার বিনিময়ে কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা জানতে চান গোয়েন্দারা৷ পাশাপাশি খতিয়ে দেখতে হবে নারদ কর্তার ভূমিকাও৷ আর তাই সবার আগে ইকবাল আহমেদকে জেরার জন্য নোটিস পাঠাল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.