সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বিডিও কার্যালয় পর্যন্ত পৌঁছতেই পারছে না তথাকথিত যুবর দল। চোখরাঙানিতেই ভয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে তারা। প্রার্থী হবে বলে কথা দিলেও মনোনয়নের আগেই অনেকে ঘরে ঢুকে গিয়েছেন। শাসকদল সন্ত্রাস করছে, প্রার্থী হতে পারব না বলেও অনেকে জানিয়ে দিয়েছেন দলকে। কিন্তু তিনি ভয় পান না। শরীর অসুস্থ। বার্ধক্যও তাঁকে টলাতে পারছে না। ৭৪ বছর বয়সেও তিনি যেন যুবতী। অন্তত মানসিকভাবে। বলেছেন, ‘তোরা প্রার্থী হতে ভয় পাচ্ছিস। ঠিক আছে আমিই প্রার্থী হব। দেখব কে আটকায়।’ শুধু মুখের কথা হয়, দলীয় কর্মীদের চাঙা করতে ভোকাল টনিকও নয়, বৃহস্পতিবার গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন তিনি। পূর্ব বর্ধমানের মেমারি-১ ব্লকের নিমো-১ গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিএম প্রার্থী হয়েছেন তিনি। অকুতোভয় এই ‘তরুণী’ হলেন নমিতা সেনগুপ্ত। বাড়ি ওই পঞ্চায়েতেরই বৈদ্যডাঙা গ্রামে। বয়স ৭৪ বছর। অশক্ত শরীরে সন্ত্রাসকে উপেক্ষা করে তাঁর প্রার্থী হওয়ায় মনোবল ফিরে পেয়েছে ঘরে ঢুকে যাওয়া সিপিএমের অনেক যুব।
রসায়নে স্নাতকোত্তর নমিতাদেবী। এলাকার বৈদ্যডাঙা হাইস্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। অবসর নিয়ে এখন বাড়িতেই থাকেন। বামপন্থী আন্দোলনের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই যুক্ত তিনি। দলের দুর্দিনে দিশা দেখাতে ৭৪ বছর বয়সেও ভোট রাজনীতির লড়াইয়ে নামতে পিছপা হননি তিনি। আর এভাবেই যেন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করছে মেমারির সিপিএম। মেমারির ভূমিপুত্র হরেকৃষ্ণ কোঙার, বিনয়কৃষ্ণ কোঙার। কৃষক আন্দোলনের পুরোধায় ছিলেন তাঁরা। সিপিএমের দুর্গ ছিল এই মেমারি। কথিত আছে, মেমারিতে কোঙার পরিবারই ছিল শেষ কথা। কেউ বলেন ভয়ে। আবার কেউ বলেন শ্রদ্ধায়। সিপিএমের মেমারির দুর্গ ধসে গিয়েছে গত এক দশকে। সর্বত্রই এখন ঘাসফুল। নবীন প্রজন্ম এখন তৃণমূলের দিকে ঢলেছে। সংগঠনকে চাঙ্গা করতে বিনয় কোঙারের স্ত্রী অশীতিপর মহারানি কোঙারকেও দলের জাঠায় দেখা যায়। গত বছর দুর্গাপুজোর পর বামেদের জাঠায় ৮৪ বছরের মহারানি কোঙার অংশ নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, বয়সটা কোনও ফ্যাক্টর নয়, মনের জোরটাই সব। লড়তে গেলে কলিজার জোরটাই প্রয়োজন। এবার যেন সেই বার্তাই দিলেন নমিতাদেবী। মহারানিদেবীর থেকে বছর দশেকের ছোট নমিতাদেবী সিপিএম প্রার্থী হলেন এবার।
বিনয়বাবুর ছেলে অভিজিৎ কোঙার। তিনিও সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য। তিনি বলেন, “শাসকদল মারধর এখনও পর্যন্ত না করলেও বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রার্থী না হওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। মনোনয়ন জমা দিতে গ্রামের বাইরে বেরলেই শাসাচ্ছে। জোর করে বাড়ি ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে। এই অবস্থায় নমিতাদি বলেন, সন্ত্রাসকে ভয় পাই না। আমিই প্রার্থী হব। কে আটকায় দেখি।” মেমারিরই আর এক সিপিএম নেতা সুকান্ত কোঙার নমিতাদেবীর এই সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। নমিতাদেবী জানিয়েছেন, দলের স্বার্থে, শাসকদলের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়তেই প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। তাঁর সাহসিকতায় ভোট বৈতরণি পেরতে সিপিএম কতটা লাভবান হবে সেটা অবশ্য ৮ মে বোঝা যাবে। জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূল নেতা দেবু টুডু বলেন, “প্রার্থী করার লোক খুঁজে পাচ্ছে না সিপিএম। এর বেশি আর কী বলব। উন্নয়নের জোয়ারে সিপিএম ভেসে গিয়েছে। তাই সন্ত্রাসের ভূত দেখছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.