Advertisement
Advertisement
পুরুলিয়া ছাড়ছে নাগাবাহিনী

জঙ্গলমহলে নতুন করে মাওবাদী আতঙ্কের মধ্যেই পুরুলিয়া থেকে সরছে নাগাবাহিনী

জঙ্গলমহলের সীমানা ঘেঁষা এলাকায় এখনও সক্রিয় মাওবাদী নেতা অতুল-শচীনের স্কোয়াড।

Naga jawans, efficient to fight against Maoists will be removed from Purulia
Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:August 17, 2020 3:29 pm
  • Updated:August 17, 2020 3:44 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: একদিকে বেলপাহাড়ি থেকে বান্দোয়ান ছুঁয়ে বরাবাজার। অন্যদিকে বাঘমুন্ডি হয়ে ঝালদা। জঙ্গলমহলের দুই জেলা ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়ার পাঁচ থানা এলাকা লাগোয়া ঝাড়খণ্ড সীমানায় ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে মাওবাদী (Maoist) কার্যকলাপ। স্বাধীনতা দিবসে কালা দিবসের ডাক দিয়ে বেলপাহাড়িতে পড়েছে প্রচুর মাওবাদী পোস্টার। ঝাড়খণ্ড ঘেঁষে থাকা বাংলার এই সীমানায় সক্রিয় মাওবাদীদের চার থেকে পাঁচটি স্কোয়াড। শুধু পোস্টার দিয়ে হুমকি নয়, করোনা পরিস্থিতিতে বনমহলের ঢিলেঢালা নিরাপত্তাকে কাজে লাগিয়ে নতুন ধাঁচে স্কোয়াড সাজানোর চেষ্টাও চলছে। তারই মধ্যে রাজ্য
পুলিশে উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলল একটি খবর। এক দশক ধরে মাওবাদী দমনে পুরুলিয়ায় মোতায়েন থাকা পাহাড়ি যুদ্ধে পটু নাগাবাহিনী সরে যাচ্ছে এই জঙ্গলমহল থেকে।

নাগাল্যান্ডের অস্থিরতায় ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটেলিয়নের (Indian Reserve Battalion) মাও দমনে এই বাহিনী আগামী মাসেই ‘ঘরে’ ফিরে যাবে। এই বাহিনীর ছ’টি শিবিরে থাকা ছ’কোম্পানির জায়গায় আপাতত দু’কোম্পানি সিআরপিএফ দুটি শিবিরের দায়িত্ব নেবে বলে কেন্দ্রীয় বাহিনী সূত্রে জানা গিয়েছে। ফলে বাকি চারটি ক্যাম্পে কোন বাহিনী থাকবে, নাকি সেই শিবির তুলেই দেওয়া হবে, তা এখনও স্পষ্ট নয়। পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার এস. সেলভামুরুগন বলেন, “বাহিনী প্রত্যাহার ও সেই জায়গায় অন্য বাহিনী আসার বিষয়ে এখনও আলোচনা চলছে।”

Advertisement

[আরও পড়ুন: স্বাধীনতা দিবসে মহাত্মা গান্ধীর মূর্তিতে মাল্যদান, মুর্শিদাবাদের স্কুলে ‘তাণ্ডব’ বিজেপির]

সম্প্রতি ঝাড়গ্রামে সিআরপিএফ আইজি’র উপস্থিতিতে এই বাহিনীর স্থান পরিবর্তন বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। ১৪ নম্বর ব্যাটেলিয়নের নাগাল্যান্ড সশস্ত্র পুলিশের পরিবর্তে সিআরপিএফের ১৬৯ নম্বর ব্যাটেলিয়নের জওয়ানরা এখানে আসছে। শিবিরগুলিতে যে পরিকাঠামোর মধ্যে নাগা বাহিনী ছিল, তার থেকে উন্নত পরিকাঠামো গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রায় খোলনলচে বদলে নতুনভাবে তৈরি হচ্ছে শিবিরের সেন্ট্রি পোস্টও।

Naga-Jawans-1

এদিকে, বান্দোয়ান ছুঁয়ে থাকা দলমা রেঞ্জের পূর্ব সিংভূমের গালুডি, ঘাটশিলা, পটমদা, এমজিএম থানার বিস্তীর্ণ এলাকায় ঘুরছে অতুল মাহাতোর স্কোয়াড। এই স্কোয়াডে রয়েছে বীরেনের মত যোদ্ধা। বান্দোয়ানের পাশের থানা বরাবাজার লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে সরাইকেলা-খরসোঁওয়া জেলার বড়াম-নিমডি থানা এলাকায় সম্প্রতি দেখা গিয়েছে মাওবাদী নেতা শচীন মান্ডির স্কোয়াডকে। এই স্কোয়াডে মদন মাহাতোর মত যোদ্ধারাও রয়েছেন বলে গোয়ান্দারা জানিয়েছেন। অতুল, মদন – এই দুই কমান্ডারই এখন সিপিআই (মাওবাদী) রাজ্য কমিটির সদস্য। তবে সম্পাদক আকাশ ওরফে অসীম মণ্ডলের কোন গতিবিধিই জানতে পারছে না পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড পুলিশ-সহ কেন্দ্রীয় বাহিনী। ফলে চাপ বাড়ছে এই দুই রাজ্য পুলিশেই।

তবে সিআরপিএফ সূত্রে খবর, বর্তমানে এই এলাকার মাও সামরিক বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন অনলদা ওরফে পতিরাম মাঝি। তাঁর কমান্ডেই ওই চার-পাঁচটি স্কোয়াড কাজ করছে। বাঘমুন্ডির পাশে সরাইকেলা-খরসোঁওয়া ও
খুঁটি জেলা এলাকায় রয়েছে মহারাজ প্রামানিকের স্কোয়াড। ঝালদার সীমানায় ঝাড়খণ্ডের বোকারো জেলার জরিডি-কাশমার এলাকাকে কার্যত মুক্তাঞ্চল বানিয়ে ফেলেছে মাও কমান্ডার লালচাঁদ হেমব্রমের নেতৃত্বে থাকা সন্তোষ মাহাতোর স্কোয়াড। এই মাও কমান্ডার ঝাড়খন্ড স্টেট এরিয়া কমিটির সদস্য। এই এলাকা এখন মাওবাদীদের ‘সেফ শেলটার’ হয়ে গিয়েছে। কারণ,
বোকারো ছাড়া পুরুলিয়ার এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কেন্দ্রীয় বাহিনীর কোন শিবিরই নেই। আর তাতেই উদ্বিগ্ন রাজ্য পুলিশ। সেইসঙ্গে নাগা বাহিনীর ছ’কোম্পানির পরিবর্তে দু’কোম্পানি সিআরপিএফে তাদের AOR (এরিয়া অফ রেসপনসিবিলিটি) বেড়ে গেলে চাপ বাড়বে। ফলে ঝাড়খণ্ড ছুঁয়ে থাকা এই বিস্তীর্ণ অঞ্চলকে সামাল দেওয়া মুশকিল হয়ে যাবে।

[আরও পড়ুন: বিশ্বভারতীতে তুলকালাম, পৌষ মেলার মাঠের পাঁচিল ও দরজা ভাঙল স্থানীয়রাই]

কেন্দ্রীয় বাহিনী সূত্রে খবর, তাদেরকে আপাতত কোটশিলার মুরগুমা ও বলরামপুরের কুমারীকাননে মোতায়েন করা হবে। ফলে এই নতুন বাহিনীকে পাহাড়ের দুর্গম জঙ্গল এলাকা-সহ অতীতের মাও কার্যকলাপ জানাতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে রাজ্য পুলিশ। সেইসঙ্গে বনমহল জুড়ে চলছে যৌথ বাহিনীর তল্লাশি।

ছবি: অমিত সিং দেও।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement