বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তির জেরে নিজের ১৩ মাসের দুধের সন্তানকে নিয়ে পগারপার বাবা। টানা পাঁচ দিন ধরে সন্তানকে নিয়ে নিখোঁজ থাকার পর অবশেষে ধরা পড়ে গেলেন। রাস্তায় এক প্রতিবেশী তাঁকে সন্তান-সহ দেখতে পান। এরপরেই শুরু হয় চিৎকার-চেঁচামেচি। ভয়ে রাস্তার ওপরেই সন্তানকে রেখেই তিনি নিজের প্রাণ বাঁচাতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। যদিও শেষ পর্যন্ত স্থানীয় লোকজন তাঁকে দৌড়ে গিয়ে পাকড়াও করেন। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে যায় পুলিশ। সন্তানের বাবাকে আটক করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে পুলিশ। উদ্ধার হওয়া ওই সন্তানকে তুলে দেওয়া হয়েছে তাঁর মায়ের হাতে। চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়া চাকদহ থানা এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, বাবলু বিশ্বাস নামে ওই ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জানার চেষ্টা চালানো হচ্ছে, তিনি তাঁর বাচ্চাকে কেন, কোথায় নিয়ে গিয়েছিলেন। বাবলু বিশ্বাসের আসল বাড়ি চাকদহের নরেন্দ্রপল্লি এলাকায়। যদিও বিগত ১৫ বছর ধরে চাকদহের কাঁঠালপুলি মিস্ত্রিপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি। পেশায় তিনি পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি মুম্বইয়ে কাঠের কাজ করতেন। লকডাউনের কয়েকদিন আগে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। প্রতিবেশীদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বাড়িতে ফিরে আসার কয়েকদিন পর থেকেই তাঁর পরিবারের আর্থিক অনটন শুরু হয়। তা নিয়ে মাঝেমধ্যেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে অশান্তিও চলছিল। যদিও সাংসারিক আর্থিক অনটন মেটাতে তিনি মাসখানেক হল মাছের ব্যবসা শুরু করেছিলেনl অভিযোগ, বাড়িতে ঠিকমতো সংসার চালানোর টাকাপয়সাও দিতেন না। মূলত সেই কারণে অশান্তি চরম আকার নিয়েছিল।
পুলিশের কাছে বাবলু বিশ্বাসের স্ত্রী মমতা বিশ্বাস অভিযোগ করেছেন, গত মঙ্গলবার তাঁদের মধ্যে চরম অশান্তি হয়। তাঁকে মারধর করেন তার স্বামী। এরপরেই তাঁর ১৩ মাসের দুধের শিশুকে কোলে তুলে নিয়ে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান তাঁর স্বামী। তিনি সম্ভাব্য চারিদিকে খোঁজখবর করেন। কোথাও সন্তানের হদিশ না পেয়ে চাকদহ থানাতে নিখোঁজ ডায়েরি করেছিলেন। সম্ভবত কোন অসৎ উদ্দেশ্যে স্বামী তাঁর সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন বলে মমতা পুলিশের কাছে জানিয়েছেন। যদিও স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেই নিখোঁজ ডায়েরি অনুযায়ী পুলিশ ১৩ মাসের দুধের শিশুকে উদ্ধার করার জন্য চেষ্টা চালায়নি। বাধ্য হয়েই মমতা বিশ্বাস রানাঘাট পুলিশ সুপার-সহ চাইল্ড প্রটেকশন অফিসার এবং চাইল্ড লাইনের দ্বারস্থ হয়েছিলেন।
এরপরে কিছুটা নড়েচড়ে বসে পুলিশ। অবশ্য সোমবার বিকেলে চাকদহ থানার শিমুরালির মনসাপোতা এলাকায় ভাগ্যক্রমে ওই এলাকার একজন প্রতিবেশী গাড়িচালক গাড়ি নিয়ে ফেরার সময় বাবলু বিশ্বাসকে তাঁর সন্তান ঋষভকে নিয়ে রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখেন। তিনি চিৎকার চেঁচামেচি জুড়ে দেন। এর পরেই নিজের প্রাণের ভয়ে সন্তানকে রাস্তার ওপরে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন বাবলু বিশ্বাস। রানাঘাট পুলিশ জেলার সুপার ভি এসআর অনন্তনাগ জানিয়েছেন, ‘অভিযুক্ত বাবলু বিশ্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। কী কারণে তিনি তার সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন, তা জানার চেষ্টা করছে পুলিশ। শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা করানো হয়েছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.