পলাশ পাত্র, তেহট্ট: পড়ুয়াদের মূল্যবোধ শেখাতে অগ্নিযুগের বিপ্লবীর জীবন অবলম্বনে তৈরি তথ্যচিত্রের প্রদর্শন। বিদ্যাসাগরের অনুদানে গড়ে ওঠা মুড়াগাছা উচ্চবিদ্যালয়ের সার্ধ শতবর্ষ উদযাপনে দেখানো হবে সেই তথ্যচিত্র। যা তৈরি হয়েছে শহিদ বসন্ত বিশ্বাসের জীবন অবলম্বনে। তথ্যচিত্রের নাম ‘বহ্নি বালক বসন্ত’। ১৮৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত মুড়াগাছা উচ্চ বিদ্যালয় সার্ধ শতবর্ষের দরজা পেরিয়ে এল। ২০১৭ থেকেই সেই উপলক্ষে নদিয়ার তেহট্টের এই স্কুলটিতে চলছে উদযাপনের পালা। আগামী শুক্রবারেই সার্ধ শতবর্ষ উপলক্ষে বছরভর উদযাপন শেষ হচ্ছে। স্কুলের প্রথম দিককার ছাত্র বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাসের আত্মত্যাগের কাহিনী অবলম্বনে তৈরি চিত্রনাট্যের প্রদর্শন দিয়েই অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা হবে।
উল্লেখ্য, শংকর মজুমদারের পরিচালনায় তৈরি তথ্যচিত্রটি এর আগে কলকাতার বেশ কয়েক জায়গায় প্রদর্শতি হয়েছে। চিত্রনাট্য তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন রাজ্যের কারামন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস। স্থানীয় জমিদার জগৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের বদান্যতায় ব্রিটিশ আমলে মুড়াগাছা উচ্চবিদ্যালয়টি তৈরি হয়। এখানকারই ছাত্র ছিলেন অগ্নিযুগের বিপ্লবী বসন্ত বিশ্বাস। সেসময় স্কুলের প্রধান শিক্ষক ক্ষীরোদ গঙ্গোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিপ্লবী অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের বন্ধুত্ব ছিল। অমরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মাধ্যমে বিপ্লবী রাসবিহারী বসুর সঙ্গে কিশোর বসন্তের যোগাযোগ হয়। ১৯১২-র ২৩ ডিসেম্বর ব্রিটিশ শাসনে বড়লাট লর্ড হায়ার্ডিঞ্জের উপর বোমা নিক্ষেপ করেন বসন্ত। বিচারে ১৯১৫-র ১১ মে বসন্তের ফাঁসি হয়। তাই স্কুলের সার্ধ শতবর্ষে সেই বিপ্লবী ছাত্রের জীবন অবলম্বনে তৈরি ছবিই দেখানো হবে। এই প্রসঙ্গে স্কুলের শিক্ষক সুব্রত ঘোষ বলেন, পড়ুয়ারা যাতে বেশি করে অগ্নিযুগের বিপ্লবীদের আত্মত্যাগ ও নি:স্বার্থ কাজের ভাবনায় উদ্দীপ্ত হতে পারে। সেদিকে তাকিয়েই এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনের আয়োজন।
ফিরে আসি মুড়াগাছা উচ্চবিদ্যালয়ের প্রসঙ্গে। বলা বাহুল্য, মুড়াগাছা, বিল্বগ্রাম-সহ নদিয়ার বিস্তীর্ণ এলাকায় সেইসময়কার গুণীজনদের বিশেষ যাতায়াত ছিল। বিল্বগ্রামে থাকতেন পণ্ডিত মদনমোহন তর্কালঙ্কার। সেখানেই আসতেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। ১৮৫৫-র ১ মে বিদ্যাসাগর সংস্কৃত কলেজের অধ্যক্ষের পদে বসার পাশাপাশি দক্ষিণবঙ্গের সহকারী স্কুল ইন্সপেক্টরও নিযুক্ত হন। তাঁর উপরে ছিল দক্ষিণবঙ্গের বিদ্যালয়গুলির ভার। এরপরে তিনি দক্ষিণবঙ্গের স্পেশ্যাল স্কুল ইন্সপেক্টর হন। সে সময় নদিয়াতে আসা যাওয়াতে মুড়াগাছার স্থানীয় জমিদার জগৎচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। ১৮৬০ সালে মুড়াগাছায় নিজের বাসভবনে জগৎচন্দ্র ইংরেজি বিদ্যালয় চালু করেছিলেন। সেই বিদ্যালয় দেখে খুশি হন বিদ্যাসাগর। সঙ্গেসঙ্গে তিনি বিদ্যালয়ের তহবিলে আর্থিক সাহায্য করেন। একই সঙ্গে জগৎচন্দ্রকে আলাদা বিদ্যালয় গড়ার পরামর্শ দেন। বিদ্যাসাগরের পরামর্শে নাকাশীপাড়া ব্লকের মুড়াগাছায় ১৮৬৮-তে প্রায় দশ বিঘা জমির উপরে মুড়াগাছা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ওই জমিদার। তখন বিদ্যালয়টি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ছিল। বহু বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এখানে পড়াশোনা করেছেন। পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ড: বিধানচন্দ্র রায়ের আগ্রহ ও সহযোগিতায় স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক হয়েছিলেন শিক্ষাবিদ নীলাদ্রি মুখোপাধ্যায়। তিনি পাঁচের দশকে এই বিদ্যালয়কে বহুমুখী উচ্চতর বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করেছিলেন। নদিয়া জেলায় প্রথম কারিগরি শিক্ষার জন্য এই বিদ্যালয়ে কর্মশালাও চালু হয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.