রমণী বিশ্বাস, তেহট্ট: ফেসবুক লাইভ করতে করতেই ভয়াবহ কাণ্ড ঘটালেন এক যুবক। ঘরের দরজা আটকে পেট্রল ছড়িয়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন তিনি। আগুন লাগানোর আগে ঘরের মধ্যে ফেসবুক লাইভে পরিবারের সকলের উদ্দেশে তাঁকে বলতে শোনা যায়, ”সব কিছু তোমাদের থাকল, শুধু আমি থাকলাম না। এবার যা কিছু সমস্তই তোমরাই ভোগ করো।” এই বলে ফেসবুক লাইভ (FB Live) বন্ধ করে দেয়। তার পরই আত্মহত্যা করেন উত্তম বিশ্বাস নামে বছর ৩৯-এর যুবক। সোমবার সকালে নদিয়ার (Nadia) মুরুটিয়া থানা এলাকার কাগজিপাড়া গ্রামের ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল।
জানা যাচ্ছে, জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিবাদকে কেন্দ্র করে ফেসবুক লাইভ করতে করতে ঘরের ভিতর থেকে দরজা আটকে সারা ঘরে বেশ কয়েক লিটার পেট্রোল ছড়িয়ে, গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ কেটে আগুন লাগিয়ে দেন উত্তম বিশ্বাস। স্থানীয় ও পরিবার সূত্রে জানা যায়, জমি-জায়গা সংক্রান্ত বিষয়ে একটি পারিবারিক অশান্তি চলছিল। মঙ্গলবার তিনটে কালী প্রতিমা দিয়ে মানতের পূজা ছিল। সেই উপলক্ষে উত্তমের বাবা-মা সহ পরিবার সকলে সোমবার সকালে গঙ্গাস্নান করতে বেরিয়ে যান। এই সময় ফাঁকা বাড়িতে ঘরের মধ্যে ভিতর থেকে খিল দিয়ে সারা ঘরে পেট্রল ছড়িয়ে এবং গ্যাস সিলিন্ডারের পাইপ কেটে দিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয়, নিমেষের মধ্যে টিনের চালা চাটাইয়ের বেড়া দেওয়া ঘরে আগুন ছড়িয়ে পড়ে কিছু সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আগুনের তীব্রতা এতটাই ছিল যে বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। নিমেষের মধ্যে ঘর-সহ উত্তমের দেহ সম্পূর্ণ পুড়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী উত্তমের ভাইয়ের স্ত্রী ভারতী বিশ্বাস জানান, ”আমরা পৃথক। আমি সকালে রান্না করছিলাম, বাড়িতে কেউ ছিল না, আগামিকাল মঙ্গলবার বাড়িতে মানতের তিনটি প্রতিমা দিয়ে কালী পূজা থাকায় শ্বশুর-শাশুড়ি সব গঙ্গাস্নান করতে যায়, এই সময় বাড়ির সম্পূর্ণ ফাঁকাই ছিল। ভাসুর সকালে ঘুম থেকে উঠে টোটো গাড়িটি বার করে ঘরের পাশে রাখে, কিছু সময়ের জন্য বাইরে যায়, ফিরে এসে ঘরে ঢোকে। ঘরে ঢোকার কিছু সময় পরে জোরে একটি শব্দ হয়। বাইরে বেরিয়ে দেখি, ঘরের মধ্যে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে, ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ থাকায় অনেক চেষ্টা করেও ভিতরে ঢোকা সম্ভব হয়নি। আমার চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। কিন্তু সেখানে দাঁড়িয়ে দেখা ছাড়া কোনও উপায় ছিল না। ক্ষণিকের মধ্যে সেই আগুন সারা ঘরে ছড়িয়ে পড়ে, টিনের তালা দেওয়া কাঁচা ঘর হওয়ার নিমেষের মধ্যে ঘরটি পুড়ে ছাই হয়ে যায়।”
উত্তমের মা বিনতা বিশ্বাস বলেন, ”ছেলে অনেকদিন দেশের বাইরে কাজ করেছে। দুই মাস আগে বাড়িতে এসেছে। তার পর একটি টুকটুকি কিনে চালাতো। আমাদের নামে যেটুকু জমি আছে, সেটা দাবি করতে থাকে। আমি বলি, তুই একা নিলে কী করে হবে? তোর দুই ভাই, আরো দুই বোন রয়েছে, তারাও তো পাবে। কিন্তু ছেলে কোনও কথা বুঝতে চাইত না। মাঝেমধ্যে এই নিয়ে কথা কাটাকাটি হত। আজ আমরা গঙ্গা স্নান করতে বেরিয়ে গেলে ফাঁকা বাড়িতে ঘরের মধ্যে এই কাজ করেছে।” বাবার কথায়, ”ও শুধু জমি জায়গার দাবি করত। বাড়িতে পুজো থাকায় আমি বলেছিলাম, পুজোটা শেষ হোক, তার পর সকলে মিলে বসে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে। সে কথা ছেলে বুঝল না। নিজে নিজেই সব শেষ করে দিল।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.