বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: মোবাইল ফোনের সূত্র ধরে দাম্পত্য কলহ। নদিয়ায় স্বামীকে খুন করে আত্মঘাতী গৃহবধূ। অভিযোগ, খুনের পর স্বামীকে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন ওই গৃহবধূ। পরে প্রতিবেশীরা জানতে পারলে অনুশোচনায় নিজেও গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হন। মৃত দম্পতির নাম মিঠুন মণ্ডল (৩৫) ও সাধনা মণ্ডল (৩১)। তাঁদের বছর এগারোর এক পুত্র সন্তানও রয়েছে। তাঁর নাম মঙ্গল। সাধনাদেবীর মোবাইলে কার ফোন এসেছিল তা জানতে তদন্তে নেমেছে পুলিশ। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে।
জানা গিয়েছে, মাংস বিক্রেতা মিঠুনবাবু ১১ বছর আগে সাধনাদেবীকে বিয়ে করেন। বেশ কিছুদিন ধরে কোনও কাজ করছিলেন না তিনি। এনিয়ে সংসারে অশান্তি লেগেই থাকতো। ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সাধনাদেবী নিজেই কাজ খুঁজে নেন। মহিলা সমিতির টাকা তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকে। এই সূত্রে বিভিন্ন লোকজনের সঙ্গে কথা বলতে হত। স্ত্রীর এই ফোনে আলাপপর্ব মেনে নিতে পারেননি মিঠুনবাবু। এনিয়েই অশান্তির সূত্রপাত। অভিযোগ, মাঝেমাঝেই মদ্যপান করে বাড়ি ফিরে ফোনের প্রসঙ্গ তুলে স্ত্রীর সঙ্গে অশান্তি শুরু করতেন ওই যুবক। তেমনই অশান্তি বেধেছিল মঙ্গলবার রাতে। তবে এদিনের অশান্তি খুব শিগগির হাতাহাতিতে বদলে যায়। দাম্পত্য কলহের মধ্যেই ফের সাধনাদেবীর ফোন বেজে উঠলে আগুনে ঘি পড়ে। রাগের বশে পরস্পর পরস্পরের গায়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টাও করেন। ঘটনার সময় ছেলে মঙ্গল পিসির বাড়িতে ছিল। তাই বাধা দেওয়ার কেউ ছিল না। এদিকে পোড়া গন্ধ পেয়ে প্রতিবেশীরাই দু’জনকে নিরস্ত করেন। বলা বাহুল্য, এরপরে গোটা বাড়িতে অপার নিস্তব্ধতা নেমে এলে বাসিন্দাদের সন্দেহ হয়। কৌতূহলের বশে ফের মণ্ডল বাড়িতে এসে তাঁরা দেখেন বাড়ির বাইরের এক ছোট ঘরের চালে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন মিঠুনবাবু। আশপাশে কোথাও সাধনাদেবীকে দেখতে না পেয়ে সঙ্গেসঙ্গেই বন্ধ দরজায় ধাক্কা দেওয়া হয়। ঘরের মধ্যে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন ওই গৃহবধূ। প্রতিবেশীদের চেঁচামেচিতে বাইরে বেরিয়ে আসেন। স্বামীর আত্মঘাতী হওয়ার খবর পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ফের ঘরে ঢুকে যান। এরমধ্যে মিঠুনবাবুর বোনের বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ওই দম্পতি মঙ্গলকে নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। এদিকে দীর্ঘক্ষণ ঘরের বাইরে আসেননি সাধনাদেবী। পুলিশেও খবর দেওয়া হয়েছে। শেষপর্যন্ত দরজা ভেঙে দেখা যায়, ঘরে সিলিংফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন সাধনা মণ্ডল। ঘরে ও বাইরে বাবা-মায়ের ঝুলন্ত দেহ দেখে আতঙ্কিত নাবালক ছেলে।
পুলিশ দেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, স্বামী জামা কাপড়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনটি পুড়িয়ে দিতেই রেগে যান সাধনাদেবী। রাগের বশেই স্বামী খুন করেন ওই গৃহবধূ। পড়ে অনুশোচনায় নিজে আত্মঘাতী হন। তবে খুনের কোনও নির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ এখনও পুলিশের হাতে আসেনি। গোটা ঘটনা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। তদন্ত শুরু হয়েছে। সামান্য ঝগড়া ও সন্দেহের জেরে দম্পতির এহেন মর্মান্তিক পরিণতিতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.