বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: কন্যাসন্তান মানেই অবহেলার পাত্রী নয়। বরং মেয়ে হল লক্ষ্মী (Lakshmi Puja)। পাড়াপড়শি-সহ সমাজকে এই বার্তা দিতে মাটির প্রতিমার বদলে নিজেদের মেয়েকেই চিন্ময়ী লক্ষ্মীরূপে পুজো করে নজির গড়লেন কৃষ্ণগঞ্জের বিশ্বাস দম্পতি।
স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অফিসার। মঙ্গলবার সন্ধেয় নদিয়ার (Nadia) কৃষ্ণগঞ্জের শ্যামনগর গ্রামের বিশ্বাস বাড়িতে এই অভিনব লক্ষ্মী আরাধনার সাক্ষী হতে ভিড় ভেঙে পড়ে। বিশ্বাস বাড়ির ছেলে দেবাশিস ও তাঁর স্ত্রী মিতালির একমাত্র কন্যা দেবাদৃতা প্রতিমার আসনে আসীন। দশ বছরের মেয়েটির পরনে লাল শাড়ি, মাথায় মুকুট। পদ্ম, কলসি, বরাভয়মুদ্রায় গেরস্তবাড়ির আটপৌরে কন্যাই যেন জীবন্ত লক্ষ্মী।
শাস্ত্র মেনে যথাবিহিত মন্ত্রপাঠ করে দেবীজ্ঞানে ওই মানবকন্যাকে পুজো করে পুরোহিত শ্যামল মুখোপাধ্যায়ও আপ্লুত। “অভাবনীয়। সত্যি, মেয়েরা তো মায়েরই জাত। তাই এখানে কুমারী মেয়েকে লক্ষ্মীরূপে পুজো করলাম, সম্পূর্ণ শাস্ত্রমতে”-প্রতিক্রিয়া শ্যামলবাবুর।
‘জীবন্ত লক্ষ্মী’র মা মিতালি বনগাঁ গ্রাম পঞ্চায়েতে এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট পদে কর্মরতা। বাবা দেবাশিসবাবু হিজুলি-২ গ্রাম পঞ্চায়েতের এগজিকিউটিভ অ্যাসিস্ট্যান্ট। ওঁদের পুত্র দেবাপ্রিয়ান, কন্যা দেবাদৃতা ছাড়াও বাড়িতে রয়েছেন দেবাশিসবাবুর বাবা অমল বিশ্বাস ও মা চম্পাদেবী। দেবাদৃতাকে লক্ষ্মীর আসনে বসিয়ে পুজো করার ব্যাপারে পরিবারের প্রত্যেকের সায় রয়েছে।
কেন এমন করলেন? পরিবারের সদস্যদের কথায়, দেবাদৃতা গর্ভে থাকাকালীনই সংসারে উন্নতি শুরু হয়। আর দেবাশিসবাবুর ব্যাখ্যা, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে কন্যাসন্তানের প্রতি অবহেলা ও বৈষম্যমূলক আচরণ দেখা যাচ্ছে। তারই নিরিখে এটা তাঁদের একটা বার্তা। “আমরা মুখে বলি, বাড়ির মেয়ে আর বউ একই, বউও তো মেয়ে! অথচ হামেশাই দেখি, অন্যের মেয়েকে বাড়ির বউ করে এনে তাঁর উপর অত্যাচার চলছে, তাই ঠিক করলাম, নিজের মেয়েকেই লক্ষ্মীরূপে পুজো করব। দেখেও যদি কারও হুঁশ ফেরে।”
মিতালির কথায়, “মেয়েরা সমাজের বড় সম্পদ। আমার মেয়ে হওয়ার পর আমাদের সংসারের উন্নতি হয়েছে। তাই আমরা স্বামী-স্ত্রী মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম, এ বছর মাটির প্রতিমা বাদ দিয়ে নিজের মেয়েকেই লক্ষ্মীরূপে পুজো করব। আমরা চাই, প্রতিটি মানুষ যেন নিজেদের কন্যাসন্তানকে মাতৃরূপে সম্মান করেন।”
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.