পলাশ পাত্র, তেহট্ট: আর্থিক ও দৈহিক প্রতিবন্ধকতা নদিয়ার তিন কৃতি সন্তানের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের ফলাফলে বাধা হল না। এই তিন জন হল কালীগঞ্জ থানার পানিঘাটার দুই দাদা-ভাই রঞ্জন মণ্ডল, ঋজু মণ্ডল ও নাকাশিপাড়া থানার বাঘবিল্ব গ্রামের লিপিকা মন্ডল।
এদের মধ্যে কেউ শিক্ষক, কেউ গবেষক ও গায়িকা হওয়ার স্বপ্নে মশগুল। জনমজুরের ছেলে রঞ্জন অভাবের জন্য জোগাড়ের কাজ করে উচ্চ মাধ্যমিকে ৩৭৯ নম্বর পেয়েছে। ভাই ঋজু মাধ্যমিকে পেয়েছে ৫৯৪। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করা অন্ধ লিপিকা মণ্ডল পড়ে রাইটার নিয়ে পরীক্ষা দিয়ে মাধ্যমিকে ৩৬৮ নম্বর পেয়েছে। লিপিকার বাবা ইদ্রিশ অন্ধ, অসুস্থ। দিদি বান্টিও অন্ধ। মা সাহিন বিবি গ্রামে সেলাইয়ের কাজ করে। অল্প জমি ও সাহিন বিবির উপার্জনে সংসারটা চলে। এর মাঝে অন্ধ দুই মেয়ের পড়াশোনা চালায় সাহিন। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ব্রেইল পদ্ধতিতে কৃষ্ণনগর হেলেন কেলার থেকে পড়াশোনা করে লিপিকা। এদিকে এই পদ্ধতি না থাকায় বাধ্য হয়ে হেলেন কেলারের হস্টেলে থেকে ব্রেইলের সাহায্যে পড়াশোনা চালিয়ে যায়। একইসঙ্গে রেগুলার কোর্সে কৃষ্ণনগর মৃণালিনী স্কুল থেকে রাইটার নিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়।
[ আকাঙ্ক্ষায় সভাধিপতির ‘হট সিট’, বায়োডেটা জমা দিলেন তৃণমূলের জয়ী ২৬ সদস্যই ]
লিপিকা যখন পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে তখনও সে এক চোখে অল্প দেখতে পেত। কিন্তু কর্নিয়ার অপারেশন হয়। তাতে দু’টি চোখই অন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে স্রেফ ইচ্ছাশক্তিকে ভর করে লিপিকা এগিয়ে চলেছে। লিপিকা ছোট থেকে ভাল নজরুল গীতি গান করে। এ প্রসঙ্গে লিপিকা বলে, ‘আমি গায়িকা হতে চাই। নজরুলগীতিই গাইব।’ মা সাহিন বলেন, “ওকে বড় করার জন্য আমি কষ্ট করতে রাজি।” মৃণালিনী স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মনীষা রায় বলেন, “ও যেভাবে পড়াশোনা করছে তাতে প্রশংসা করতেই হয়। এগিয়ে চলুক এই আশা করি।”
[ রেললাইনে উদ্ধার কিশোর-কিশোরীর ছিন্নভিন্ন দেহ, চাঞ্চল্য হুগলির কামারকুণ্ডুতে ]
কালীগঞ্জ থানার পানিঘাটার জনমজুর গৌরাঙ্গ মণ্ডলের ছেলে রঞ্জন অভাবের কারণে জোগাড়ের কাজ করে। পড়াশোনা চালিয়ে যেতেই এই কাজ সে বেছে নিয়েছে। উচ্চমাধ্যমিকে আর্টসে তার প্রাপ্ত নম্বর ৩৭৯। বাংলায় ৭০, ইংরেজিতে ৭২, ভূগোলে ৮৬, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৭৮, সংস্কৃতে ৭৩। রঞ্জন বলে, ‘আমি বড় হয়ে শিক্ষক হতে চাই। পড়াশোনার খরচ চালিয়ে যেতে জোগাড়ের কাজ করি। আমি শিক্ষক হলে গ্রামে দুঃস্থ পড়ুয়াদের এ রকম প্রতিবন্ধকতা যাতে না হয় তা আমি দেখব।’ রঞ্জনের মতো কালীগঞ্জের ইউডিএম থেকে এবছর মাধ্যমিক দেওয়া তার ভাই ঋজু যথেষ্ট ভাল ফল করেছে। স্কুলে বরাবর প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকা ঋজুর প্রাপ্ত নম্বর ৫৯৪। সে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চায়। আগামিদিনে বিজ্ঞান বিষয়ক কিছু নিয়ে গবেষণা করতে চায়। জানিয়েছে ঋজু। সে বলেছে, “আমি রামকৃষ্ণ মিশনে পড়তে চাই। কিন্তু জানি না কী হবে।” মা ও বাবা বলেন, “আমরা সব সময় ওদের জন্য কষ্ট করছি। ঠাকুর যে একদিন মুখ তুলে তাকাবেই তা জানি। স্কুলের শিক্ষক কার্তিক রায় বলেন, ওরা দুই ভাই স্কুলের গর্ব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.