বিপ্লব দত্ত, কৃষ্ণনগর: ভোটের আগেই অনুমান করা গিয়েছিল। এবার ভোটপর্ব মিটতেই বেরিয়ে এল আসল ঘটনা। সিপিএম, কংগ্রেস ও বিক্ষুব্ধ তৃণমূল মিলিয়ে প্রায় হাজার কর্মী সরাসরি যোগ দিলেন বিজেপিতে। রবিবার ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার শান্তিপুরের আরবানদি এলাকায়। এদিন বাম-কংগ্রেসের জোট প্রার্থী আলাউদ্দিন শেখ প্রায় এক হাজার কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপিতে যোগ দেন। জেলার দক্ষিণের বিজেপি সভাপতি জগন্নাথ সরকারের নেতৃ্ত্বে সম্পন্ন হয় যোগদান পর্ব। নতুন কর্মী সমর্থকদের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন জগন্নাথ সরকার। উল্লেখ্য, ভোটের আগেই নিচুতলায় কংগ্রেস-সিপিএমের তথাকথিত জোট নিয়ে তেমন কোনও রাখঢাক ব্যাপার ছিল না। এলাকার সব রাজনৈতিক দলের কাছেই এই জোটের চিত্র স্পষ্ট ছিল। এমনটাই জানা যাচ্ছে। এই প্রসঙ্গে জগন্নাথ সরকার বলেন, আলাউদ্দিন শেখের নেতৃত্বে সিপিএম, কংগ্রেস, বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের প্রায় এক হাজার কর্মী বিজেপিতে যোগ দিলেন। এখন বিজেপিতে আসার জন্য অনেকেই যোগাযোগ করছেন।
জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত ভোটে জোটের প্রসঙ্গ স্বীকার করে নিয়েছিলেন স্থানীয় সিপিএম ও কংগ্রেস নেতৃত্ব। তবে বিজেপির সঙ্গে অলিখিত জোটের কথা স্বীকার করেননি নদিয়ার বাম নেতৃত্ব। ফল প্রকাশের পর যদিও সিপিএমের সঙ্গে জোট হয়েছে মেনে নিয়েছেন বিজেপি নেতারা। তবে এই একই প্রসঙ্গে সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেছিলেন, বিস্তারিত পর্যালোচনা করে দেখছি। তবে ভোটের ফল প্রকাশ হতেই জোট নিয়ে সংশয় দূর হয়েছে। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শান্তিপুরের আরবানদি-দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম-কংগ্রেস জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন আলাউদ্দিন শেখ। ছিল না বিজেপি প্রার্থী। ফল প্রকাশের পর তৃণমূল প্রার্থীর কাছে হেরে যান আলাউদ্দিন শেখ। যার জেরে মানুষের ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। এবার আর রেখেঢেকে নয়, একেবারে প্রকাশ্যেই অনুগামীদের নিয়ে বিজেপিতে যোগ দিলেন তিনি।
এদিকে ভোটের আগে নদিয়া জেলা পরিষদ দখলের ব্যাপারে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি। দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন, ‘আমরা এবার নদিয়ার জেলা পরিষদ দখল করবই। প্রমাণ দেখিয়ে দেব, দেবই।’ তবে আত্মবিশ্বাস অনুযায়ী ফল না করলেও জেলায় দ্বিতীয় স্থানটি দখল করেছে বিজেপি। অন্যদিকে জেলা পরিষদে তৃণমূল এবার দ্বিগুণ জয় পেয়েছে। সরকারি হিসাব বলছে, ১৮টি পঞ্চায়েত সমিতির ৫৪১ আসনের মধ্যে ৮০টি আগেই জিতেছিল তৃণমূল। বাকি ৪৬১ আসনের মধ্যে ভোট হয়নি করিমপুরের একটি আসনে। বাকি ৪৬০টি আসনের মধ্যে তৃণমূল ৩৭০, বিজেপি ৬৫, সিপিএম ১৪টি অন্য দলগুলি বাকি আসন পেয়েছে। গ্রাম পঞ্চায়েতের মোট তিন হাজার ২০৯টি আসনের মধ্যে ৫১৯ আসনে আগেই জিতেছিল তৃণমূল। বাকি ২৬৯০টি আসনের মধ্যে ভোট হয়নি দুটি আসনে। এক্ষেত্রে তৃণমূল একাই পেল ১৬৩৮ আসন, বিজেপি ৬৪৮টি, সিপিএম ১৭৭টি, কংগ্রেস ৬০টি। যদিও তৃণমূলের দাবি, ১৮৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে ১২২টি পঞ্চায়েত পেয়েছে। বিরোধীরা ২৪টি, ত্রিশঙ্কু হয়েছে ৩৯ টি পঞ্চায়েতে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশংকর দত্ত বলেছেন, ‘গতবার আমরা ২৫টি জেলা পরিষদ আসন ও ন’টি গ্রাম পঞ্চায়েত পেয়েছিলাম। এবার প্রায় দ্বিগুণ আসনে জিতেছি। ‘ বিজেপির দুটি আসন পাওয়া নিয়ে বললেন, ‘এটাই তো গণতন্ত্র । ‘ এই রকম জয়ের মধ্যেই হেরে গিয়েছেন জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি সারথী বিশ্বাস। তাঁকে হারিয়েছেন বিজেপির হিরন্ময়ী সরকার। গোষ্ঠী কোন্দলের জেরে তিনি হেরেছেন বলে অভিযোগ সারথীদেবীর। নাকাশিপাড়া থেকে জিতেছেন বিজেপির জেলা পরিষদের প্রার্থী দেবস্মিতা চক্রবর্তী। তিনি জানান, হিন্দু মুসলিম সবার জন্য কাজ করতে চান। গতবার যাদের জেলা পরিষদে ২১টি আসন ছিল, সেই সিপিএম এবার একটা আসনও পায়নি। জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেছেন, ‘ভোট লুট হয়েছে। বিজেপির জেলার দুই সভাপতি জগন্নাথ সরকার ও মহাদেব সরকার অভিযোগ করেছেন, ‘তৃণমূল গণনায় কারচুপি করেছে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.