শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: পশ্চিমবঙ্গ ছাত্র সমাজের নবান্ন অভিযানের ডাকে অশান্তির আশঙ্কা। তৃণমূলের প্রকাশ্যে আনা ভিডিও দুটিতে দেখতে পাওয়া দুই বিজেপি নেতাকে আটক করল ঘাটাল থানার পুলিশ। তাঁরা হলেন, বাবলু গঙ্গোপাধ্যায় এবং সৌমেন চট্টোপাধ্যায়। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, ‘‘ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পরেই অভিযোগের প্রেক্ষিতে দুজনকে আটক করা হয়েছে। আরও একজন পলাতক। আটক হওয়া দুই বিজেপি নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁদের পরিকল্পনা জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। পরে আইন মেনে পদক্ষেপ করা হবে।’’ দুই নেতাকে আটক করে দলকে বদনাম করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ঘাটালের বিজেপি বিধায়ক শীতল কপাটের। তিনি বলেন, ‘‘তৃণমূল এবং পুলিশ এক হয়ে বিজেপিকে বদনাম করার চেষ্টা করছে। আর জি কর নিয়ে পুলিশ কী ব্যবস্থা নিয়েছে, তা সকলেই দেখেছেন। আর এখন বিজেপির দুজনকে আটক করা হল ঘাটালে।’’
সোমবার সকালে সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের তরফে দুটি ভিডিও দেখানো হয়। প্রথম ভিডিওটিতে দেখা গিয়েছে বিপ্লব মালকে। তিনি পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোণা ২ বিজেপির মণ্ডল সভাপতি। আরেকটি ভিডিও বিজেপির রাজ্য সমবায় সমিতির কো-কনভেনার সৌমেন চট্টোপাধ্যায় এবং খড়ার পুরসভার একমাত্র বিজেপি কাউন্সিলর বাবলু গঙ্গোপাধ্যায়কে দেখা গিয়েছে বলেই দাবি রাজ্যের শাসক শিবিরের।
প্রথম ভিডিও অনুযায়ী ওই যুবককে বলতে শোনা যায়, “২৭ তারিখের যে আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে হবে বলছেন, তা কি আদৌ হবে? আদৌ শান্তিপূর্ণ হবে না। গুলি চলবে। রবার বুলেট চলবে।” নেপথ্যে কণ্ঠে বলতে শোনা গিয়েছে, “কিন্তু গুলি বা রাবার বুলেট কি ওরা আদৌ চালাবে? ওরা কিন্তু একটা জিনিস বুঝে গিয়েছে।” তার পালটা ওই যুবক বলেন, “কিন্তু এরা ওদের চালাতে বাধ্য করবে।” নেপথ্যে কণ্ঠে এর পর বলা হয়, “মানে যাঁরা যাবেন ওখানে…।” ভিডিওতে দেখতে পাওয়া যুবক বলেন, “এখানে ভিতরে বড় রাজনীতির চক্র চলছে। অন্যদিকে মোড় ঘুরে গেলেও যেতে পারে। আমাদের ধারণা সেটা। সবই দেখার ব্যাপার। কী হয় এখন দেখা যাক। তবে লোক যাবে। ব্যাপক লোক হবে।” নেপথ্য কণ্ঠস্বরে ‘বডি পড়া’র কথা বলা হয়। শোনা যায়, “পরিষ্কার কথা দাদা। আমি নিজে সংবাদমাধ্যমের ছেলে। সংবাদ করে আসা। বডি যদি না পড়ে…।” “রাজনীতি হবে না”, বলে মাথা নাড়েন যুবক। নেপথ্য কণ্ঠস্বরে এর পর শোনা যায়, “বডি যদি না পড়ে, দু-একটা লাশ যদি না পড়ে…। তবে আপনার কী মনে হয়, আন্দোলনের মোড় ঘুরতে পারে?” যুবক বলেন, “অবশ্য বডি না পড়লে কোনওদিন মোড় ঘুরবে না। আমার যা ধারণা বডি এবার পড়বেই।” ২৭ আগস্ট ‘বডি পড়বে’ বলেও দাবি করা হয়।
দ্বিতীয় ভিডিওতেও একইভাবে ‘বডি পড়া’র কথা শোনা যায়। ওই ভিডিওতে আবার একের পর প্রশ্নোত্তর শোনা যায়। প্রথম প্রশ্ন, “দাদা কী হবে? ২৭ তারিখের আন্দোলনে? আপনি যেটা বলছিলেন, জঙ্গি আন্দোলন হবে!” ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তির উত্তর, “ওইটা তো করতেই হবে। একটা দুটো বডি যদি না পড়ে কিচ্ছু হবে না।” দ্বিতীয় প্রশ্ন, “আপনারা আন্দোলনটা এবার কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবেন? আপনারা তো ওখানে আন্দোলন করলে চলে আসলেন, পরের ইস্যুটা কী হবে?” উত্তর, “তোমাকে মারব, এটা যতটা ভয়ের, মেরে ফেললে কিন্তু আর তা হবে না। ভয়টা কেটে যাবে…।”
নেপথ্যে শোনা যায় একজনের কণ্ঠস্বর। তাতে বলা হয়, “আপনি যদি দেখেন চোখের সামনে পুলিশের গুলিতে একটা বডি পড়ে গেল…।” এর পর ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ব্যক্তি বলেন, “হ্যাঁ, আজ সিপিএম আর ফরোয়ার্ড ব্লক একসঙ্গে রয়েছে। কিন্তু এক সময় সিপিএম সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে ফরোয়ার্ড ব্লকের পাঁচটা বডি পড়েছিল মনে আছে? পাঁচজনকে গুলি করেছিল পুলিশ।” এর পর অবশ্য কী কথোপকথন হয়েছে, তা জানা যায়নি। এই ভিডিও দুটি সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের তরফে দেখানো হয়। যদিও ভিডিওর সত্যতা যাচাই করেনি সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.