চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বাংলা-ঝাড়খণ্ড সীমান্তবর্তী মাইথন বাঙালিদের অন্যতম পছন্দের বেড়ানোর স্পট। কিন্তু এবছর ছবির মতো মাইথন যেন সাদা-কালো। অবিশ্রান্ত বৃষ্টিতে মাইথন একেবারে ডুবু ডুবু। বেড়ানো, নৌকাবিহার, দ্বীপে দৌড়ানো এসব মাটি।
[মাছের সঙ্গেই দিন-রাত, পর্যটনের অন্য স্বাদ ফিশ ট্যুরিজমে]
পাহাড়, জঙ্গল আর সবুজ জলরাশি। প্রকৃতি দু’হাত ভরে দিয়েছে মাইথনকে। মাইথনের সৌন্দর্যের অন্যতম কারণ ড্যাম ও তার নীল জলরাশি। জলাধারের সেই জলই কেড়ে নিয়েছে এবারের অমোঘ আকর্ষণ। জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় ব্লক প্রশাসনের সাজানো সবুজদ্বীপ চলে গেছে জলের তলায়। এমনকী মাইথনের যে জঙ্গলে পিকনিক পার্টিরা জমা হত এবং যে এলাকায় গাড়ি পার্কিং করা হত তাও কার্যত এখন জলের নিচে। মাইথনের মন ভোলানো রূপে মুগ্ধ হয়ে যাঁরা ছুটে আসতেন তাঁরা হয়তো হতাশ হবেন এবার।
[মাঝ ডিসেম্বরে শীত শীত ভাব, এই ফাঁকে চুপিসারে চলুন ‘চুপি’]
বাঙালির পর্যটন ও বনভোজনের অন্যতম সেরা ঠিকানা মাইথন। মাইথনে এসে অনেকেই নৌকাবিহার করতে ভালবাসেন। জলাধারের মাঝে রয়েছে বেশ কয়েকটি দ্বীপ। নৌকাবিহারে পর্যটকদের গন্তব্য থাকে চামচ দ্বীপ, আনন্দ দ্বীপ ও সবুজ দ্বীপ। তারমধ্যে অন্যতম আকর্ষণ সবুজ দ্বীপ ও আনন্দ দ্বীপ। গভীর জলের মাঝে মাথা উঁচিয়ে থাকা এক টুকরো জমি এই দ্বীপগুলি। যেখানে রয়েছে পাথর আর গভীর জঙ্গল। নৌবিহারকে আরও আকর্ষণ করার জন্য সালানপুর ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে সুবজ দ্বীপকে ঢেলে সাজানো হয়েছিল তিন বছর আগে। বসার জায়গা, ছোট্ট পার্ক, শিশুদের মনোরঞ্জনের জন্য দোলনা, স্লিপ, ঢেকি ও বড়দের বসে সময় কাটানোর জন্য ছোট্ট ছোট্ট প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে দেওয়া হয়েছিল। ছোট ব্যবসায়ীদের কফি কাউন্টার বা স্ন্যাক্স কাউন্টারের ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। পর্যটকরা নৌকা করে ওই দ্বীপে গিয়ে সময় কাটাতেন। কিন্তু এখন সবুজ দ্বীপ ও আনন্দ দ্বীপে যাওয়া গেলেও নামার উপায় নেই। কারণ পুরো দ্বীপটাই চলে গিয়েছে জলের তলায়। নৌকাচালকরা জানান, জলস্তর না নামলে দ্বীপের হদিশ পাওয়া যাবে না। তারা মনে করছেন জল কমার পর মাথা তুলে দাঁড়ালেও শ্রী হারাবে সবুজ দ্বীপ। একই অবস্থা বাথানবাড়ির কাছে আনন্দ দ্বীপও। এজন্য স্থানীয়রা জানাচ্ছেন এবার মাইথনে আসার আগে খোঁজখবর নিয়ে আসা উচিত। জলাধারে অতিরিক্ত জল থাকার কারণে মাইথনের পিকনিক করার স্থানগুলি বেশিরভাগই জলের তলায়।
[সমুদ্রপাড়ে তাঁবুতে রাত্রিবাস, এমন দিঘা কখনও দেখেছেন?]
ডিসেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে এমন অবস্থা কোনও বছর হয়নি মাইথনে। এই ঘটনায় হতাশ স্থানীয় ব্যবসায়ী ও নৌকা চালকরা। কিছু দিন আগে বারাবনির বিধায়ক বিধান উপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, মাইথনকে আরও ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা রয়েছে। পিকনিক স্পটে শৌচাগার ও শেড তৈরি করার পরিকল্পনা ছিল এবছর। পঞ্চায়েত থেকে সেই উদ্যোগ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বেশিরভাগ জায়গা জলের তলায় চলে যাওয়ায় সেই কাজ করতে পারেনি সালানপুর পঞ্চায়েত। ডিভিসির জনসংযোগ আধিকারিক বিজয় কুমারের বক্তব্য, এবছর বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হয়েছে। নভেম্বরের শুরুতেও বৃষ্টি হয়েছে ঝাড়খণ্ড ও সীমান্ত বাংলায়। এই অবস্থায় বেশি জল ছাড়লে নদী উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যার আশঙ্কা রয়েছে তাই জল ধরে রাখা হয়েছে। তবে চাষের জন্য দিন দশ-পনেরোর মধ্যে জল ছাড়া হবে তখন হয়তো জলস্তর কমতে পারে। এই আশাটুকুই এখন পর্যটকদের সম্বল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.