পলাশ পাত্র, তেহট্ট: নদিয়ায় প্রেমিকাকে গুলিকাণ্ডে উঠে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ২৪ জানুয়ারি বুদ্ধদেব মন্ডলের বড় মেয়ে মধুমন্তীর বিয়ের দিন থেকেই বড় জামাইয়ের বন্ধু ও বিয়ের তদারকিতে থাকা অলীক কর্মকারের সঙ্গে ছোট মেয়ে বিদিশার সম্পর্কটা গড়ে উঠেছিল। ক্রমে সেই সম্পর্কের জালেই জড়িয়ে পড়ে বিদিশা৷ বৃহস্পতিবার বিকেলে অলীকের ফোন পেয়ে তার কথামতো প্রায় দেড় কিলোমিটার পথ পেরিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছয় সে৷ স্কুটিতে চড়ে যাওয়ার সময় দুজনের বচসা শুরু হয়ে যায়। সেই সময়ই প্রেমিক অলীক সেভেন এম এম পিস্তল থেকে গুলি ছোঁড়ে বিদিশাকে। বৃহস্পতিবার রাতে প্রথম বর্ষের কলেজ ছাত্রী বিদিশা মন্ডল খুন হওয়ার পর পুলিশি তদন্তে চাঞ্চল্যকর এ তথ্য উঠে এসেছে। এখনও আশঙ্কাজনক অবস্থায় প্রেমিক অলীক কর্মকার শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভরতি। বিয়ের প্রস্তাবে ‘না’ বলায় নাকি বিদিশার সঙ্গে অন্য কারোর সম্পর্ক গড়ে ওঠার সন্দেহেই অলীক এ কান্ড ঘটিয়েছে তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
মুরুটিয়া থানার শিকারপুর পঞ্চায়েতের সিপিএমের প্রাক্তন উপপ্রধান বুদ্ধদেব মন্ডলের জমিজমা রয়েছে। তাঁর দুই মেয়ে। বড় মেয়ে মধুমন্তী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছে৷ মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি থানার সাগরপাড়ার বাজারের বাসিন্দা, বিএসএফে কর্মরত জয়দেব বিশ্বাসের সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তাঁর। ২৪ জানুয়ারি মধুবন্তীর বিয়ের দিন জয়দেবের বন্ধু অলীক বিয়ের তদারকির কাজ করছিল। সে দিনই বিদিশা অলীকের মধ্যে কথা বলাবলি থেকে ফোন নম্বর আদানপ্রদান হয়ে যায়। বিয়ে মিটে গেলেও দুজনের সম্পর্ক এগিয়ে চলে। ফোনে কথাবার্তা চলে। বিদিশার সঙ্গে পান্নাদেবী কলেজে অলীক একাধিকবার দেখা করতে আসে। ইদানীং অলীক সম্পর্ক নিয়ে নাছোড়বান্দা হয়ে উঠেছিল। মা বা বাড়ির আত্মীয়দের দিয়ে মোবাইল থেকে বিদিশার সঙ্গে কথা বলাতো। সে কথা স্বীকারও করেছেন মৃতার বড় দিদি মধুবন্তী। তিনি বলেন,” আমার বোনকে ও ফোনে ইদানীং খুব বিরক্ত করত। বোনই আমায় এসব জানিয়েছিল। আসলে ওদের বাড়ির সকলের বোনকে খুব পছন্দ ছিল। এলাকায় পরোপকারী বলে বিদিশার নাম ছিল। প্রতিবেশীরা বলেন, ‘‘ও রাস্তায় কাউকে কষ্টে থাকতে দেখলেই খাওয়াতো।’’
পনেরো দিন আগেও অলীক বিদিশাদের বাড়ি আসে। দুপুরে খাওয়া-দাওয়াও করে।বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে বাড়ি ফিরে যায়। ঘটনা প্রসঙ্গে মৃতার বাবা বুদ্ধদেব মন্ডল বলেন, “আমরা কোনভাবে জানতে পারিনি ওদের মধ্যে সম্পর্ক আছে। ছেলেটি বড় মেয়ের বিয়ের সময় এসেছে। পনেরো দিন আগেও আমাদের বাড়িতে এসেছিল।” তদন্তে উঠে এসেছে সম্পর্কের বাঁধন ইদানীং আলগা হচ্ছিল দুজনের। তাতে অলীক বিদিশাকে সন্দেহ করতে থাকে। হয়তো কারুর সঙ্গে বিদিশার সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে। আর এই সন্দেহে হেস্তনেস্ত করতেই সেভেন এম এম পিস্তল নিয়ে বাসে চেপে সাগরপাড়া থেকে শিকারপুর ফুনকোতলায় নামে অলীক। ফোনে প্রেমিকা বিদিশাকে ডেকে তাঁর স্কুটি নিয়ে নির্জন জোড়াফুল এলাকায় পৌঁছায় অলীক। সেখানেই দুজনের কথা কাটাকাটি থেকে শুরু হয় বচসা। এই সময় অলীক গুলি ছোঁড়ে। গুলি বিদিশার লাগতেই সে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। ওই দেখে নিজের দিকেও অলীক গুলি ছোঁড়ে। সেই গুলি লাগেনি। অলীক পিস্তলের বাট দিয়ে মাথায় আঘাত করে। শব্দ শুনে এই সময় আশপাশ থেকে মানুষজন ছুটে আসে। তারা গণপিটুনি দেওয়ার আগে পুলিশ অলীককে উদ্ধার করে। করিমপুর হাসপাতালে দুজনকে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় দুজনকে। অস্ত্রোপচারের আগেই বিদিশা মারা যান। কিন্তু কীভাবে অলীক এই অস্ত্র পেল তা তদন্ত করছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.