Advertisement
Advertisement
তীর্থভ্রমণ

বৃদ্ধা মাকে স্কুটারে চাপিয়ে তীর্থে এ যুগের ‘শ্রবণকুমার’

ইতিমধ্যে ১০টি জ্যোর্তিলিঙ্গ দর্শন করা হয়ে গিয়েছে মা ও ছেলের।

Mysore man visited holy places across the county with his mother
Published by: Soumya Mukherjee
  • Posted:May 28, 2019 9:03 pm
  • Updated:May 28, 2019 9:03 pm  

সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: কথায় বলে মা স্বর্গের থেকেও বড়, ‘জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপী গরিয়সী’। মানুষ তীর্থে যায় স্বর্গলাভের আশায়। কিন্তু, মাইসুরুর কৃষ্ণকুমারের গল্প শুনলে মনে হবে ঠিক যেন উলটপুরাণ। খোদ স্বর্গকে সঙ্গে নিয়ে কড়া নাড়ছেন দেশের একের পর এক তীর্থস্থানের দরজায়। সফরসঙ্গী, প্রয়াত বাবার একটি টু স্ট্রোক স্কুটার। তাতেই মাকে চাপিয়ে গোটা দেশের তীর্থস্থানে পৌঁছে যেতে চান তিনি। এর জন্যে ২০১৮ সালে ছেড়েছেন বহুজাতিক সংস্থার মোটা মাইনের দামি চাকরিও।পুরাণে যুগে শ্রবণকুমার যেমন মা ও বাবাকে কাঁধে ঝুলিয়ে তীর্থভ্রমণ করিয়ে ছিলেন তারই যেন পুনরাবৃত্তি করলেন এ যুগের কৃষ্ণকুমার।

[আরও পড়ুন- ট্রলিতে ওটা কী? কুণ্ডলী পাকানো সরীসৃপ দেখে আতঙ্ক ওয়ালমার্টে]

প্রায় এক বছর ধরে সত্তরোর্ধ্ব মা’কে নিয়ে স্কুটারে চেপে দেশের অজস্র তীর্থস্থান ঘুরে এসে পৌঁছেছেন দুর্গাপুরে। এর মাঝে পাড়ি দিয়েছেন মোট ৩৭ হাজার কিলোমিটার চড়াই-উতরাই। লক্ষ্য একটাই। ভারতবর্ষের সবকটি নামী তীর্থস্থান নিজের ঈশ্বর অর্থাৎ মাকে দর্শন করানো। ডি কৃষ্ণকুমারের কথায়, “স্বর্গ তো আমার সঙ্গেই আছে। তবে তীর্থ গেলেই সম্ভব ঈশ্বরের দর্শন। মা সারাজীবনই সংসার ধর্ম পালন করতে গিয়ে বাড়ির বাইরে
বের হতে পারেননি। কোনওদিন মন্দিরও দেখেননি। তাই মা’কে ভারতের সমস্ত তীর্থস্থানে ভ্রমণ করাতে বেরিয়ে পড়েছি।”

Advertisement

সংসারের কাজের চাপে মাইসুরুর বাড়ি থেকে দু’কিলোমিটারের মধ্যে থাকা মন্দিরও দেখতে পাননি কৃষ্ণকুমারের মা চূড়ারত্না দেবী। মায়ের এই আক্ষেপের কথা শুনে আর বসে থাকেননি কৃষ্ণ। মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেন, দেশের সবকটি তীর্থস্থানে মাকে নিয়ে যাবেন। এর জন্যে প্রথমেই চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়ে দেন। তারপর ঝেড়ে মুছে সাফ করলেন বাবার পুরনো স্কুটারটিকেও। বিয়ে করেননি তাই সংসারের ঝামেলা ছিল না।

[আরও পড়ুন- শিকারে চোখ ঈগলের, লেন্সবন্দি শিকারির দুর্লভ ছবি প্রশংসা কুড়োচ্ছে নেটদুনিয়ায়]

সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে ২০১৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বেরিয়ে পড়েন মাকে নিয়ে। একে একে কেরল, তামিলনাডু, পুদুচেরি, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, ছত্তিশগড়, ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড হয়ে সোমবার দুপুরে দুর্গাপুরে আসেন। ইতিমধ্যে ১০টি জ্যোর্তিলিঙ্গ দর্শন করেছেন মাকে নিয়ে। সোমবার রাতে দুর্গাপুরের এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাতে আশ্রয় নিয়ে মঙ্গলবার সকালে ফের স্কুটারে চেপেই বেরিয়ে গেলেন ঝাড়খণ্ডের বৈদ্যনাথ ধামের উদ্দেশে। সেখান থেকে দার্জিলিং যাবেন বলেই জানান কৃষ্ণকুমার। তবে ভাষা সমস্যার জন্যে চূড়ারত্না দেবীর সঙ্গে কথা বলা যায়নি।

এভাবে কী বার্তা দিতে চাইছেন দেশের মানুষকে? এই প্রশ্ন করতেই কৃষ্ণকুমার বলে ওঠেন, “বার্তা দিতে নয়, বার্তা নিতেই ছুটে বেড়াচ্ছি আমরা। মানুষের সঙ্গে মিশছি। তাদের সঙ্গে কথা বলছি। অনেক কিছু শিখছি।” তারপরই তিনি বলেন, “মা বাবাকে জীবিত অবস্থায় সম্মান করো। তাদের চাহিদা পূরণ করো। তাঁদের মৃত্যুর পর লোক দেখানো স্মরণ করে কোনও লাভ নেই।” এই বলেই আজকের ‘বৃদ্ধাশ্রম’ জমানায় মানব সমাজে বিরল আধুনিক যুগের ‘শ্রবণকুমার’ তাঁর টু-স্ট্রোক স্কুটার ছোটালেন মা’কে পিছনে বসিয়ে।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement