চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: গ্রামের নাম, “দেশের মহান”। এই নাম যে সার্থক তা ফের প্রমাণিত হলো রবিবার। ২৩০টি পরিবারের মধ্যে ১ টি পরিবার এখানে হিন্দু। বাকিরা মুসলিম। গ্রামের সংখ্যালঘু হিন্দু পরিবারের বিপদে পাশে দাঁড়ালেন সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম প্রতিবেশীরা। সহায় সম্বলহীন বৃদ্ধ রামধনু রজকের মৃত্যুর পর সৎকারের দায়িত্ব নিলেন গ্রামবাসীরা। দেহ কাঁধে শ্মশানের পথে পা তাঁরাই। হিন্দু রীতি মেনে হল সৎকারের কাজ। শুধু পারলৌকিক ক্রিয়াকর্ম নয়, অসুস্থ বৃদ্ধকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া থেকে সেবা শুশ্রূষা সবই করেছেন এই মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত পাড়া-প্রতিবেশীরাই। জামুড়িয়ার (Jamuria) শেষপ্রান্তে অজয় নদের তীরের একফালি গ্রামের মানুষজন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অনন্য নজির সৃষ্টি করে বুঝিয়ে দিলেন, “দেশের মহান” প্রকৃত অর্থেই মহান। এখানে রহিমরা কাঁধে তুলে নেন রামের দেহ।
রামধনু রজকের তিনছেলের মধ্যে দু’জন কর্মসূত্রে থাকেন রাজ্যের বাইরে। এক ছেলে মানসিক বিকারগ্রস্ত। দুই মেয়ে বিবাহিত, থাকেন ভিনজেলায়। এক সময় জননগর কোলিয়ারি এলাকায় বসবাস ছিল রামধনুর। পরবর্তীকালে তিনি দেশের মহান গ্রামে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামে তিনি পাথরের বাসনপত্র তৈরির কাজ শুরু করেন। এভাবেই চলছিল। পরবর্তীতে মৃত্যু হয় স্ত্রীর। গ্রাম ছাড়েন সন্তানরা। ফলে কার্যত একাই থাকতেন বৃদ্ধ। শনিবার তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে দুর্গাপুরের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়ে যান প্রতিবেশীরা। শেষ পর্যন্ত রানীগঞ্জের এক হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর মৃত্যু হয়।
গ্রামবাসী শেখ ফিরদৌস বলেন, “রামধনুর মৃত্যুর সময় পরিবারের কেউ পাশে ছিলেন না। তাই আমরা দায়িত্ব নিয়ে পারলৌকিক ক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করি। পরে অবশ্য তাঁর পরিবারের সদস্যরা আসেন। ” সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কাকে বলে তা দেখা উচিত দেশের মহানকে দেখে। মৃতের ছেলে রামবিলাস রজক বলেন, “আমাদের আদি বাড়ি বিহারে হলেও আমরা সবাই এই বাংলাতে বা জামুড়িয়াতেই থাকি। বৃদ্ধ বাবাকে ছেড়ে আমরা বাইরে কাজ করতে গিয়েছিলাম আবদুল চাচা, রহমত উদ্দিন, আতাউদ্দিন চাচাদের ভরসায়। বিপদের দিনে শেষ পর্যন্ত তাঁরাই পাশে দাঁড়াল।” জামুড়িয়াবাসীর দাবি, দেশের মহান গ্রাম প্রকৃত অর্থেই মহান তা প্রমাণিত হল সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এই দৃশ্যে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.