ধীমান রায়, কাটোয়া: বর্ধমানেশ্বর শিবের মাথায় জল ঢেলে পুণ্য অর্জনের লক্ষ্যে পুণ্যার্থীদের সঙ্গে শামিল ভাতারের রেজাবুল, মনিরুলরাও। বর্ধমান শহরের আলমগঞ্জে ঐতিহ্যবাহী বর্ধমানেশ্বরের আবির্ভাব দিবস ঘিরে উন্মাদনায় মেতে হাজার হাজার হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। তাঁদের সঙ্গেই কাটোয়া থেকে গঙ্গাজল নিয়ে বর্ধমান পর্যন্ত দীর্ঘপথ পাড়ি দিলেন ভাতারের বলগোনা এলাকার ৯ জনের পুণ্যার্থীদল। তাঁদের সঙ্গে ছিলেন ৫ জন মুসলিম যুবকও।
বস্তুত, শ্রাবণ মাসে মহাদেবের আরাধনা ঘিরে বর্ধমানে দেখা গেল এক সম্প্রীতির চিত্র। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ৪৭ বছর আগে বর্ধমানের আলমগঞ্জে কিছু মানুষ জমি কাটার কাজ করছিলেন। তখন মাটির তলায় উদ্ধার হয় সুবিশাল শিবলিঙ্গ। প্রাচীন শিবলিঙ্গ উদ্ধার করে প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাকে বর্ধমানেশ্বর নামে সম্বোধন করা হয়। সেই থেকে শ্রাবণ মাসে ২৫ তারিখ বর্ধমানেশ্বরের প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করা হয়। এই দিনটিতে বর্ধমানেশ্বরের মাথায় জল ঢালতে হাজার হাজার নরনারী কাটোয়া থেকে গঙ্গাজল নিয়ে পদব্রজে বর্ধমানের দিকে রওনা দেন। রবিবার ছিল বর্ধমানেশ্বরের প্রতিষ্ঠা দিবস। শনিবার সকাল থেকেই পুণ্যার্থীদের ঢল নামে কাটোয়ায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ভাতারের বলগোনা অঞ্চল এলাকার বলগোনা, শিকোত্তর, সেলেণ্ডা প্রভৃতি গ্রামের ৯ জন বন্ধু মিলে শনিবার সকালে কাটোয়ায় গঙ্গাজল আনতে রওনা দেন। তাদের মধ্যে ছিলেন শে্খ রাজু, রেজাবুল বড়াল, শেখ মনিরুল, রাজু শেখ, শেখ বসির, রবি দাস, রাহুল দাস-সহ ৯ জন যুবক। তাঁরা সকালে কাটোয়ায় গঙ্গার ঘাটে স্নান করে জল নিয়ে বর্ধমানের উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা দিয়েছিলেন। সন্ধ্যা নাগাদ বলগোনা আসেন। শুধু বর্ধমানেশ্বরের মাথায় জল দিতে যাওয়াই নয়, এই ৯ জনের দলটি এই যাত্রাপথে জল সংরক্ষণ, বৃক্ষরোপণ, মিশন নির্মল বাংলা অভিযান প্রভৃতি জনমুখি প্রকল্পের প্রচার করেন।
জানা গিয়েছে, এই পু্ণ্যার্থীদলের পিছনে ছিল একটি ছোট গাড়ি। সেই গাড়িতে ঝাঁটা রাখা ছিল। এমনিতেই হাজার হাজার পু্ণ্যার্থীদের সেবার জন্য বলগোনা, ভাতার, আমারুন, নর্জা প্রভৃতি এলাকায় শিবির করেছিলেন স্থানীয়রা। খাদ্য ও পানীয়ের শিবির করায় রাস্তার ওপরে অনেক বর্জ্য পড়েছিল। শেখ রাজু জানিয়েছেন, তাঁরা যাত্রাপথে বাজার এলাকাগুলিতে রাস্তার ওপর পড়ে থাকা বর্জ্যগুলি ঝাঁট দিয়ে পরিষ্কার করার উদ্দেশ্যেই ঝাঁটা রেখেছিলেন।
শনিবার মাঝরাতে শেখ রাজুরা আলমগঞ্জে পৌছান। তাঁদের নিয়ে যাওয়া জল বর্ধমানেশ্বর মন্দিরের পুরোহিতারে হাতে তুলে দেওয়া হয়। পুজোর কাজ শেষ করে রবিবার ভোরে বাড়ি ফেরেন বলগোনার ৯ বন্ধু। শেখ রেজাবুল, শেখ মনিরুলরা বলেন, ” আমরা মানবধর্ম রক্ষার্থেই বর্ধমানেশ্বরের কাছে পুজো দিয়েছি। সেই সঙ্গে প্রকৃতিকে বাঁচাতে প্রচারও করেছি। একদিকে যেমন আমরা সকলে ঈশ্বরের আরাধনা করি, পাশাপাশি প্রকৃতিরও সমান অবদান রয়েছে। প্রকৃতি না বাঁচলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।” বলগোনা এলাকার বাসিন্দা অনল দাস রবি দাসরা বলেন, ” আমরা সারাবছর হিন্দু মুসলিম একসঙ্গে ওঠাবসা করি। তাই সকল বন্ধু মিলে একসাথেই বাবা বর্ধমানেশ্বরের পুজোর সংকল্প করেছিলাম। মানবধর্মই সবকিছুর উপরে।”
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.