ধীমান রায়, কাটোয়া: ধর্মনিরপেক্ষতাই ভারতের ঐতিহ্য। কিন্তু বর্তমানে ক্রমশই বাড়ছে ধর্মীয় হানাহানির ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েই আজও দেশের ঐতিহ্যকে বজায় রেখেছে পূর্ব বর্ধমানের আউশগ্রামের শিবদা গ্রাম। এখানে লক্ষ্মীপুজো মানে প্রকৃত অর্থে উৎসব। ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে ফেজ মাথায় লক্ষ্মীপুজোয় অংশ নেন মুসলমানরা।
আউশগ্রামের গুসকরা ২ অঞ্চলের শিবদা গ্রাম। গ্রামের অধিকাংশ পরিবার কৃষিজীবী ও জনমজুর। দুর্গাপুজোর চেয়ে শিবদা গ্রামে বরাবরই লক্ষীপুজোয় অনেক বেশি ধুমধাম হয়। গ্রামে প্রায় ২০ থেকে ২২টি পরিবার লক্ষীপুজোর আয়োজন করে। সর্বজনীন লক্ষী পুজোও হয় বেশ কয়েকটি। স্থানীয় অগ্রদূত ক্লাবের উদ্যোক্তারা বলেন, “প্রায় ৭০ বছর ধরে শিবদা গ্রামে এই বারোয়ারি লক্ষীপুজো হয়ে আসছে। ক্লাবের তৈরি করা পাকা মন্দিরে লক্ষীপুজো হয়। পুজো ঘিরে তিন-চারদিন নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, যাত্রাপালা ও সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার আয়োজনও করা হয়। বসে মেলা।”
এই পুজোর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হল, ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সবাই শামিল হন। হিন্দু মুসলিম সকলে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পুজোর আয়োজন হাত মেলান। পুজো কমিটির সম্পাদক অজয়চাঁদ গড়াই বলেন, “আমাদের বারোয়ারি পুজো কমিটিতে হিন্দু মুসলিম সম্প্রদায়ের সদস্যরা রয়েছেন। সকলেই চাঁদা তুলে পুজো করেন। কোনও ভেদাভেদ নেই।” পুজো কমিটির সদস্য হাসমত আলির কথায়, “দুর্গাপুজোর থেকেও লক্ষীপুজোয় আমাদের গ্রামে বেশি আনন্দ হয়। বারোয়ারি পুজোতে আমাদের প্রায় সব বাড়িতেই আত্মীয়রা আসেন। কয়েকদিন ধরেই টানা উৎসব চলে।”
বর্তমানে প্রায়শই শিরোনামে জায়গা করে নিচ্ছে ধর্মীয় হানাহানির মতো ঘটনা। কিন্তু শিবদা গ্রামের সম্প্রীতির লক্ষ্মীপুজোই বোধহয় আরও একবার সকলকে মনে করিয়ে দেবে ধর্মনিরপেক্ষতাই ভারতের ঐতিহ্য।
ছবি: জয়ন্ত দাস
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.