নন্দন দত্ত, সিউড়ি: প্রথা ভাঙতে চলেছে রামপুরহাটের ব্রাহ্মণ পরিবার। এক ব্রাহ্মণ কিশোরের ভিক্ষা মা-বাবা হচ্ছেন মুসলমান দম্পতি। দ্বিজত্ব প্রাপ্ত ব্রাহ্মণ বালক তিন দিন তপস্যা শেষে ‘ভবতি ভিক্ষাং দেহি’ বলে প্রথম ভিক্ষা গ্রহণ করবেন আবদুল রেকিব ও ওয়াহিদা রহমানের কাছ থেকে। মুসলমান দম্পতি সদ্য ব্রাহ্মণ হওয়া অর্ণব মজুমদারকে এবার সামাজিকভাবে তাঁদের সন্তানতুল্য স্বীকার করবেন।
বিষয়টা যে খুব সহজে হয়েছে তা নয়। খুব পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে তেমনও নয়। সাড়ে দশ বছরের অর্ণব গত পাঁচ বছর ধরে রেকিবের পরিবারকেই নিজের মা-বাবার ঘর হিসেবেই পেয়েছে। অর্ণবের বাবা অভিজিৎ মজুমদার বলেন, “অর্ণবের মা যখন আমার হাতে ছেলেকে দিয়ে বিবাহবিচ্ছেদ নিল, তখন কোনও আত্মীয়-স্বজনকে আমি পাশে পাইনি। একা বাবা হিসাবে অর্ণবের কাছে আমি মা-বাবার দুইয়ের অভাব দূর করার চেষ্টা করেছি। সে সময় আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল রেকিবের পরিবার। আমার বাঁচতে সেদিন একটা হাতের দরকার ছিল। সাহায্যের কী ধর্ম আমি তা দেখিনি।”
রেকিবের স্ত্রী ওয়াহিদা রহমানের কথায়, “আমার দুই সন্তানের সঙ্গে অর্ণবও সন্তানস্নেহে লালিত হচ্ছে। সামাজিক ও ধর্মীয়ভাবে তার মা হিসেবে আমি গর্বিত।” ওয়াহিদার স্বামী আবদুল রেকিব বলেন, “অর্ণবকে ভিক্ষা দিতে আমরা নিজেদের তৈরি করছি। তাকে প্রথম ভিক্ষা দিতে যা যা শাস্ত্রীয় বিধান আছে, আমরা দু’জনে সেই সব মেনেই তাকে বরণ করব।”
এটা কি সম্প্রীতির প্রচার? খবরে থাকার চেষ্টা? দু’টি পরিবার জানাল আদপেই তা নয়। অর্ণবের উপনয়ন হবে হিন্দু ধর্মের বিধি মেনে। এমনকী কার্ডের বয়ান অনুযায়ী, এখন যেখানে ব্রাহ্মণত্বে দীক্ষার একদিন পরেই বন্ধ ঘরের দরজা খোলা হয়, সেখানে অর্ণব টানা তিনদিন গৃহবন্দি থাকবে। উপবীতদাতাদের বক্তব্য, “ব্রাহ্মণদের সহজাত বৃত্তি ছিল ভিক্ষা। সে ভিক্ষায় জাতি-ধর্মের কোনও ভেদাভেদ থাকে না। তাই রেকিব কিংবা রাহুলের ভিক্ষার কোনও তফাত থাকা উচিত নয়।”
আগামী ২ জুন অর্ণবের উপনয়নের গাত্রহরিদ্রা। তিনদিন পরে জগতের আলো দেখা। সদ্য ব্রাহ্মণ হওয়া অর্ণব সে আলো দেখবে রেকিব-ওয়াহিদার হাত ধরে। দু’টি পরিবারের আশা, সহজিয়া এই সম্পর্ক সমাজে নতুন গোত্র তৈরি করবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.