ছবি: প্রতীকী
সুব্রত যশ, আরামবাগ: গত ৯ ফেব্রুয়ারি হাওড়ার (Howrah) ডোমজুড়ে (Domjur) ধানখেত থেকে উদ্ধার হয়েছিল এক যুগলের মৃতদেহ। খুন না আত্মহত্যা? এই নিয়ে এখনও ধন্দে পুলিশ। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পরিবারের সম্মান রক্ষার্থেই কি খুন? ইতিমধ্যে স্থানীয় বাসিন্দাদের মনে এই প্রশ্নও কিন্তু উঠতে শুরু করে দিয়েছে। গোটা ঘটনাটির যথাযথ তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন তাঁরা।
ঘটনার দিন ডোমজুড়ের নারনায় একটি খেতে স্থানীয়রাই প্রথম মৃতদেহ দু’টি পড়ে থাকতে দেখেন। তাঁরাই পুলিশে খবর দেন। স্থানীয়দের বক্তব্য, সেই সময় দু’টি দেহেই একাধিক গভীর ক্ষত দেখা গিয়েছিল। যা দেখে মনে হতে পারে কোনও প্রকার ধারাল অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়েছিল দু’জনকে। তার পর সেই ক্ষত পুড়িয়ে দেওয়া হয়। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। খুন করে দেহ দু’টি সেখানে রেখে যাওয়া হয়েছে বলে জল্পনাও শুরু হয়। এরপরই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে মৃত ছেলেটির নাম অর্জুন দলুই (২০)। মৃত মেয়েটির নাম রাখি প্রামানিক (১৬)। দু’জনেই বৃন্দারামপুরের বাসিন্দা। মেয়েটি এই বছরই মাধ্যমিক পরীক্ষা দিত। জানা গিয়েছে, দু’জনের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে উঠলেও তা মেনে নেয়নি পরিবারের লোকজন। এরপর তারা ২৬ জানুয়ারি পালিয়ে বিয়ে করে নেয়। মন্দিরে বিয়ে করলেও পরিচয় গোপন রাখে। কয়েকদিন পর ফেসবুকে বিয়ের ছবি পোস্ট করলেই বিষয়টি জানাজানি হয়ে যায়।
এদিকে, আরামবাগ থানায় প্রথমে নিখোঁজের ডায়েরি করলেও পরে আরেকটি অভিযোগে মেয়ের বাবা জানান, তাঁর মেয়েকে অপহরণ করা হয়েছে। এরপর ফেসবুকে পোস্ট দেখার পরই নাকি মেয়েকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য ছেলেটির পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন মেয়েটির বাবা। এদিকে, বিয়ে করেই ওই যুগল ডোমজু়ড়ে চলে যায়। সেখানেই ওই যুবক চাষের কাজ করতেন। সঙ্গে আরও অনেকে থাকতেন। এরপর ৯ তারিখ ওই যুগলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। পরবর্তীতে চারজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। জানা গিয়েছে, ওই চারজনের মৃত অর্জুনের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল।
এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে কেউ কেউ আবার ‘অনার কিলিং’ বা সম্মান রক্ষার্থে মেয়েটির পরিবারের দিকে খুনের অভিযোগ তুলেছেন। তাঁদের মতে, ছেলেটির জাত ভিন্ন ছিল। এছাড়া তাঁর পরিবারের অবস্থাও ভাল নয়, আর সেকারণেই এই খুন করা হয়েছে। যদিও মেয়েটির পরিবারের পক্ষ থেকে আবার ছেলেটির দিকেই আঙুল তোলা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ আধিকারিকরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন। তবে অনেকেই আবার দুর্ঘটনার পক্ষেও সওয়াল করছেন। কারণ যে খেত থেকে ওই যুগলের মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে, সেখানে অনেক বিদ্যুতের তার ছিল। কারণ গোটা এলাকায় বন্য শূকরের প্রবল উৎপাত। তাই কোনওভাবে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, সেই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এদিকে, যুগলকে খুনের অভিযোগ ঘিরে সন্ধের পর ধুন্ধুমার পরিস্থিতি আরামবাগের বৃন্দারামপুরে। রবিবার সন্ধে নাগাদ মৃতদেহ দুটি স্থানীয় এলাকায় পৌঁছনোর পর তা নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন এলাকাবাসী। বৃ্ন্দারামপুরে পথ অবরোধ করেন তাঁরা। সন্ধের ব্যস্ত সময়ে আটকে পড়ে যানবাহন। পরবর্তীতে আরামবাগ থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী গিয়ে অবরোধ হঠিয়ে দেয়।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.