নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পরিবেশ দপ্তরের নির্দেশ কার্যকর করে ক্র্যাশার চালানোর নির্দেশ আসতেই রবিবার থেকে নলহাটি, রাজগ্রাম, রামপুরহাটের বহু ক্র্যাশার বন্ধ করে দিয়েছেন মালিকরা। ফলে একদিকে চাষহীন বীরভূমে (Birbhum) যেমন একটা অর্থনৈতিক শঙ্কা দেখা দিতে পারে, অন্যদিকে আইনি পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন। নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের কাজ থেমে যেতে পারে।
জাতীয় পরিবেশ মন্ত্রকের বিধি মেনে, পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে পাথর ক্র্যাশার, খাদান চালানোর নির্দেশ দিয়েছে। শুধু তাই নয়, যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করেছে জেলা প্রশাসন, সেই অনুযায়ী জেলা খাদান ক্র্যাশার থেকে পাথর তোলা হয়েছে কিনা, কতটা ভাঙা হয়েছে তার হিসাব চেয়েছে পরিবেশ দপ্তর। যার পরিপ্রেক্ষিতে প্রত্যেক খাদানের মালিককে ডেকে আলাদা করে শুনানি নেবে পরিবেশ দপ্তরের আধিকারিকরা। গত শুক্রবার ছুটির দিনে পরিবেশ দপ্তরের সেই চিঠির প্রসঙ্গে ও আইন মেনে পাথর শিল্পাঞ্চল চালানোর জন্য সিউড়িতে শিল্পাঞ্চলের মালিকদের তা বুঝিয়ে দেন জেলাশাসক বিধান রায়।
অন্যদিকে, বিজেপির বীরভূম সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ধ্রুব সাহা কলকাতা হাই কোর্টে জনস্বার্থ মামলায় পাথর শিল্পাঞ্চল থেকে বৈধ খাজনার থেকে জরিমানার নাম করে বাড়তি টাকা তোলা হচ্ছে বলে মামলা করেন। সোমবার সে প্রসঙ্গে কলকাতা হাই কোর্ট আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে জেলাশাসকের কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করেছে। ধ্রুব সাহা জানান, “১৩০ টাকার খাজনা এজেন্সির মাধ্যমে কয়েক হাজার টাকা করে তুলেছে প্রশাসন। আমরা আরটিআই করে সরকারের কাছে সে তথ্য পেয়েছি। সে টাকা কারা তুলেছে, কাদের মাধ্যমে কোথায় খরচ হয়েছে তা আমরা জানতে চেয়েছি।” তবে ধ্রুব সাহা পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া ক্র্যাশার খাদান না চালানোর পক্ষে দাবি করেন। তাঁর মতে, আইন মেনে শিল্পাঞ্চল চলুক। তাদের সহায়তা করুক সরকার।
রামপুরহাট পাথর শিল্পাঞ্চল এলাকায় বড়পাহাড়িসহ দু’জায়গার খাদান থেকে পাথর আসত। বাকি আসত লাগোয়া ঝাড়খণ্ড থেকে। কিন্তু ঝাড়খণ্ড সরকার আইন মেনে খাদান চালু করতে বলায় সেখান থেকেও পাথরের জোগান কমেছে। তাই রামপুরহাট পাথর অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক মুস্তাক আহমেদ জানান, “২০১৬ সাল পর্যন্ত আমাদের সব ক্র্যাশারের পরিবেশ দপ্তরের ছাড়পত্র-সহ সব কিছু বৈধ কাগজ ছিল। পরে লকডাউন-সহ প্রশাসনিক জটিলতার জন্য কাগজের আপটুডেট নেই। আমরা বিডিওর দপ্তরের মাধ্যমে সব কাগজ জমা দিচ্ছি। আশা করি, দ্রুত বৈধ ছাড়পত্র পেয়ে আমরা শিল্পাঞ্চল চালু করব।”
রাজগ্রামের প্রায় ৫০টি মতো ক্র্যাশার বন্ধ। সংগঠনের সম্পাদক আসগর আলি খান জানান, “ঝাড়খণ্ড থেকে পাথর না পাওয়ায় দীর্ঘদিন ধরেই আমাদের কলগুলি বন্ধ। সম্প্রতি জেলাশাসক বৈধ কাগজপত্রের নির্দেশ দেওয়ায় সে নিয়েই আমরা ব্যস্ত। তাই যেগুলি চলছিল সে গুলিও বন্ধ।” ক্র্যাশার বন্ধ থাকায় তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের নেতা বাশারুল ইসলাম জানান, “আচমকা ক্র্যাশার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়বে হাজার হাজার শ্রমিক। পেটের জ্বলায় তারা আইন হাতে তুলে নেবে। সরকার দ্রুত নজর দিলে সকলের খুব ভাল হবে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.