সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: সকালেই মহল্লায় হাজির ‘ডাক্তারবাবু’। তবে রোগী দেখার সেই ব্যাগটা নেই। পরনে ফুলশার্ট–প্যান্ট ছেড়ে পোড়া ইট রঙা পাঞ্জাবf, সঙ্গে সাদা ধবধবে পাজামা আর পা ঢাকানো চামড়ার চটি। পাঞ্জাবfতে লাগানো তৃণমূলের সাদা রঙের ব্যাজ। এক পলকে দেখলেই মনে হবে পুরো ‘ভোটবাবু’ লুক। সত্যিই তো, ভোটের দামামা যে বেজে গিয়েছে। তাই আপাতত রোগী দেখার ব্যাগটাকে সরিয়েই রেখেছেন। তাই একেবারে রাজনীতিকের পোশাকে দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রথম রবিবাসরীয় প্রচারে বের হন পুরুলিয়া লোকসভা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী মৃগাঙ্ক মাহাতো।
রবিবারের সকালটা তিনি তার রাঘবপুর মোড় এলাকায় বাড়ির পাশেই রাঘবপুর গ্রামের জন্য রেখেছিলেন। এই রাঘবপুর মহল্লায় সকলেই প্রায় তাঁর চেনা। লাগোয়া গ্রাম বলে শুধু নয়। তিনি যে আসলে ‘ডাক্তারবাবু’। ছিলেন পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো সদর হাসপাতালের চক্ষু চিকিৎসক। ২০১৪ সালেই চাকরি ছেড়ে রাজনীতির আঙিনায় এসে এই কেন্দ্রেই তৃণমূলের ভোট প্রার্থী হয়ে সাংসদ হন।
[ দলের প্রতি বীতশ্রদ্ধ, কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে বীরভূমের প্রাক্তন জেলা সভাপতি সিরাজ জিম্মি ]
শনিবারই দলের তরফে এই জেলার পর্যবেক্ষক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় পুরুলিয়ার জয়পুরে বুথ স্তরীয় কর্মিসভায় ‘ডাক্তারবাবু’-কে সার্টিফিকেট দিয়ে বলে গিয়েছেন, তৃণমূলের যে পাঁচ জন সাংসদ মানুষের দাবি-দাওয়া মেনে নির্দিষ্ট সময়ে খুব ভালভাবে কাজ করে সাংসদ অর্থ তহবিল খরচ করেছেন সেই তালিকায় রয়েছেন মৃগাঙ্ক মাহাতো। যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা পর্যবেক্ষকের কাছ থেকে এমন শংসাপত্র পেয়ে একেবারে কনফিডেন্ট সাংসদ। তাই এদিন প্রচারে এসে বললেন, “বিরোধীরা কে কী কথা বলছে, কে কী করছে দেখার দরকার নেই। তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে কাজ করেছেন, সেই সঙ্গে তাঁর অনুপ্রেরণায় আমি যা কাজ করেছি সেই কাজ দেখেই সাধারণ মানুষ আমাকে ভোট দেবেন। ফলে আবারও বিপুল ভোটে জয়লাভ করব।” তাই এদিন এই এলাকার মানুষজনও ‘ডাক্তারবাবু’-কে এমন ‘ভোটবাবু’ লুকে দেখে জানিয়ে দিয়েছেন, এই গ্রামে পা রাখার দরকারই নেই। ভোট ‘ডাক্তারবাবু’-র নামের পাশেই পড়বে।
তবে ভোটাররা এমন কথা যতই বলুক। ভোট বড় বালাই! তাই কখনও নমস্কার করে, কখনও ভোটারদের হাত ধরে আবার কখনও শিশু কোলে নিয়ে রাঘবপুরে রবিবাসরীয় প্রচারে ঝড় তোলেন সাংসদ মৃগাঙ্ক মাহাতো। শুধু বাড়ি-বাড়ি ঘুরে ভোট চাওয়া, বা মোড়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে তৃণমূলের প্রার্থী হিসাবে তুলে ধরাই নয়। একেবারে কর্মীর মত হাতে রঙ-তুলি নিয়ে এই রাঘবপুর মহল্লায় দেওয়ালও লেখেন তিনি। প্রচার পথে মন্দির দেখলেই সেখানে মাথা ঠেকিয়ে প্রণাম করেন। রাঘবপুর গ্রামের এক বধূ রথী বাউরি বলেন, “ডাক্তারবাবু কেন যে এখানে এসেছেন। অন্য জায়গায় সময় দিতে পারতেন। ভোটটা তো আমরা তৃণমূলকেই দেব।” গত পাঁচ বছরে সাংসদ যে ঢালাই রাস্তা, সোলার লাইট সবই দিয়েছেন এই মহল্লাকে। সেই সঙ্গে চোখের কোন সমস্যা হলেই দিন কি রাত কালো ব্যাগ নিয়ে যে হাজির হন ‘ডাক্তারবাবু’।
ছবি- অমিত সিং দেও
[ ‘হাততালির জন্য এলাকায় মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেবেন না’, কর্মীদের সতর্ক করলেন শতাব্দী ]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.