সৌরভ মাজি, বর্ধমান: দু’হাত ভরে নবনির্মিত পিচ রাস্তা থেকে কুঁচো পাথর তুললেন। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা জেলা পরিষদের বাস্তুকারের হাতে কিছুটা তুলে দিলেন। তার পর একমুঠো পাথর ওই ইঞ্জিনিয়ারের প্যান্টের পকেটে ভরে দিলেন। গ্রামবাসীরা এই দৃশ্য দেখে আনন্দে হাততালি দিতেই থামিয়ে দিলেন। ইঞ্জিনিয়ারকে বললেন, “আপনার এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার, সুপারিনটেনডেন্ট ইঞ্জিনিয়ারকে দেবেন এগুলো। বলবেন, নতুন রাস্তা থেকে তুলে আমি পাঠিয়েছি।”
পথশ্রী প্রকল্পে নবনির্মিত রাস্তার এমন বেহাল রাস্তা দেখে ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেননি বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ কীর্তি আজাদ। এই রাস্তা নির্মাণে দেখভালের দায়িত্বে থাকা দুই ইঞ্জিনিয়ারকে সেখানে বলেন, “আপনাকে যে পাথর দিলাম তা আপনার ঊর্ধ্বতন ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়েছে বলবেন এগুলো দিয়ে কি করা যায়। আর তাঁকে বলবেন এমপি পরিদর্শনে এসেছে অথচ তিনি এলেন না। একজন অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠিয়েছেন। এটা লজ্জার।” এর পরই রাস্তার দেখভালের দায়িত্বে থাকা ইঞ্জিনিয়ারদের কড়া ধমক দেন কীর্তি। রাস্তার কেন এমন হাল কেন হয়েছে প্রশ্নে এক ইঞ্জিনিয়ার সাংসদকে বোঝাতে যান, “ট্রাক্টর ওঠার ফলে রাস্তা এমন হয়েছে। ঠিক করে দিতে হবে।” সাংসদ আরও ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, “ঠিক করে দিতে হবে না। আমি সাসপেন্ড করব। টারমিনেট করব। মমতা দিদির সরকার গরিব মানুষের জন্য রাস্তা নির্মাণ করেছেন। তার এমন হাল হয়েছে আপনাদের জন্য।” এই রাস্তা নির্মাণের কাজে বড় ধরনের গণ্ডগোল হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে জেলা শাসককেও চিঠি দেবেন বলে জানান তৃণমূল সাংসদ।
মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের গলসির মনোহর-সুজাপুরে সাংসদের এই কাজে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। পথশ্রী প্রকল্পে গলসি-১ ব্লকের মনোহর-সুজাপুর গ্রামের প্রাথমিক স্কুল থেকে গলিগ্রাম লকগেট প্রযন্ত ২.৯ কিমি পিচরাস্তা তৈরি হয়েছিল। জেলা পরিষদের তহবিল থেকে ৯৭ লক্ষ ৪১ হাজার ৬২৩ টাকা খরচ করা হয়েছিল। গত ৬ মে রাস্তা নির্মাণের কাজ শেষ হয়। কিন্তু আড়াই মাসেরও কম সময়ে সেই রাস্তার পিচ উঠে গিয়েছে বহু জায়গায়। এমনকি রাস্তার অনেক জায়গাতে কুচো পাথরের উপর আদৌ পিচ দেওয়া হয়েছিল কি না তা বোঝার উপায় নেই। মনে হচ্ছে পাথর বিছানো রাস্তা। যা নিয়ে গ্রামবাসীদের যধ্যে তীব্র ক্ষোভ জমেছিল। যাতায়াতেও সমস্যা হচ্ছিল। এই বেহাল রাস্তার কথা গ্রামবাসীদের কাছে জানতে পেরে এদিন সরেজমিন পরিদর্শনে যান সাংসদ। জেলা পরিষদের ইঞ্জিনিয়ারদের তিনি পরিদর্শনে যাবেন বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠানো হয় সেখানে। যা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন সাংসদ।
এই রাস্তাটি আগে মাটির ছিল। পথশ্রী প্রকল্পে এবারই প্রথম পাকা করা হয়েছে। প্রায় কোটি টাকা খরচ করে পিচ রাস্তা হলেও দুই মাসের মধ্যে তা বেহাল হয়ে পড়েছে। কীর্তি আজাদ বলেন, “রাজ্য সরকার গরিব মানুষের জন্য কাজ করছে। মানুষের যাতায়াতের সুবিধার জন্য পিচ রাস্তা করে দেওয়া হয়েছে। রাস্তাটি এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ করতে তিন সপ্তাহ দেরি করা হয়েছে।” রাজ্য সরকার গরিব মানুষের জন্য উন্নয়ন করছে। আর সেটাকে কেউ কেউ কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা করছে। যারা সেই চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের কাছে আর্জি জানাবেন সাংসদ।
নবনির্মিত পথশ্রীর রাস্তা বেহাল হয়ে যাওয়া প্রসঙ্গে জেলা পরিষদের সভাধিপতি শ্যামাপ্রসন্ন বলেন, “ওই রাস্তা নিয়ে অভিযোগ আগেই পেয়েছি আমরা। ইঞ্জিনিয়াররা পরিদর্শন করে এসেছেন। রাস্তার হাল খারাপ রিপোর্ট মিলেছে। ঠিকাদারকে নতুন করে রাস্তা গড়ে দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি ঠিকাদারের প্রাপ্য অর্থ আটকে রাখা আছে। বর্ষার কারণে ঠিকাদার সংস্কারের কাজ শুরু করতে পারেনি। বর্ষার কাজ হবে।” এদিকে, সাংসদের এদিনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন সভাধিপতি। তিনি বলেছেন, “সাংসদ আর একটু খোঁজ নিয়ে ওখানে গেলে ভালো করতেন। জেলা পরিষদ আগেই ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা জেনে গেলে ভালো করতেন। মানুষের ভুল বার্তা যেত না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.