নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: আশায় বুক বেঁধেছিলেন সবাই৷ মতুয়াদের অগ্রাধিকার দিতে নরেন্দ্র মোদি-সহ বিজেপি শীর্ষনেতাদের প্রচারে সকলেই ইতিবাচক ইঙ্গিত পেয়েছিলেন৷ তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন সাংসদ মমতাবালা ঠাকুরকে লক্ষাধিক ভোটে হারানোর পর শান্তনু ঠাকুর বোধহয় মোদির দ্বিতীয় মন্ত্রিসভায় পেতে চলেছেন৷ স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন মতুয়া ভক্ত ও স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব৷ কিন্তু আশা ভঙ্গ হয়ে বাড়ছে হতাশা৷
মতুয়া জনপ্রতিনিধি শান্তনু ঠাকুরকে এবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভায় জায়গা দেবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, আশা ছিল এমনই। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে মতুয়া ভক্তদের চোখ ছিল টিভির পর্দায়। নরেন্দ্র মোদির মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া মন্ত্রীরা একে একে শপথ নিচ্ছেন, আর উৎকণ্ঠার পারদ বাড়ছে তাঁদের। এই বুঝি মন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা হয় সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শান্তনু ঠাকুরের নাম। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা না হওয়ায় হতাশ মতুয়া ও বিজেপি কর্মীরা। তবে তার জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতি কোনও অভিমান নেই অনেকেরই। মতুয়া ভক্তদের কথায়, ‘এবার না হোক ভবিষ্যতে শান্তনু নিশ্চয় মন্ত্রী হবেন।’ এদিন বিকেলেও দিল্লি থেকে ফোনে শান্তনু জানিয়েছিলেন, মন্ত্রিত্ব নিয়ে তিনি কিছুই জানেন না৷ লোকসভা ভোটের ফলপ্রকাশের পর অবশ্য বিজেপি প্রার্থী ওই বিষয়ে বলেছিলেন, ‘দলীয় নেতৃত্ব যা সিদ্ধান্ত নেবেন তাই গ্রহণ করব।’
বৃহস্পতিবার সারাদিন হরিচাঁদ গুরুচাঁদ মন্ত্র জপেছেন সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ ক্ষিতিশ বিশ্বাস। জ্যৈষ্ঠের গরম উপেক্ষা করে সারাদিন ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন চায়ের দোকানে বসে অপেক্ষা করেছেন তিনি৷ সন্ধে থেকে চা খেয়েছেন দফায় দফায়। কিন্তু টিভির পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে একবার ও দোকান থেকে বের হননি তিনি। টানা দেখেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানের শেষভাগে মাথা নেড়ে হতাশ গলায় তিনি বললেন, ‘বড় আশা নিয়ে বসেছিলাম, ছোট ঠাকুর মন্ত্রী হবেন৷ কিন্তু তা বোধহয় আর দেখে যাওয়া হল না।’
শুধু ক্ষিতিশবাবুই নন, আরও অনেক মতুয়া ভক্তই টিভির সামনে ঠায় বসেছিলেন বৃহস্পতিবার সন্ধেয়। কেউ ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়ি সংলগ্ন চায়ের দোকানে, কেউ কামনা সাগরের পাড়ে অফিসঘরে৷ ঠাকুরনগর বাজারের টিভির দোকানগুলিতে ভিড় ছিল যথেষ্ট৷মন্ত্রী হিসেবে শান্তনুর নাম ঘোষণা হলে হরির লুট দেবেন বলে বাতাসাও কিনে রেখেছিলেন মতুয়াভক্ত ত্রিলোচন হালদার।দোকানী দুপুর থেকেই চালিয়ে রেখেছেন দোকানের টিভি৷ চা বানানোর ফাঁকে তাঁর চোখও বারবার চলে যাচ্ছিল টেলিভিশনের পর্দায়। তিনি বললেন, ‘ঠাকুরনগরবাসীর বড় আশা করে ছিল, মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর রাজ্যের মন্ত্রী হওয়ার পর তাঁর ছেলে কেন্দ্রের মন্ত্রী হবেন৷ দেখা যাক পরে কোনও প্রতিমন্ত্রীর পদ মেলে কিনা।’
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে বাংলায় ভাল ফল করেছে বিজেপি। দুই থেকে বেড়ে সাংসদ সংখ্যা ১৮। ফলে বাংলা থেকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সংখ্যা বাড়বে বলে মনে করছেন অনেকেই। এমনকী, বৃহস্পতিবার সকালে শান্তনু ঠাকুরের কাছে ফোনও এসেছিল প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে, রাজঘাটের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার জন্য৷ আশা বাড়ছিল ক্রমশ৷ কিন্তু সন্ধে গড়াতেই সব আশা নিভে গেল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.