নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: পূর্বপরিকল্পনামতো মহাসমারোহেই সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি দেবীর শেষকৃত্য সম্পন্ন হল। বনগাঁর ঠাকুরনগরের মতুয়া কলোনিজুড়ে তাঁর মরদেহ নিয়ে শোভাযাত্রার পর পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয়। সংঘের অন্যতম প্রধান তথা বীণাপাণি দেবীর প্রয়াত স্বামী প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের বেদির পিছন দিকেই মায়ের মুখাগ্নি করেন ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর। বিকেল প্রায় সাড়ে তিনট নাগাদ গোটা শেষকৃত্য সমাপ্ত হয়।
[মাদকাসক্তদের ছবি আঁকা শিকিয়ে মূলস্রোতে ফেরাচ্ছেন শিলিগুড়ির যুবক]
মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি শতায়ু বীণাপাণিদেবী তথা বড়মার শেষযাত্রা ঘিরেও প্রকাশ্যে ঠাকুরবাড়ির দ্বন্দ্ব। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ বীণাপাণি দেবীর মরদেহ নিয়ে বেরনো হয় ঠাকুরবাড়ি থেকে। কিন্তু ভক্তদের একাংশের আপত্তিতে তা ফের ফিরিয়ে আনা হয়। এরপর পরিবারের সব সদস্য, অগনিত ভক্ত, স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা সমবেতভাবে মৃতদেহের সঙ্গে পদযাত্রায় শামিল হন। সামনের একটি চার্চে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হয় বীণাপাণিদেবীর শববাহী শকট। পিআর ঠাকুর কলেজের সামনে কিছুক্ষণের জন্য তা রাখা হয়। সেখানেই পথচলতি মানুষজন তাঁদের শ্রদ্ধেয় বড়মাকে মালা দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। ঠাকুরনগরের বিভিন্ন রাস্তা ধরে পদযাত্রা চলে। পদযাত্রার সামনের সারিতে ছিলেন তৃণমূল সাংসদ তথা ঠাকুরবাড়ির পুত্রবধূ মমতাবালা ঠাকুর। আর পিছনের সারিতে ছিলেন বীণাপাণি দেবীর নাতি, আপাতত বিজেপি শিবিরের ঘনিষ্ঠ শান্তনু ঠাকুর। যাত্রাপথ নিয়েও দুপক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। কোন পথে শোভাযাত্রা যাবে, তা নিয়ে খানিক তর্কাতর্কি চলে। পরে পুলিশ নির্দিষ্ট রুট ঠিক করে দেয়। সেই পথেই এগোয় শোভাযাত্রা। দুপুর দুটোর কিছু পরে তা পৌঁছায় ঠাকুরনগর স্টেশনে।
সেই পথে শোভাযাত্রা ঘুরে ফের হাজির হয় ঠাকুরবাড়িতে। সেখানে প্রথমরঞ্জন ঠাকুরের সমাধির পাশে বড়মার দেহ রাখা হয়। শোকসঙ্গীত করেন ভক্তরা, চলে কীর্তনও। এরপর পুলিশের তরফে সৎকারের কথা বলা হয়। অন্দরের খবর, তাতে শান্তনু ঠাকুর জানান, ঠাকুরবাড়িতে বিজেপি নেতা মুকুল রায়, কৈলাস বিজয়বর্গীয়রা যাবেন। তাঁরা যাওয়ার পরেই অন্ত্যেষ্টি হবে। এনিয়ে তৃণমূলপন্থী মতুয়া সম্প্রদায়ের সঙ্গে ফের কিছুটা মতবিরোধ তৈরি হয়। এরপর পৌনে তিনটে নাগাদ বীণাপাণি দেবীর মরদেহের কাছে গিয়ে মতুয়া সম্প্রদায়ের রীতি অনুযায়ী বাড়ির সদস্যরা বড়মার পায়ের ছাপ নেন। প্রমথরঞ্জন ঠাকুরের মূর্তি এবং বেদির সামনে রাখা হয় দেহ। সেখানেই গান স্যালুট দেওয়া হয় পুলিশের তরফে।
[গাইঘাটায় বড়মার শেষযাত্রা, মৌন মিছিলে পা মেলালেন মতুয়া ভক্তেরা]
এরপর মতুয়া ভক্তরা নিজেদের কাঁধে বীণাপাণি দেবীর দেহ নিয়ে বাড়ির পিছনদিকে যান। বাড়ির আমগাছের কাঠ জড়ো করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী, ঠাকুর পরিবারের সদস্যদের দাহকাজ হয় বাড়ির আমকাঠেই। হাওড়ার এক ভক্ত দাহ করার জন্য ঘি নিয়ে যান। তিনটের কিছু পরে বীণাপাণি দেবীর ছোট ছেলে মঞ্জুলকৃষ্ণ ঠাকুর মায়ের মুখাগ্নি করেন। এভাবেই অন্ত্যেষ্টি সম্পন্ন হয় সারা ভারত মতুয়া মহাসংঘের প্রধান উপদেষ্টা বীণাপাণি দেবীর। স্থানীয় বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় বলেন, ‘বীণাপাণি দেবীর সঙ্গে তৃণমূল তৈরির আগেও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গভীর সম্পর্ক ছিল। ঠাকুরনগরের ওই এলাকায় কলোনি এঁদেরই তৈরি। বড়মার মৃত্যুর পরও আমাদের সঙ্গে ঠাকুরবাড়ির সম্পর্ক অটুট থাকবে।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.