দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: কন্যাসন্তান হয়েছে ভেবে ভুল করে সদ্যোজাত পুত্রসন্তানকে রাস্তার ধারে ঝোপের মধ্যে রাতের অন্ধকারে ফেলে দিয়ে গেল মা। ঠান্ডার কামড় সহ্য করতে না পেরে ঝোপের মধ্যেই মৃত্যু হয় সদ্যোজাতর। সোমবার এই শিশুর মৃতদেহ উদ্ধারের পরই ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ সদ্যোজাতর ওই সন্তানের মাকে গ্রেপ্তার করে। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনাটি ঘটেছে পান্ডুয়া থানার সিমলাগড়ের চাপাহাটি বকুলতলা এলাকায়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, যে জায়গায় এই সদ্যোজাতর মৃতদেহ স্থানীয়রা দেখেন সেই জায়গাতেই আজ থেকে ১৪ মাস আগে আর একটি সদ্যোজাত শিশুকন্যার দেহ উদ্ধার হয়েছিল। তাই সোমবার দুপুরে পান্ডুয়া থানার পুলিশ যখন সদ্যোজাতর মৃতদেহ উদ্ধার করতে যায় তখন এলাকার মানুষ পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখায়। তারা দাবি করে, ১৪ মাস আগে ওই একই জায়গা থেকে আর এক সদ্যোজাতর দেহ উদ্ধার হয়েছিল তার এখনও কিনারা হয়নি। তাই অবিলম্বে এই সদ্যজাতর মৃত্যুর পিছনে কারা রয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতে হবে বলে স্থানীয়রা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে। এরপরই পুলিশ তদন্তে নেমে সোমবার রাতেই সিমলাগড়ের চাপাহাটি বকুলতলা থেকে অর্চনা মণ্ডল নামে এক গৃহবধূকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু করে। জেরায় ওই গৃহবধূ কান্নায় ভেঙে পড়ে। তার কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে।
পুলিশি জেরায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসে। গৃহবধূ এটাও স্বীকার করে আজ থেকে ১৪ মাস আগে ওই জায়গা থেকে যে সদ্যোজাত শিশুকন্যার দেহ উদ্ধার হয়েছিল সেই শিশুকন্যাটিও তার ছিল। এরপরই অর্চনা যখন জানতে পারে কন্যাসন্তান হয়েছে ভেবে ভুল করে তার নিজের পুত্রসন্তানকে ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়ে এসেছে তখন নিজেরই কৃতকর্মের জন্য কান্নায় ভেঙে পড়ে ওই গৃহবধূ। গৃহবধূর স্বামী শিবু মণ্ডল ঘটনার পর থেকেই পলাতক। নিজের কৃতকর্মের জন্য নিজেরই কপাল চাপড়াচ্ছেন অর্চনা দেবী। কাঁদতে কাঁদতে জানালেন, দিন আনি দিন খাওয়া সংসারে তার নিজের তিনটে কন্যাসন্তান রয়েছে। একজন প্রথম শ্রেণি, একজন সপ্তম শ্রেণি ও বড় মেয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ে। ১৪ মাস আগে তার একটি কন্যাসন্তান হয়েছিল। পরপর তিনটে কন্যাসন্তান হওয়ার পর চতুর্থ সন্তানও কন্যা হওয়ায় খরচ চালাবেন কী করে এই ভেবে তাকেও রাস্তার ধারে ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়ে এসেছিল।
অর্চনা জানায়, তার এই পঞ্চম সন্তানটি বাড়িতেই জন্মায়। পর পর কন্যাসন্তান হতে থাকায় পঞ্চমবার যখন সন্তানের জন্ম দেন ওই গৃহবধূ তখন কন্যাসন্তান হয়েছে ভেবে তার মুখও দেখেন নি। আর এই ভাবনার বশবর্তী হয়ে নিজের পুত্রসন্তানকে কন্যাসন্তান ভেবে তাকে ঝোপের মধ্যে ফেলে দিয়ে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন মা। বিজ্ঞানের যুগে যেখানে নারীরা মহাকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গিয়েছে সেখানে মেয়েদের এই পরিনতি আজকের সমাজের লজ্জা। এক পুলিশ আধিকারিক জানান, সমাজ এখনও মধ্যযুগে পড়ে আছে। আগে গ্রামে একজন শিক্ষিত থাকলে তিনি আর দশ জনকে শিক্ষিত করে তোলার চেষ্টা করতেন। এখন সকলেই নিজেকে নিয়ে চিন্তা করে। সকলেই ভাবে তার নিজের ছেলেমেয়ে প্রতিষ্ঠিত হলেই হবে। কিন্তু সমাজের এই শিক্ষিত মানুষদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা যদি আর দশজনকে সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে তাদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করেন তাহলে আজকের যুগে মেয়েদের এভাবে বলি হতে হত না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.