বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ২৪ ঘণ্টাও কাটেনি। মায়ের মুখে আগুন দিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। মায়ের সৎকার করে শোকভরা মন নিয়ে কাটিয়েছিলেন রাত। কিন্তু রাত কাটতেই শরীরে শুরু হয় জ্বালা-যন্ত্রণা। তা তো হওয়ারই ছিল। মায়ের মতো নিজেও যে চুমুক দিয়েছিলেন বিষাক্ত মদের গ্লাসে। গুলবরের ঠেক থেকে মা বেরিয়ে যাওয়ার পর। সেই কারণেই বিষক্রিয়ার প্রভাব পড়েছিল একটু দেরিতে।
হঠাৎ শুরু হয় কষ্ট। কৃষ্ণ মাহাতোকে নিয়ে যেতে হয় শান্তিপুর হাসপাতালে। সেখান থেকে কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে। পরে, সেখানেই মারা যায় কৃষ্ণ। মাঠে দিনমজুরি করতেন কৃষ্ণ। মা ভালুয়া মাহাতো সবজি বিক্রি করতেন। ভালুয়া বুধবার ভোরে সবজি নিয়ে গিয়েছিলেন হাওড়ার বালিতে। ট্রেনেই অসুস্থ বোধ করেন। কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে গেলে মারা যান। খবর পেয়ে কয়েকজনকে নিয়ে গিয়ে মায়ের মৃতদেহ নিয়ে এসে সৎকার করেন কৃষ্ণ। যদিও রাত পোহাতেই অসুস্থ বোধ করেন তিনিও। তারপরই মৃত্যু হয় তাঁর। ওই বিষমদে মৃত্যু হয়েছে আরও দুই ভাইয়ের। শান্তিপুরের চৌধুরিপাড়ায় বাড়ি মৃতদের।
[স্বামীর বন্ধুর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে প্রতারণার শিকার গৃহবধূ]
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত চারজনের নাম চন্দন মাহাতো ওরফে গুলবর, লক্ষ্মী মাহাতো, ভালুয়া মাহাতো ও কৃষ্ণ মাহাতো। যে ঠেক থেকে মৃত ও অসুস্থরা চোলাই পান করেছিলেন, গুলবর ছিলেন সেই ঠেকের মালিক। মঙ্গলবার সন্ধেয় তিনিও পান করেছিলেন বিষমদ। যদিও বিষাক্ত মদ বলে যদি গুলবর জানতেন, তাহলে তিনি কি পান করতেন? উঠছে সেই প্রশ্নও। তাঁর স্ত্রী লক্ষ্মীয়া মাহাতো অন্তঃসত্ত্বা। বিষমদ কেড়ে নিয়েছে তাঁর স্বামী ও দেওরকে। কথা বলার অবস্থায় নেই লক্ষ্মীয়া। কাঁদতে কাঁদতে লক্ষ্মীয়া জানান, “আমাদের ঠেকের মদ বিষাক্ত ছিল তা স্বামীর অজানা ছিল। জানলে নিজে খেতেন না। নদীর ওপার থেকে আসত মদ।” কাঁদছিলেন সোনামণি মাহাতোও। ওই বিষমদ কেড়েছে তাঁর দাদা ও মায়ের প্রাণ। বুধবার মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়ে চলে আসেন বাপের বাড়ি। ভেবেছিলেন মায়ের মৃতদেহ সৎকার সেরে ফিরে যাবেন শ্বশুরবাড়ি। তা আর হয়ে ওঠেনি। তাঁর দাদা কৃষ্ণ মাহাতোও পান করেছিলেন গুলবরের বিষাক্ত মদ। কিন্তু, মায়ের সঙ্গে তাঁরও প্রাণ গেল বেঘোরে।
ছবি: সুজিত মণ্ডল৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.