অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: ডুমুরজলায় (Dumurjola) সুইমিংপুলে সাঁতার শিখতে গিয়ে ৯ বছরের বালকের ডুবে মৃত্যুর ঘটনায় প্রশিক্ষকের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠল। বিদীপ্ত ঘোষ নামে ওই বালকের মা সুমনা রায় ঘোষ শনিবার অভিযোগ করলেন, শুক্রবার বিকেলে সুইমিংপুলের এক প্রশিক্ষক তাঁর ছেলেকে সাঁতার (Swimming) শেখাতে গিয়ে পুলের মাঝখানে ফেলে দেয়। সেখান থেকে পাড়ে আসতে গিয়েই অতিরিক্ত জল খেয়ে দম আটকে গিয়ে মৃত্যু হয় বিদীপ্তর। ওই প্রশিক্ষক বিদীপ্তকে আদৌ সাঁতার শেখান না। কিন্তু শুক্রবার ওই প্রশিক্ষকই (Trainer) গাইড করেছিলেন। আর তার দায়িত্বজ্ঞানহীন কাজই ছেলের মৃত্য়ুর জন্য দায়ী।
তবে শুধু প্রশিক্ষকের গাফিলতি নয়, ডুমুরজলা স্পোর্টস কমপ্লেক্সে ‘স্বামীজী সংঘ’ নামে ওই ক্লাবটির সুইমিং পুলের পরিকাঠামো নিয়েও অভিযোগ তোলেন মৃত বালকের পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় বাসিন্দারা। তাঁদের অভিযোগ, ৫০ মিটার লম্বা ও ২৫ মিটার চওড়া সুইমিং পুলটির জল নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ঘোলা জলে শামুক, মাছ ঘুরে বেড়ায়। তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়ে বালক-বালিকাদের সাঁতার শেখানো হয়। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, বালকের দেহ ময়নাতদন্তে পাঠিয়ে কীভাবে মৃত্যু তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পরিবারের তরফে লিখিত অভিযোগ দায়ের হলে ঘটনার তদন্ত শুরু হবে।
এদিকে, ওই ক্লাবের বিরুদ্ধে ওঠা গাফিলতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন সম্পাদক তপন দাস। শনিবার তিনি জানালেন, শুক্রবার বিদীপ্ত যখন সাঁতারের প্রশিক্ষণ নিচ্ছিল, তখন ৯ জন প্রশিক্ষক সুইমিং পুলে ছিলেন। প্রায় ৩০ জনকে অন্যান্য দিনের মতোই যত্ন সহকারেই প্রশিক্ষণ দিচ্ছিলেন তাঁরা। কারও কোনও গাফিলতি ছিল না। সম্পাদকের কথায়, ”কোনও নির্দিষ্ট বালক-বালিকার পিছনে নির্দিষ্ট কোনও প্রশিক্ষক থাকে না। সকলেই সকলকে সাঁতার শেখায়। প্রতিদিনই ৯ থেকে ১০ জন প্রশিক্ষকের অধীনে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ জন করে সাঁতার শেখে।”
১৯৮৩ সাল থেকে চালু হওয়া ডুমুরজলা স্টেডিয়ামের ওই সুইমিং পুলটি নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। আগে ওখানে একটি পুকুর ছিল। ওই পুকুরটিকে সাজিয়েই পরবর্তীকালে সুইমিং পুলটি তৈরি করা হয়। বর্তমানে এর গভীরতা প্রায় ৪ ফুট। অন্যদিকে ঘটনার পরই শনিবার সকালে ডুমুরজলায় সুইমিংপুলটি পরিদর্শনে যান হাওড়া পুরসভার মুখ্য প্রশাসক সুজয় চক্রবর্তী। তিনি জানান, জায়গাটি পুরসভার নয়, হাওড়া ইমপ্রুভমেন্ট ট্রাস্ট বা এইচআইটির। আর হাওড়া শহরের বুকে এই ধরনের সুইমিং পুলকে লাইসেন্স পুর প্রশাসন দেয় না। হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের তরফে এদের লাইসেন্স দেওয়া হয়। তবুও হাওড়া পুর প্রশাসনের তরফে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এই প্রসঙ্গে হাওড়া ডিস্ট্রিক্ট সুইমিং অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক দেবাশিস পাত্র জানালেন, তাঁরাই ক্লাবগুলিকে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সুইমিং পুল করার অনুমোদন দেন। এই ধরনের অনভিপ্রেত ঘটনা যাতে না ঘটে তার জন্য সুইমিংপুলগুলির উপর এবার নজরদারির পরিকল্পনা করছেন তাঁরা। এই ঘটনায় একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়া বিদীপ্তর পরিবার শোকে ভেঙে পড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.