বিপ্লব চন্দ্র দত্ত , কৃষ্ণনগর: সাংসারিক ছোটখাটো অশান্তি লেগেই ছিল। সেই অশান্তির জেরে একইদিনে আত্মহত্যা করলেন মা ও ছেলে। গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় মা ও ছেলের মৃতদেহ একই বাড়ির দু’টি ঘর থেকে শুক্রবার দুপুরে পুলিশ উদ্ধার করে। মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে নদিয়ার নবদ্বীপ পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের প্রাচীন মায়াপুরের জাতীয় বিদ্যালয় পাড়ার ২ নম্বর লেনে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম মায়ারানী হালদার (৫৪) ও নিরঞ্জন হালদার(২৮)। নিরঞ্জন ছিলেন মোটরসাইকেল গ্যারেজের মালিক। আর স্থানীয় একটি স্কুলের মিড ডে মিলের রান্নার কাজ করতেন তার মা মায়ারানি দেবী। শুক্রবার দুপুরে মায়ারানীদেবীকে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় তার ঘর থেকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তার পাশের ঘর থেকে একইভাবে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় ছেলেকে। দু’জনকে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মাত্রই চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ওই ঘটনায় জাতীয় বিদ্যালয় পাড়া এলাকায় তীব্র চাঞ্চল্য দেখা দেয়। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, সাংসারিক অশান্তির জেরে আত্মহত্যা করেছেন মা ও ছেলে। মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, চার বছর আগে বিয়ে করেছিলেন মায়ারানিদেবীর ছোট ছেলে নিরঞ্জন। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুরের ডুমডুমি গ্রামের বাসিন্দা সুকুমার রাজবংশীর মেয়ে বাসনা রাজবংশীকে বিয়ে করেছিলেন। বিয়ের পর তাঁরা সুখেই সংসার করছিলেন। মাসখানেক আগে নিরঞ্জনবাবুর স্ত্রী বাসনা বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে গঙ্গারামপুরে যান। বৌমাকে তাঁর বাপের বাড়িতে পৌঁছে দিতে গঙ্গারামপুরে যান মায়ারানি। কিন্তু বৌমাকে সঙ্গে করে বাড়ি না ফেরায় মায়ের সঙ্গে একপ্রকার মন-কষাকষি শুরু হয় নিরঞ্জনের। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, বিয়ের পর একপ্রকার সুখে শান্তিতে সংসার করছিলেন নিরঞ্জন ও বাসনা। কিন্তু মাস খানেক আগে নিরঞ্জনের শ্বশুরের অসুস্থতার খবর আসার কয়েক দিন পরেই অশান্তি শুরু হয়। স্ত্রীকে বাপের বাড়িতে রেখে ফিরে আসায় মায়ারানি দেবীর সঙ্গে নিরঞ্জনের মন-কষাকষি শুরু হয়।
মায়ারানী হালদার স্থানীয় জাতীয় বিদ্যালয় স্কুলে মিড- ডে মিলের রান্নার কাজ করতেন। নিরঞ্জন মোটরবাইকের গ্যারেজ চালাতেন। প্রতিবেশীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুরে মায়াদেবী রান্নার কাজে যাননি। তাই তার স্কুলের সহকর্মীরা বাড়িতে খোঁজ করতে এসে দেখেন মায়ারানি দেবী নিজের ঘরে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছেন। প্রতিবেশীদের অনুমান, সম্ভবত মায়ের এই দৃশ্য দেখে সহ্য করতে পারেনি বাড়ির ছোট ছেলে। এরপর নিরঞ্জনও নিজের ঘরে গিয়ে সিলিং ফ্যানে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলে পড়েন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.