পলাশ পাত্র: ইরাকে কাজে যাওয়া ৩৯ জন ভারতীয়ই মৃত। জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হওয়ার চার বছর পর মন্ত্রী সুষমা স্বরাজ সংসদে তাঁদের মৃত্যুর খবর ঘোষণা করেন। আর তারপরই অপহরণ হওয়া নদিয়ার তেহট্টর খোকন শিকদারের বাড়িতে নামল কান্নার রোল।
[ মসুলে নিহতদের মৃত্যুর খবর কেন ৪ বছর জানানো হয়নি, জবাব সুষমার ]
২০১৪ সালের ১৫ জুন স্বামী খোকন শিকদারের সঙ্গে শেষ ফোনে কথা হয় স্ত্রী নমিতা শিকদারের। তারপর থেকে প্রায় চার বছর হতে চলল ইরাকের মসুল শহরে কাজে যাওয়া খোকনবাবুর সঙ্গে কোন যোগাযোগ নেই। বাড়িতে থাকা নব্বই বছরের বৃদ্ধা মা শোভাদেবী, স্কুল পড়ুয়া আট বছরের ছেলে অভ্র আর প্রথম বর্ষের কলেজ ছাত্রী রীতার সঙ্গে স্ত্রী নমিতা এতদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলেন। কবে আসবে তাঁদের আদরের পরিজন, পথ চেয়ে দিন কাটছিল। কিন্তু এদিন বেলা বাড়ার সঙ্গে চাপড়ায় থাকা নমিতাদেবীর ভাই ফোন করে জানান, টিভিতে দেখাচ্ছে জঙ্গীদের দ্বারা অপহৃত ৩৯ জনই মারা গিয়েছেন। তড়িঘড়ি নমিতা শিকদার প্রতিবেশীদের বাড়িতে গিয়ে টিভিতে খবরটি দেখার পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন। তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া ছেলে অভ্র, বেতাই কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী রীতাও কাঁদতে থাকে। একে একে খোকনবাবুর বোন অনিতা, ভগ্নিপতি সুভাষ বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে আত্মীয়রা চলে আসেন বাড়িতে।
[ ৪ বছর ধরে কেন মিথ্যাচার সরকারের? ক্ষোভে ফুঁসছে মসুলে নিহত ভারতীয়দের পরিবার ]
নদিয়া থেকে তেহট্টর খোকন শিকদারের মতো চাপড়ার সমর টিকাদারও অপহৃত হন। প্রসঙ্গত ৯ ফেব্রুয়ারি বিদেশ মন্ত্রক থেকে রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে আইএস জঙ্গিদের দ্বারা অপহৃত তেহট্টর ইলশামারির খোকন শিকদারের পুত্র, কন্যা ও বোনের থেকে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে তেহট্ট এক বিডিও অফিসে তিনজনের রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। রক্ত সংগ্রহের জন্য বিডিও জাহাঙ্গীর মল্লিক ছিটকা পঞ্চায়েতের ইলশামারির শিকদার বাড়িতে গাড়ি পাঠিয়ে দেন। নমিতাদেবী তখনও জানিয়েছিলেন, “আমরা আজও অপেক্ষায়। রক্ত সংগ্রহের জন্য বাড়িতে বিদেশমন্ত্রক থেকে ফোন করা হয়। ওঁরা আমার সন্তান ছাড়াও ওর বোনের রক্ত নিয়েছে।” বিডিও জাহাঙ্গীর মল্লিক জানিয়েছিলেন, চিহ্নিতকরণের জন্য রক্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। রক্ত সংগ্রহের সময় বিদেশমন্ত্রকের প্রতিনিধিরা ছিলেন। ওঁরা রক্তের নমুনা ইরাকে কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেবে।
[ শরীরে ৯ বুলেটের জখম নিয়েও অপ্রতিরোধ্য, সেনায় ফিরছেন চেতন চিতা ]
২০১১ সালে খোকনবাবু ইরাকে কাজে যান। ফোনে বাড়িতে যোগাযোগ রাখতেন। টাকাও পাঠাতেন। কিন্তু তারপর আর বাড়ি ফেরেননি। ২০১৪ সালের ১৫ জুনের পর থেকে সমস্ত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। শেষ কথা হওয়ার সময় খোকনবাবু জানিয়েছিলেন আইএস জঙ্গিরা তাদের একটা দলকে অপহরণ করেছে। প্রবল কষ্টের মধ্যে একটা ঘেরা জায়গায় তাঁরা রয়েছেন। এ কথা আগেই জানিয়েছিলেন স্ত্রী নমিতা শিকদার। দীর্ঘ সময়ের মধ্যে নমিতাদেবী জেলা প্রশাসনের একাধিক কর্তা, রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপির রাহুল সিনহার কাছেও গিয়েছেন)এর দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু কিছুতেই কিছু হয়নি। তাঁদের একমাত্র অর্থ উপার্জনের মানুষটির খোঁজ না পাওয়ায় প্রবল অভাবের মধ্যে দিন গুজরান করছে শিকদার পরিবার। কিন্তু এদিন বাড়িতে সদস্যদের কাছে খবর আসতেই এলাকায় নেমে আসে শোকের পরিবেশ। বৃদ্ধা মা হার্টের রোগী হওয়ায় ছেলের কোন খবরই তাঁকে এখনও জানান হয়নি। তাঁকে পাশে মেয়ের বাড়িতে রাখা হয়েছে।
[ নবম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও অ্যাসিড মারার হুমকি দিল সহপাঠী! ]
নমিতাদেবী ও তার মেয়ে রীতা বলেন, সরকারী ভাবে যদি আগেই উদ্যোগ নেওয়া হত তাহলে ফিরিয়ে আনা যেত। দিল্লি থেকে বিদেশমন্ত্রী গেলেন। আরও অনেকে ইরাকে যান। আমরা তখনও আশায় ছিলাম। তবে তাঁদের বাড়িতে সরকারী ভাবে কোন খবর এখনও জানান হয়নি। ১৩ মার্চ সিআইডি অফিসাররা বাড়িতে আসে। একই সঙ্গে তাঁরা খোঁজ নেন রক্তের নমুনার বিষয়েও, জানান নমিতাদেবী। ঘটনা প্রসঙ্গে জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, নদিয়ার দুজন ইরাকে কাজে গিয়ে অপহৃত হয়। কিন্তু তাঁদের নিয়ে কোন খবর সরকারী ভাবে আমাদের কাছে আসেনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.