চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: সিআইডি-র জালে ধরা পড়ল বিহার পুলিশের ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ মাওবাদী টাইগার। সিআইডি ও পুলিশের যৌথ অভিযানে বরাকর স্টেশন থেকে টাইগার ওরফে জিতেন্দ্র সিংকে গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার বিকেলে গ্রেপ্তারির ঘটনা ঘটলেও স্বাধীনতা দিবসের দিন সকালে তা প্রকাশ্যে আসে। তবে টাইগার এক নয়, সহযোগী আরও একজনকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি। ধৃতের নাম হরেরাম পাসওয়ান। গ্রেপ্তারের পর প্রথমে বরাকর ফাঁড়ি ও পরে কুলটি থানায় নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। ধৃতদের কাছ থেকে নাইন এমএম পিস্তল ও কার্তুজ উদ্ধার হয়েছে। ঠিক কোন কাজে টাইগার পশ্চিবঙ্গে ঢুকেছিল জেরায় তা জানার চেষ্টা করছেন সিআইডি-র আধিকারিকরা।
সূত্রের খবর অনুযায়ী টাইগারের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের রেকর্ড বেশ দীর্ঘ। মাও যোগসূত্রের পাশাপাশি দুষ্কৃতী কার্যকলাপেও হাত পাকিয়েছিল জিতেন্দ্র। আদতে বিহারের ঔরঙ্গাবাদের বাসিন্দা জিতেন্দ্র, ঝাড়খণ্ডের মাওবাদীদের থেকে অস্ত্র প্রশিক্ষণও নেয়। এরপর বিভিন্ন মাও হানায় নেতৃত্ব দেওয়া থেকে শুরু করে আলাদা ভাবে সুপারি কিলার হিসেবেও রাতারাতি কুখ্যাত হয়ে ওঠে জিতেন্দ্র। সরাসরি মাওবাদীদের সঙ্গে যোগ দেওয়ার পরেই তার নতুন নাম হয় টাইগার। খুন, বিস্ফোরণ-সহ বিহার পুলিশের খাতায় ২০টি মামলা রয়েছে টাইগারের বিরুদ্ধে। বার তিনেক পুলিশের জালে ধরা পড়েও অজ্ঞাত কারণে বারবারই ছাড়া পেয়ে গিয়েছে টাইগার। প্রথমে ২০০৫-এ বিস্ফোরণে যুক্ত থাকার অভিযোগে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলেও রক্ষীদের সঙ্গে যোগসাজশ করে খুব শিগগির জেল থেকে পালিয়ে যায়। ফের মাও হানায় যুক্ত থাকার অভিযোগে ২০১৬-তে ঝাড়খণ্ডের সিমডেগা এলাকা থেকে ফের ধরা পড়ে টাইগার। এবারও জেল থেকে পালিয়ে যায় সে। ২০১৭-তে টাইগারের কার্যকলাপের তেমন কোনও হদিশ মেলেনি। চলতি বছরের শুরুতেই বিহারের এক নামী ব্যবসায়ীকে খুনের অভিযোগ ওঠে টাইগারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ, একে-৪৭ দিয়ে গুলি করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে। মাওবাদীদের কাছে একে-৪৭ কোথা থেকে এল তা নিয়ে ধন্দে পুলিশ। এই ঘটনার পর থেকেই ফের টাইগারের খোঁজে তল্লাশি শুরু করে বিহার পুলিশ। ধরা পড়ার ভয়ে তখন থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছিল টাইগার। ঝাড়খণ্ডের মাও অধ্যুষিত এলাকায় পালিয়ে যায় সে। সেখান থেকেই মঙ্গলবার ট্রেনে চড়ে এরাজ্যে ঢোকে জিতেন্দ্র। আসানসোলের বরাকর স্টেশন হয়ে ঠিক কোথায় যাচ্ছিল তা জানতে পারেনি সিআইডি।
জানা গিয়েছে, একদিন আগেই টাইগারের আসার বার্তা পেয়ে গিয়েছিল পুলিশ। একদিন আগে দুর্গাপুরে তিন সুপারিকে কিলারকে হাতেনাতে ধরে সিআইডি। সম্ভবত কোনও ব্যবসায়ী অথবা রাজনৈতিক নেতাকে খুনের উদ্দেশ্যেই দুর্গাপুরে ঢুকেছিল তিন অপরাধী। তবে কার্যসিদ্ধির আগেই সিআইডি-র কাছে খবর চলে আসায় তিনজনেই ধরা পড়ে যায়। ধৃতদের জেরা করেই সম্ভবত টাইগারের পশ্চিমবঙ্গে প্রবেশের খবর পায় সিআইডি। তারপর মঙ্গলবার বিকেলে বরাকর স্টেশন থেকে সহযোগী হরেরাম ও টাইগারকে গ্রেপ্তার করা হয়। ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। যদিও টাইগার প্রসঙ্গে মুখে কুলুপ এঁটেছে পুলিশ।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.