শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: একের পর এক প্রধান শিক্ষক, এমনকী ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকও অবসর নিয়ে চলেছেন। ফলে ‘অভিভাবকহীন’ হয়ে পড়ছে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো। এই পরিস্থিতিতেও কোনও হেলদোল নেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের। কোনও প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করছে না সংসদ। ফলে ক্ষোভে ফেটে পড়ছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। শিক্ষক সংগঠনগুলির অভিযোগ, অনেক আগেই রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে জেলা শিক্ষা সংসদকে। তা সত্ত্বেও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কোনও উদ্যোগ নিচ্ছে না শিক্ষা সংসদ, অভিযোগ এমনটাই। জেলা শিক্ষা সংসদের দায়িত্বজ্ঞান নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক সংগঠনগুলো।
প্রধান শিক্ষকহীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সমস্যার কথা মানছেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ শ্যামপদ পাত্র। তিনি বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকহীন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সমস্যা হওয়াটা স্বাভাবিক। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের স্থায়ী চেয়ারম্যান না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই স্থায়ী চেয়ারম্যান নিয়োগ হতে চলেছে। তার পরই প্রধান শিক্ষক নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’’ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় সাড়ে তিন হাজারেরও বেশি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নেই। সবই চলছে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক দিয়ে। উল্লেখ করা যায়, প্রায় দু’বছর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদে স্থায়ী চেয়ারম্যান নেই পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায়। বর্তমানে সংসদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হলেন জেলার জেলাশাসক। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলিতে সর্বশেষ প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হয়েছিল ২০১০ সালে। তখন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের হাতেই ছিল শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা। রাজ্যে পালাবদলের পর জেলা শিক্ষা সংসদের হাত থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে প্রথমে সহকারী শিক্ষক ও পরে প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা কেড়ে নেয় রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।
পরে ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এক নির্দেশিকা জারি করে অবশ্য প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা ফের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। অভিয়োগ, বছর পার হলেও প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কোনও উদ্যোগ নেয়নি পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রথামিক শিক্ষা সংসদ। ফলে সংসদের ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে শিক্ষক সংগঠনগুলি। বাম শিক্ষক সংগঠন এবিপিটিএ-র রাজ্য সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডল বলেন, ‘‘রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের ক্ষমতা জেলা সংসদের হাতে ফিরিয়ে দিয়েছে। তার পর থেকে ১১টি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ বিদ্যালয়গুলিতে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করে ফেলেছে। আরও তিনটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ নিয়োগ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে। কেবলমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ প্রধান শিক্ষক নিয়োগের কোনও উদ্যোগ নেয়নি। আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে একাধিকবার সংসদে স্মারকলিপি দিয়েছি। কোনও হেলদোল নেই। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার প্রাথমিক শিক্ষা নিয়ে একপ্রকার ছিনিমিনি খেলা হচ্ছে। এক দশকের বেশি বিদ্যালয়গুলি অভিভাবকহীন হয়ে পড়ে রয়েছে। কোনও মাথাব্যথা নেই জেলা শিক্ষা দপ্তরের।’’
একইভাবে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা কমিটির সদস্য গণেশ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক না থাকলে কী সমস্যা হয়, তার কোনও সম্যক ধারণা আছে বলে মনে হয় না জেলা শিক্ষা দপ্তরের। প্রধান শিক্ষক নিয়োগে জেলা শিক্ষা সংসদের বাধাটা কোথায়, আমরা আজও জানতে পারলাম না। এটাই আশ্চর্যের।’’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.