Advertisement
Advertisement
North Bengal

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উত্তরের সিন্ডিকেট রাজ! সরকারি চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তিনশোর বেশি ডাক্তার

যেসব চিকিৎসক চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা কেউ আর এ বিষয়ে অভিযোগ করেননি। তাই আসল ঘটনা অজানাই থেকে যাবে বলে আক্ষেপ চিকিৎসকদের একাংশের।

More than 300 doctors alleges that they forced to resign due to pressure of North Bengal lobby

প্রতীকী ছবি।

Published by: Sucheta Sengupta
  • Posted:October 24, 2024 8:42 pm
  • Updated:October 24, 2024 8:42 pm  

ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: “ধুর মশাই! স্বাস্থ্যে সিন্ডিকেট শুরু হয়েছিল ঠিক একযুগ আগে। ২০১২সালে।” পার্কসার্কাসে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন ডাক্তার পান্থ দাশগুপ্ত। তাঁর সটান অভিযোগ, “জলপাইগুড়ি আইএমএ শাখা এককভাবে কুক্ষিগত করেছিলেন ডাঃ সুশান্ত রায়। পান্থবাবু ও বাকিরা বিরোধিতা করায় মাত্র ছমাসের মধ্যে ২১জন ডাক্তারকে হয় বদলি অথবা এমন প্যাচে ফেলা হয় যে চাকরি ছাড়তে বাধ্য হন তাঁরা।” পান্থবাবু নিজেই ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ, তিনিও চাকরি ছাড়েন। স্যালারি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেন। অভিযোগ, “স্বাস্থ্য ভবনে উত্তরবঙ্গের কর্তৃত্ব এতটাই প্রবল ছিল যে অষ্টমীর রাতে এক চিকিৎসকের বাড়ি গিয়ে বদলির নির্দেশ ধরানো হয়!” আইএমএ রাজ্য শাখার এক সদস্যের আক্ষেপ, আসলে সবসময় সব তথ্য আসেনি। তাই সবসময়ে পদক্ষেপ নেওয়া যায় না।

তাহলে এক যুগে কত সরকারি ডাক্তার উত্তরের লবির কোপে পড়েছেন? কারও দাবি অন্তত তিনশো। কারও দাবি আরও বেশি। যেসব চিকিৎসক চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা কেউ অভিযোগ করেননি। তাই আসল ঘটনা অজানাই থেকে যাবে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ডাঃ প্রান্তর চক্রবর্তীর মতো প্রখ্যাত চিকিৎসক। প্রান্তরবাবুও অধ্যাপনার চাকরি ছেড়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হল এই আইএমএ আন্তরিক হলেও আদৌ কি সবসময় সব চিকিৎসক অধ্যাপককে রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে? উত্তর, না। আর সেই কারণেই আর জি করের এক চিকিৎসক অধ্যাপকের শৌচালয় ব্যবহার আটকে দেওয়া হয়েছিল। স্বামী পুত্র-সংসারের দিকে তাকিয়ে কর্মস্থলে এমন চূড়ান্ত অপমান মুখ বুজে মানতে বাধ্য হয়েছিলেন ওই চিকিৎসক। এখানেও সেই সিন্ডিকেট রাজ বলে অভিযোগ উঠেছে। ২১ চিকিৎসক বদলির ক্ষেত্রে যদি অভিযোগ সুশান্ত রায়ের দিকে, তবে কর্মস্থলে এমন নজিরবিহীন বেয়াড়া কাণ্ডের নেপথ্যে উত্তরবঙ্গ লবির আরেক ‘ইয়েসম্যান’ ডাঃ দেবাশিস সোম। গোলগাল চেহারা। সন্দীপ ঘোষের ঠিক পাশের ঘরে বসতেন। সন্দীপের সিবিআই হেফাজতের পরেই তুমুল অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। পাড়ায় পরম হিতৈষী, কিন্তু আর জি করে সন্দীপের সঙ্গে থাকলেই অন্য চেহারা।

Advertisement

আর জি কর এবং সিন্ডিকেট রাজ যেন সমার্থক হয়ে গিয়েছিল। ২০২২ সালে সন্দীপ ঘোষকে মুর্শিদাবাদ বদলি করা হয়েছিল। সরকারি নির্দেশকে মান্যতা দিতে কলকাতা ছেড়ে যেতে হয়েছিল। দুবছর পর প্রশ্ন উঠেছে, গাড়ি করে সন্দীপ কলকাতা ছাড়েন, সেটি আরেক ‘বিতর্কিত’ ডাক্তার-বিধায়ক সুদীপ্ত রায়ের। আইএমএ রাজ্য কমিটির এক সদস্যের কথায়, “কেউ কারও গাড়ি ব্যবহার করতেই পারে। কিন্তু এমন ছোট ছোট ঘটনাকে পরপর সাজালে বোঝা যায় সুশান্ত রায়-সন্দীপের সঙ্গে কারা যোগ্য সঙ্গত করত।” মোদ্দা কথা, স্বাস্থ্যে সিন্ডিকেট থাবার ভয়ে সিঁটিয়ে থাকতে হত অধ্যাপক থেকে সদ্য ভর্তি হওয়া গ্র্যাজুয়েট পড়ুয়াও। বাদ যায়নি স্বাস্থ্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ও। অভিযোগ, সিন্ডিকেট রাজ এতটাই প্ৰভাবশালী যে শুধুমাত্র গ্র্যাজুয়েট হয়েও ডাঃ অভীক দে-কে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ফাইনাল পরীক্ষায় গার্ড দিতে নিয়োগ করা হতে পারে। একই সময়ে তৎকালীন উপাচার্য ডাঃ সুহৃতা পালকেও দেখা যেতে পারে। যদিও এই ঘটনার মধ্যে বিরোধী গোষ্ঠীর চক্রান্ত দেখতে পেয়েছেন সুহৃতা পাল। তাঁর দাবি, পরীক্ষার হলে গার্ড নিয়োগ করে কন্ট্রোলার অফ এক্সামিনেশন। উপাচার্যর কোনও ভূমিকাই নেই। কিন্তু স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য শিক্ষা দপ্তর নবান্নের নির্দেশে সব অভিযোগ খতিয়ে দেখবে।

কিন্তু এত অভিযোগের মধ্যে আইএমএ কেন্দ্রীয় দপ্তরের একটা চিঠি সুশান্ত রায়কে বাড়তি অক্সিজেন দিয়েছে। আর জি কর কাণ্ডের প্রেক্ষিতে রাজ্য কমিটি থেকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল তাঁকে। এই ঘটনার বিরুদ্ধে আই এমএ কেন্দ্রীয় কমিটিকে লিখিত অভিযোগ করেন সুশান্তবাবু। সেই অভিযোগকে মান্যতা দিয়েছেন সংগঠনের সভাপতি ডাঃ আর ভি অশোকান।

২০২৪ এর পূজা সংক্রান্ত সমস্ত খবর জানতে চোখ রাখুন আমাদের দেবীপক্ষ -এর পাতায়।

চোখ রাখুন
Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement